পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরোগ্য-স্নান সে আমাদের সঙ্গে একই ইস্কুলের একই ক্লাশে পড়িত —তার নাম ছিল রামতন্ত্র। কিন্তু ছেলের নামটির পূৰ্ব্বে ছোট একটি উপসর্গ জুড়িয়া দেওয়াতে তাহা হইয়া দাড়াইয়াছিল—আরামতনু । এই নূতন নামকরণে কোন পক্ষের যে দোষ তাহা লইয়া বাদানুবাদ করিবার পূৰ্ব্বে ইহার ইতিহাসটুকু শুনিলে বিচারে সাবধান হওয়া পারে । আমাদের ইস্কুলটিতে এত বিভিন্ন-প্রকারের ছেলে আছে যে হঠাৎ ইহার উপম মেলে না। এই অসংথ্যপ্রকার বিভিন্নতার মধ্যেও রামতন্থ স্বীয় ব্যক্তিত্বটিকে পৰ্ব্ব হইতে দেয় নাই । দারুণ গ্রীষ্মের দুপুর বেলায় যখন সকলে গায়ের কৃত্রিম আবরণ খুলিয়া ফেলিয়া চামড়াখানি পৰ্য্যস্ত খুলিবার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তপন সে তার ঘাড়ের-কাছেতেলে-মলিন হাতের-কাছে-স্বত-বাহির-কর প্রাচীন আলপাকার কোট্ট গায়ে দিয়া গম্ভীরভাবে বসিয়া ইংরেজী গ্রামার পড়িত ! যদি জিজ্ঞাস কর এই ব্যবঙ্গারের অর্থ কি—তবে প্রবীণ বৈজ্ঞানিকের মত সে পেন্সিলটি নাড়িয়া উত্তর দিবে যে বাহিরের তাপ্লের সহিত শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপের সমত রক্ষা না করিয়া চলিলে উৎকট ব্যাধি-বিশেষ জন্মাইবার আঁশঙ্ক আছে। তাহার শুইলার ঘরে গেলে দেখা যায় ছোট বড় মাঝারি লীল নীল কালে স্বদেশী বিদেশী মান-রকমের ঔষধের শিশি সাজানে, সেটি একটি ছোটোখাটো ঔষুধালয় বলিলেও জতুক্তি হইবে না। হোমিওপ্যাথিক ঔসধ খাইতে কেই তাহাকে দেগে নাই—কারণ তাহার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে হোমিওপ্যাধিক ঔষধ খুন-পরিমাণে অল্প এবং স্বাদে বিকৃত নয় তখন উহা ঔষধের মধ্যে গণ্য হইতেই পারে ম! । যে হেতু যে ঔষধ পরিমাণে যত বেশী এবং আস্বাদনে যুত বিরুত, রোগের পক্ষে ভাঙ্গ| ততই অধিক বজ-স্বরূপ । রাত্রিবেলা"তাহাকে স্মেলিং সন্টের শিশিটি লঙ্গয় বারেবারে স্বাণ গ্রহণ করিতে দেখা যায়। 'শুইবার সময় তিন যাইতে . চারিটি ঔষধের শিশি তাহদের উৎকট গন্ধ লইয়া তাহার নিজ পাহারা দিয়া দাড়াইয়া থাকে। কারণে এবং অকরণে ঔষধ পূইতে কেহ তাহার এতটুকু আপত্তি কখনো দেখে নাই । যখন সে প্রথমে ইস্কুলে আসিয়াছিল তখন তাহার কণ্ঠদেশে ৪ বাহুতে একরাশি ছোট বড় মাদুলি ছিল ; বিশেষতঃ কণ্ঠেরটিকে ছোটাে-খাটাে একটি ঢোলক বলিলেওঁ বেমানান হয় না। ইস্কুলের ছেলেদের বচনকে, সে বেশি ভয় করিত না—কিন্তু পাছে তাহার এই অক্ষয়কবচগুলি অপহরণ করে এই ভয়ে সমস্ত মাদুলিগুলি বস্ত্রান্তরালে তাহার কোমর-দেশে একটি মেখলার স্বষ্টি করিয়াছিল। শীতের শেষে দক্ষিণের বাতাস দিতেই যেমন পৃথিবী রং বেরঙের ফুলে ভরিয়া যায়—তেমনি যেমন একটু শীতের হাওয়া দিয়াছে অম্নি রামতন্তর বাক্সের ভিতর ইষ্টতে লাল নীল ফ্লানেলের টুকর বাহির হইয় তাহার শরীরের নানাস্থান অধিকার করিয়া বসে। জ্যোংস্নারাত্রিতে যগন আর-সকলে বাঙ্গিরে গল্প গুজব গান বাঞ্জ না করিতেছে, তখন রামত মাথায় কাপড় জড়াইয়া খড়ম পায়ে দিয়া পড়িতে, বসে। জানলাট ভালো করিয়া ভেচ্ছাটয় দেয়—আর মশা মারিতে গিয়া গালের উপরে সজোরে চপেটাঘাত করে। মোট কথা, এ জগতে যত ঠাও মশা মাছি ধূলা আবর্জন, সকলেরই যেন একমাত্র লক্ষ্য দীন-ঙ্গীন রামততু । Esh g ( 3 ) e এত সাবধান থাকিতেও রামতনুর আজ দুইদিন হইল জর হইয়াছে। ডাক্তার দিনের মধ্যে চারবার আসে। পাটের উপর অগাধ লেপের তলায় রামতন্ত–একপাশে তাঙ্গর মুখখান দেখা যায় ক্লানেল- ও কাপড়-জড়ানো। অন্ধকার রুত্রে যেমন ষ্টেশনের দুষ্ট পাশে তাকাইলে সিগনালের লাল নীল আলো দেখা যায়—তাঙ্গর থাটের চারিপাশে সেইরকম লাল নীল নান-রকমের ঔষপের শিশি রোগকে বিভীষিকা দেখাইতে চেষ্টা করিতেছে। ૨ 6 ”