পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(*>रे আমার উদ্দেশ্য নহে । আমি কেবল সকলকে মনে-মনে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া নিজেই মনে-মনে তাহার উত্তর দিতে অনুরোধ করিতেছি, যে, বাংলাদেশে নিধর্ম পিতার পক্ষে দেশভ্রমণকালে প্রাপ্তবয়স্ক অনূঢ় কণ্ঠীকে ছেলে সাজাইয়া সঙ্গে রাখিবার প্রয়োজন কেন হইল ? পাশ্চাত্য দেশসকলের কথা তুলিতে চাই না, কারণ আমাদের দেশে এখনও এই মতই প্রবল যে, পাশ্চাত্য সমাজ বড় খারাপ এবং আমাদের সমাজ বড় ভাল। কিন্তু ভারতবর্ষেরই কোন কোন প্রদেশের কথা ভাবিতে বলি যেখানে বাংলা বিহার অগ্র অযোধ্যা অপেক্ষ নারীদের বেশী স্বাধীনতা আছে। মহারাষ্ট্রে কোন নিধন পিতার কস্তাকে ছেলে সাজাইবার প্রয়োজন নিশ্চয়ই হইত না, কারণ সেখানে অবগুণ্ঠনমুক্ত কোন তরণী, প্রৌঢ় বা বৃদ্ধাকে বাড়ীর বাহিরে দেখিলে তাহার সম্বাস্তত- বা ভদ্রতা-সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন মনে আসে না ; তথায় অতি সন্ত্রান্ত মহিলারাও পুরুষ-সঙ্গী ব্যতিরেকেও রাস্তা-ঘাটে বেড়াইয়া থাকেন। বাড়ীর বাহিরে জাগিলে বাংলাদেশের মত পুরুষদের কাপুরুষোচিত বিষদিগ্ধ দৃষ্টি মহারাষ্ট্র মহিলাকে সঙ্গ করিতে इग्न न । বস্তুতঃ, কোন দেশ কতটা সভ্য, তথাকার নারীর অবস্থা দ্বারা তাহ। মাপ যাইতে পারে। সে-দেশে নারীর জ্ঞানে কত উন্নত, উহাদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার, দায়াধিকার, কিরূপ-- এ-সকল বিষয়ে তথ্যনির্ণয় করা অবিখ্যক বটে ; কিন্তু আমি এখন সে-সব কথা তুলিতেছি না। আমি এখন কেবল ইহাই বলিতেছি, যে, যে-দেশে নারী যেরূপ নিরাপদ, নিরদ্বেগ, নিঃশঙ্ক জীবন যাপন করিতে পারেন সেই দেশ সভ্যতায় তত অগ্রসর । অবষ্ঠ পুর্ণ সভ্য এখনও কোনও দেশ হয় নাই। ইউরোপের জাতিরা আপনাদিগকে সভ্যতম বলিয়া দাবী করিয়া থাকেন ; কিন্তু সেই মহাদেশেও যখনই জাতিতে জাতিতে বিরোধ হইয়া যুদ্ধ হইয়াছে, তখনই আক্রান্ত বা পরাজিত দেশের নিরপরাধ রমণীদের উপর পৈশাচিক অত্যাচার হইয়াছে। গত মহাযুদ্ধে, পোল্যাণ্ড প্রভৃতি দেশে লক্ষ লক্ষ নারী এইপ্রকারে অত্যাচারিত হইয়াছিলেন । এই কলঙ্ক হইতে কোন দেশ কোন জাতি সম্পূর্ণ মুক্ত নহে। মহারাষ্ট্রের ইহ একটি গৌরবের বিষয়, যে, শিবাজীর এবিষয়ে কঠোর আজ্ঞ ছিল এবং এবিষয়ে তাহার নিজের স্মাচরণ অাদর্শস্থানীয় ছিল। অধ্যাপক যন্ত্রনাথ সরকার তৎকৃত শিবাজী-চরিতে লিখিয়াছেন, “IIis chivalry to women and strict enforcement of morality in his eanup was a wonder in that age and hits extorted the admiration of hostile critics like Khafi Kluan.” আধুনিক কালে ভারতবর্ষের মধ্যে বহু বৎসর যুদ্ধ হয় নাই। মোপল বিদ্রোহকে শেষ যুদ্ধ বলা যাইতে পারে। ইহাতেও স্ত্রীলোকদের উপর অত্যাচার হইয়াছিল। কিন্তু যুদ্ধ না হইলেও দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও ডাকাইতি এ-দেশে এখনও হইরা থাকে, এবং তাঁহাতে স্ত্রীলোকদিগকে অত্যাচার ও লাঞ্ছনা খুবই সহ করিতে হয়। অত্যাচার হইতে রক্ষা করা পুলিশের কাজ. কিন্তু কখন কখন তাহারাই অত্যাচারী হইয়া থাকে । বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষ লজ্জা ও দুঃখের কথা এই যে, এখানে গৃহস্থের বাড়ীর মধ্য হইতে, রাত্রে, সন্ধ্যায় এমন কি দিনে-দুপুরে, কথন কখন স্বামী পিতা ভ্রাতার সম্মুখ হইতে নারী অপহৃত হন। নারীদের এইরূপ দুৰ্গতি যে-দেশে ও যেখানে হয়, তথাকার কতকগুলা লোক দুৰ্ব্বত্ত ও পশুপ্রকৃতি এবং অঙ্ক কতকগুলী লোক দুৰ্ব্বল ও কাপুরুষ । - প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড বস্তুতঃ নারীদিগকে প্রায় সব সময় বা বেশীর ভাগ সময় অন্তঃপুয়ে রাখিবার সপক্ষে যে যুক্তি দেখান হয়, যে, নতুবা তাহদের মান ইজ্জৎ সন্ত্রম থাকিবে না, সেই যুক্তির মধ্যেই ইহা উহ রহিয়াছে, যে, দেশের বহুসংখ্যক লোক এরূপ জঘন্ত প্রকৃতির যে তাহার সুযোগ পাইলেই স্ত্রীলোকদিগের অনিষ্ট করিবে, এবং যাহার অনিষ্ট করিবে না তাহারা এরূপ বলহীন ভীরু ও কাপুরুষ, যে, তাহদের দ্বার নারীর রক্ষার আশা নাই। সুতরাং অবরোধ-প্রথা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেছে । সমুদয় পৃথিবীতে নরমাংস ভোজনের বিরুদ্ধে যেমন একটি স্বপ্রতিষ্ঠিত সংস্কার ও লোকমত জন্মিয়ছে, নারীর উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তেমনি একটি প্রবল সংস্কার ও লোকমত বদ্ধমূল হইলে বুঝিব, যে, পৃথিবীর লোক সভ্য হইয়াছে। বাংলাদেশের দুৰ্গতি দূর করিতে হইলে, প্রন্থোক সমর্থ পুরুষকে নারীর মানসন্ত্রম রক্ষাব জঙ্ক প্রাণপণ করিতে হইলে ; এবং র্যাঙ্গীরা অবিবাষ্ঠিত, এইরূপ প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হুইলার মত সাহস ও বল তাহদের না থাকিলে তাহাদিগকে আমরণ অবিবাহিত থাকিতে হইবে । (নব্য ভারত, বৈশাখ, ১৩৩১) শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায় রামায়ণী কথার প্রচার প্রাচীন গ্রন্থাদির মধ্যে রামায়ণ-কথার উল্লেথ বt প্রচার প্রথম মহাভারতে দেখিতে পাওয়া যায়। মহাভারতের বন-পর্বে ২৭৩ হইতে ২৯• অধায় পর্যন্ত—এই চোঁদটি অধ্যায়ে রামায়ণের বিবরণ বিবৃত হইয়াছে । মহাভারতে রামায়ণ কথাকে পুরাণ-ইতিহাস বলিয়াই স্বীকার করা হইয়াছে ৷ যথা— “শৃণু রছন যথাৰ্বত্তমিতিহাস পুরাতনমূ" । ৩২৭৩৬ মহাভারতকার এঈ প্রাচীন গীত যে প্রাচীন কবি বাল্মীকির রচিত তাইtয়ও উল্লেখ দেীণ-পলে করিয়াছেন । “অপিচায়ং পুরা গীতঃ শ্লোকে বাল্মীকিনা ভুবি।” যোগবশিষ্ঠ রামায়ণে বশিষ্ঠ ঋধি রামকে অtষ্মজ্ঞান-বিষয়ক তত্ত্ব উপদেশ করিয়াছেন ৷ ইষ্ঠ। বৈরাগ্য প্রকরণ, মুমুক্ষু-ব্যবহার প্রকরণ, নিৰ্ব্বাণ প্রকরণ-প্রভৃতি ছয়টি প্রকরণে বিভক্ত। ধৰ্ম্ম-উপদেশ-চলে বহু উপাথ্যানও এই পুস্তকে বিবৃত হইয়াছে ; এই সঙ্গে ঈশ্ব কু-মমু সংবাদও প্রদত্ত হইয়ছে। প্রকৃত প্রস্তালে এই গ্রন্থগান রামায়ণ নহে ; রাম-সম্পর্কিত ধৰ্ম্ম দর্শন গ্রন্থ । ইহায় রচনা-কালও মূল রামায়ণের অনেক পরবত্তী । বৌদ্ধ-ধৰ্ম্মের অনেক গ্রন্থে রামায়ণ কথার স্বাভাস আছে ; তন্মধ্যে “লঙ্কাবতীর সুত্র,” “দশরথ জাতক.” “মহাবিভাসা" প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । লঙ্কাবতীর স্বত্রে রামের কোন কথা নাই। না থাকিলেও রামের সমসাময়িক বীর লঙ্কাধিপতি রাবণের কথা আছে । লঙ্কাবতার সূত্রে রাবণকে বুদ্ধদেবের সমসাময়িক বলিয়া লিখিত হইয়াছে এবং তিনি বে বুদ্ধদেবের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহার বিবরণ লিখিত হইয়াছে । স্বগীয় রায় শরচ্চন্দ্ৰ দাস বাহাদুরের একটি প্রবন্ধ হইতে লঙ্কাবতীয় স্বত্রের বিবরণ গৃহীত হইল । একসময়ে ভগবান বুদ্ধ লঙ্কানগরীর সমুদ্রতীরবত্ত মলয়-শিখরে বিহার করিতেছিলেন ; লঙ্কাধিপ রাবণ ভগবানের আগমন-বাৰ্ত্ত শ্রবণ করিয়া অত্যন্ত আহলাদের সহিত তাহাকে লঙ্কার অভ্যস্তরে লইয়া যাইতে আসিলেন।