পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ño o স্বষ্টি রহস্তটাকে যদি এক শ’ ভাগে ভাগ করা যায়, তবে তার নিরানব্বই ভাগের ব্যাপাবগুলো সমস্ত বাজে বা সময় কাটাবার কতকগুলো ফন্দিমাত্র, আর ঐ বাকি এক ভাগই হচ্ছে আসল, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বপ্রকৃতির যা মতলব ; আর এই মতলব হচ্ছে দুটি চিত্তের মিলন—দুইটি তেমন চিত্তের মিলন ধাকে আশ্রয় করে আবার একটি নবীন চিত্ত গড়ে উঠতে পারে। বিশ্বপ্রকৃতির এই যে মতলব এইটেই তার কেন্দ্রগত মতলব—আর এই মতলবের কাছেই যুগযুগান্তর হতে পুরুষনারী আনন্দের সঙ্গে আপনাদের আহুতি দিচ্ছে । মানব-জীবনে এই-ই হচ্ছে একমাত্র যজ্ঞ। মানুষের জন্ম থেকে যৌবন পৰ্য্যশ যা-কিছু সে-সবই হচ্ছে এই যজ্ঞেরই স্বস্তিবাচন, আর যৌবন থেকে মৃত্যু পৰ্য্যস্ত যা-কিছু তা হচ্ছে এই যজ্ঞেরই বিসর্জন-মন্ত্র। পাণ্ডবেরা খুবই বড বটে, কিন্তু সমস্ত ব্যাপারটা চলছে পাঞ্চালীকে ঘিরে । কিন্তু সে যা হোক উপরে যে, একটু গভীর দার্শনিক বা জীবতত্ত্বের বা স্বষ্টিতত্ত্বের গবেষণা কব গেল তা সত্যই হোক বা মিথ্যাই হোক এ-কথা -খাটি সত্য যে আমার অন্তরে রং ধরেছিল । সারা বছরের তৃণলেশ-শুন্য ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষাবারি-ম্পর্শে যেমন করে নয়নাভিরাম রং ধরে, কদলীবৃক্ষে -পূর্ণাঙ্গ ও স্বপুষ্ট কদলী-গাত্রে রৌদ্ররশ্মিতাপে যেমন করে জিহা-জল-সঞ্চারক রং ধরে তেমনি করে’ ধীৰে ধীরে আমার অন্তরে রং ধরেছিল। তবে এ-রং হরিতও নয়, হরিদ্রাও নয়—এ-রং ছিল গোলাপী । সেই সঙ্গে-সঙ্গে টের পেয়েছিলুম যে, এই গোলাপী রঙের একটা মাদকতা আছে, যা আর-যে-কোন মাদকতার চাইতে বেশী মোহন, বেশী মধুর-মত্ততা --আনে । আসলে জীবন ভরে মানুষের একটা কোন নেশা চাই-ই চাই—তা এ নেশা কোন স্বরারই হোকৃ ব: কোন স্বরেরই হোকৃ—আধিভৌতিকই হোক বা আধ্যাত্মিকই হোক । কেউ বা বাইরের স্বরার নেশায় “অন্তর রঙিয়ে তুলছে, আর কেউ বা অস্তরের স্বরের প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড নেশায় বাহির রঙিয়ে তুলছে। জ্ঞানের নেশ, কৰ্ম্মের নেশা, ধৰ্ম্মের নেশা, দেশোদ্ধারের নেশা, পরহিতের নেশা, যে-কোন একটা নেশাকে ধরে মানুষ তার ধমনীতে ধমনীতে শোণিত প্রবাহকে চাঙ্গা করে’ রাখবার প্রয়াস পাচ্ছে। আর এইসব নেশার মধ্যে সবার চাইতে নিবিড় নেশা, সবার চাইতে বিশ্ববিজয়ী নেশা হচ্ছে প্রেমের নেশা । হঠাৎ কেন যে, একদিন প্রথম শরংপ্রভাতের মিষ্টি আমেজটুকু একটা নবীন অতৃপ্তির বেশ দিয়ে ছেয়ে যায়, হঠাৎ কেন যে, এক দিন বসন্ত-সন্ধ্যার স্বখের আভাসটুকু একটা নতুন আগ্রহের অপেক্ষা দিয়ে ভরে? stж, হেমন্ত-গোধূলির করুণ স্বরে স্বরে কেন যে, ধর|-যায়-না, ছোয়া-যায়-না এমন একটা আশার ঝঙ্কারের রেশ বাজ তে থাকে, তার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না–কিন্তু তার অর্থ বুঝতে বিশেষ দেরী হয় ন। এর অর্থ হচ্ছে এই, যে, যৌবনের শঙ্খ বেজেছে, প্রেমের দেবতা ধীরে ধীরে চক্ষু উন্মীলন করছেন। এখন গুরে আত্মভোল৷ পথ কবৃ, পথ কর। এখন আর কিছু চলবে না। কৰ্ম্মের কঠোরতা, রাজনীতির কচ কচি, পরহিতের সেবাব্রত, দেনাপাওনার হিসাবনিকাশ, চিত্তদুয়ার থেকে সমস্তকে সরিয়ে ফেল। এখন শুধুই ফুলের মেল। সুরের খেলা । আজ যে অলক্ষ্যে আর একটা চিত্ত তোমার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে আসছে। সে-চিত্তকে অভিলষিত করবার জন্ত অবহিত হও । তারই আভাস যে শরৎ প্রভাতের মিষ্টতায় হেমন্তগোধূলির কারুণ্যে বসন্ত-সন্ধ্যার স্বর্থ-হিল্লোলে তোমার কাছে ধরা পড়েছে। এখন ওরে আত্মভোলা পৃথ করু, পথ কর । সম্রাটু তার সাম্রাজ্যে অদ্বিতীয়রূপে সিংহাসন গ্রহণ করবেন । মামুষের জীবনে এইটে সবার চাইতে বড় কথা কি না জানিনে, কিন্তু এটা সবার চাইতে নিবিড় কথা, সবার চাইতে মধুর কথা, সে সম্বন্ধে কোনই ভুল নেই। হাজার কৰ্ম্ম-কোলাহলের মাঝে এ-যেন একমাত্র সঙ্গীত যা আমাদের কানে লাগে, হাজার স্পষ্টতার মাঝে এ-যেন একমাত্র স্বপ্নলোক যা আমাদের চোখে