পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬০২ না। মানস-লোকের সৌন্দর্ঘ্যের দাবীর আমরা একচুলও ছাড়িনে, কল্পনা-দেবীও আমাদের সে-দাবীর ষোলকলা পূর্ণ করে দিতে কোন কার্পণ্যই করেন না। এমনি করে প্রায় আড়াই বছর কেটে গেল । “উৎসব ও উপাসনা”র পৃষ্ঠায় প্রতিমাসে আমার প্রবন্ধ ও মুকুলিকা দেবীর কবিতার সঙ্গে-সঙ্গে আমার মনের উৎসব ও উপাসনার ভিতর দিয়ে আমার অস্তরে একটা কল্পলোক গড়ে উঠেছিল। এই কল্পলোক-সম্বন্ধে আমার সবার চাইতে আরামের ব্যাপার ছিল, এইটে যে, বাস্তবজগতের স্পষ্টতার স্পর্শ একে কোন দিনই ক্ষুণ্ণ বা খিন্ন করতে পারবে না। কিন্তু মানুষের মনস্তত্ব বোধ হয় একটা জটিল ব্যাপার। সহসা একদিন সম্পাদককে জিজ্ঞাসা করলুম—“মুকুলিকা দেবীটি কে জানেন ?” সম্পাদক উত্তর কবৃলেন—“ত কি করে জানব বলুন।” “ইনি এই বিশাল মহীর কোন অংশ অলঙ্কত করে’ বিরাজ করছেন তাও জানেন না ?” “ন, সেটা আমার অজ্ঞাত নয় ।” সম্পাদক তার দেরাজ খুলে একখানি ছোট্ট চিঠি বের করলেন। সেই চিঠিখানি খুলে তার চোখের সামনে রেখে বললেন—“এর হাল সাকিম হচ্ছে বেলতলা রোড়, 'অঞ্জ-নিবাস’ ভবানীপুর, কলিকাতা।” আমি জিজ্ঞাসা করুলুম—“আচ্ছ, বলুন ত গত দুবছর আড়াই-বছর ধরে প্রতিমাসে ঠিক আমারই প্রবন্ধের পরে মুকুলিকা দেবীর কবিতার স্থান দান করেন কেন ? সম্পাদক আশ্চৰ্য্য হলেন—বললেন—“তাই নাকি ?” র্তার টেবিলের উপর কয়েক মাসের পত্রিকা পড়ে’ ছিল। আমি প্রতিসংখ্যা খুলে তাকে দেখিয়ে দিলুম– প্রতিমাসে আমার প্রবন্ধ প্রথমেই থাক্ বা শেষেই থাক্ বা মাঝেই থাক, মুকুলিকা দেবীর কবিতা ঠিক তার পরে-পরে ছাপা । সম্পাদক বললেন—“বাঃ! এটা ত আমি কোন দিন খেয়াল করিনি।” তার চোখ-দুটোতে একটা কৌতুকের প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড হাসি ফুটে উঠল—বললেন—“বোধ হয় কোন অদৃশুলোকের সূক্ষ্মজীব আমাকে দিয়ে এটা করিয়ে নিয়েছে।” “সে-সব বিশ্বাস করেন নাকি ?” “কি-সব ?” “ এই যে অদৃশুলোকে জীবরা মামুষের জীবন নিয়ে খেলা করে ।” সম্পাদক আমার মুখের দিকে একটু বিশেষ করে তাকিয়ে দেখলেন—তার পর মৃদু হেসে বললেন— “আপনি প্রশ্নটা যখন এমন গম্ভীর করে জিজ্ঞেস করছেন তখন ঠিক বলতে পারিনে যে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করিনে ৷” সম্পাদকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লুম। কিন্তু সেদিন থেকে এটা টের পেতে বেশী দেরী লাগল না, যে আমার অন্তর-লোকের স্বরগ্রামে একটা বেস্বরে স্বর জেগে উঠেছে। একটা নিশ্চিত অনির্দেশ্যকে ঘিরে যাদুকর আপন খেয়াল, আপন রুচি-অমুসারে একটা নিখুঁত সঙ্গীত রচনা করেছিল, একটা কল্পনালোকের আলেখ্য রচনা করেছিল, সেইটে যেন অনিশ্চিত একটা স্পষ্টতার স্পশে কিরকম-একরকম গুলিয়ে দিয়ে গেল । এতদিন আমি মনে কর্তুম, যে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মুকুলিকা দেবী বলে’ একজন কেউ আছেন তা সে রাওয়ালপিণ্ডিতেই হোক বা রেজুনেই হোক, গন্ধৰ্ব্বলোকেই হোকৃ বা মঙ্গল গ্রহেই হোকৃ—এই অনির্দেগুতাই মুকুলিক। দেবীকে আমার চিস্তার অতিরিক্ত করে রেখেছিল, তাই প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ফুে-একটি কবি-চিত্ত আছে যে-একটি আর্টিষ্টের আত্মা আছে, আমার মধ্যেকার সেই কবি-চিত্তটি সেই আর্টিষ্টের আত্মা, তার একটা সহজ নাগাল পেয়েছিল। কিন্তু যখন শুনলুম যে মুকুলিকাদেবীর আবাস-স্থল এই কলিকাতার ভবানীপুরে বেলতলা রোডে, তখন কল্পলোকের হাজার স্বর দিয়েও আর তাকে ছোয় গেল না—বাস্তবতা কঠিন স্বর্গে সমস্ত স্বর যেন ছিন্নবিছিন্ন হ’য়ে কঠোর কৰ্ম্মকোলাহলের মাঝে ঝরে পড়তে লাগল। সেই দিন আমি এই একটা জিনিস লক্ষ্য করুলুম