পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やQb" జి. প্রশ্ন না করিলেও তাগর মনের ভাব যথাকুরূপ উপলব্ধি করিয়া বিমানবিহারী মনে-মনে ঈষং অপ্রতিভ হটল এবং তদ্বিময়ে আর কোন ও প্রশ্ন না করিয়া বলিল, “মাকে গিয়ে বলে যে, বিমানবিহারী দেখা করতে এসেছে ।” অবিলম্বে আহূত হইয়া বিমান-বিহারী অন্তঃপুরে উপস্থিত ইন। তারাহুলী তাগর অপেক্ষা সমস্ত মুখে দাড় ই । চিলেন, বিমানবিহারী তাড়াতাড়ি নিকটে গিয়া নত হইয়া প্ৰণাম করিল। আশীৰ্ব্বাদ করিয়া তারাসুন্দরী বলিলেন, “আমি মনে করেছিলাম গে, আমার এ-ছেলেট একেবারে আমার গঙ্গা-যাত্রার দিন গাম্চা কঁধে কবে এসে দাড়বে ; তার আগে যে তুমি আসবে সে আশা ক্রমশ: ছেড়ে দিয়েছিলাম।” বলিয়া হাসিতে লাগিলেন। বিমানবিহারী অপ্রভিক্ষ হইয়া বলিল, “আমি কিন্তু মা, তার পর অনেকবার এ-বাড়ীতে এসেছি ; তবে আপনার সঙ্গে দেগা করা হয়নি।” তারাসুন্দৰী স্মিতমুখে বলিলেন, “তা আমি জানি। স্বরেশের কাছে তোমার খবর আমি সৰ্ব্বদাই পেতাম।” তrঙ্গর পর বিমানবিহারীকে বসাইয়া তারাহন্দরী একে-একে তাঙ্গর গুপ্তেব সংবাদ লষ্টতে লাগিলেন । স্বতেশ্বরের জেলের প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিবার জন্য বিমানবিগী ব্যগ্ৰ ইষ্টয়া ছিল, কিন্তু কি-ভাবে কথাটা আরম্ভ কfরবে, তাড়া ঠিক করিতে পারিতেছিল না । ংক্ষেপে তাঁরাহন্দীর প্রশ্নসমূহের উত্তর দিয়া সে সে-কথা তুলিল একট ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, “কাল থবরের কাগজে গুরেশ্বকের খবর পেয়ে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছি।” কথাটা একটু বেখাপ্পা মত শুনাইল, উপস্থিত আর-কিছু না বলিয়া বিমানবিহারী খামিয়া গেল । r - একটু চিন্তা করিয়া তারান্বন্দরী বলিলেন, “আসলে কিন্তু এতে দুঃখিত হবার বিশেষ কিছু নেই। যে যেবিষয়ের কারবার করবে তার বোঝা তাকে বহন কবৃতেই হবে। তা ছাড়া, জেলের কষ্টর চেয়ে জেলের বাইরের কষ্ট যে কম মনে করে না তার তুমি কি করবে - . প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ; ১ম খণ্ড বঁলে? আমি বেশ করে ভেবে দেখেছি বিমান ক্ষৰিত হবার কারণ কোণে দিক থেকেই কিছু নেই। আমার ছেলে জেলে না গিয়ে শ্বশুরবাড়ী গেলে আমার পক্ষে খুবই ভাল হয়। কিন্তু সেইরকমে সকলেরই ছেলে যদি শ্বশুরবাড়ী যায়, তা হ’লে দেশ কোথায় যায় বলে ? দেশের ত আর শ্বশুরবাড়ী নেই!” বলিয়। তারা-স্বন্দরী হাসিয়া উঠিলেন । - তারাসুন্দরীর কথা শুনিয়া বিস্ময়ে ও পুলকে বিমানবিহারী ক্ষণকাল নিৰ্ব্বাক্ হইছা চাহিয়া রহিল । বঙ্গদেশের একজন পুরাতন যুগের স্ত্রীলোক, র্যাহার একমাত্র পুত্র কারাগারে অবরুদ্ধ, এমন করিয়া যে ভাবিতে এবং বলিতে পারেন, তাহা এপর্যন্ত তাহার অভিজ্ঞতার বহিভূত ছিল। সে হৰ্ষোংফুল্প-নেত্রে বলিল, “আপনি যা’ বলছেন তা হাজার বার সত্য, কিন্তু ক’জন মা আপনার মতন ভাবতে পারেন ?” শিল্পশ্চালনা করিয়া তারামুন্দরী বলিলেন, “ন, না, তা বোলো না বাব! আ ম আর কি এমন ভাৰুছি ? আমি ত ভাবছি, যে, এক বৎসর পরে আমার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসব। কিন্তু কিছুকাল আগে আমাদের দেশে যারা নিজের হাতে স্বামী পুলকে যুদ্ধের সাজে সাজিয়ে দিত, তারা কতখানি ভাবত ভেবে দেখ দেখি ! সেই দেশেই আমরা বাস করছি, কিন্তু সে-সব যেন । মনে হয় কোন আরব্য উপন্যাসের কথা !” বিমুগ্ধচিত্তে বিমানবিহারী বলিল, “সত্যি !" অদূরে মাধবীকে দেখা গেল। তারা সুন্দরী ডাক দিয়া বলিলেন, “মাধবী, বিমান এসেছেন।” মাধবী নিকটে আসিয়া বিমানবিহারীকে নমস্কার করিল। প্রতি-নমস্কার করিয়া বিমান সন্ধান্তমুখে বলিল, “মা’র মুখ থেকে দেশ-দেবার মন্ত্র শুনছি। দেখুন, আবার দ্বিতীয় রত্নাকর দ্বিতীয় বাল্মীকি না হ’য়ে ওঠে !” মাধবী স্মিতমুখে বলিল, “উঃ ! সে যে বাট হাজার বংসর লাগবে । তার চেয়ে এমন কোনো উদাহরণ নেই যাতে এক দণ্ডে কার্য্যোদ্ধার হয় ?” বলিয়া মাধবী হাসিতে লাগিল ।