৬ষ্ঠ সংখ্যা ] বুদ্ধি, তিনটা ভুল না করিয়া সে এক লাইন ইংরেজী লিখিতে পারে না। কতদিন সন্দেশ কলা ও আচারের লোভ দেখাইয়া সে হিমানীর কাছে পড়া বলিয়া লইয়াছে, তা না হইলে সরোজিনীদির ক্লাসে রোজ তাহাকে বোর্ডের পাশে দাড়াইয়া থাকিতে হইত। সে কাল হইতে রোজ নিশ্চয় স্কুলে যাইবে, বাসন মাজিতে তাহার একটুও ভাল লাগে না, সেকি কি হইবে নাকি ? তাহার লেখাপড়া শিখিতে হইবে না ? সাবিত্রী মহা ভাবনায় পড়িলেন। র্তাহার দাদাটিকে কোনো বিষয়ে সচেতন করা একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার । আর সচেতন করিয়াই বা হইবে কি ? মেয়েকে স্কুলে পড়াইতে হইলে টাকার দরকার, কিন্তু টাকা সংগ্রহ করার বিদ্যা অক্ষয়কুমারের একেবারেই জানা নাই । হিমানী নিজেই তাহীকে অনেকটা নিশ্চিন্তু করিল। তাহার বাব; আপিস হইতে ফিরিবণমাত্র সে একটি ছোটখাটাে ঝড়ের মত তাহার উপর আছড়াইয়া পড়িয়া বলিয়া উঠিল, “আমি কি শিবির মত ঝি হব, যে তুমি আমাকে আর স্কুলে দিচ্ছ না ? খোকা ত রোজ স্কুলে যায় ।” তাও ত বটে। ভাবনার আতিশধ্যে অক্ষয়কুমার ঘরে हूँक्रिख्हे ভুলিয়া গেলেন। অনেক ডাকাডাকি করিয়ু সাবিত্রী র্তাহাকে ঘরে আনিয়া বসাইলেন। জলযোগটা সারিয়া তিনি আবার ভাবিতে লাগিলেন, সাবিত্রী দেখিলেন, এধরণের "ধনায় কোনো লাভ নাই। ভাত চড়াইয়া আসিয়া শর্তনি ভাইয়ের কাছে বসিয়া বলিলেন, “বাড়ীর কাজ আমি একলাই চালিয়ে নেব স্লেমন করে’ হয়, ছেলেমানুষ কান্নাকাটি কবৃছে, ওকে স্কুলেই দাও।” “মাইনে দুেব কোথা থেকে ? বইয়ের খরচ-টরচও আছে ।” এই-সকল প্রশ্নের উত্তর সাবিত্রী খানিকটা ভাবিয়াই আসিয়াছিলেন । ,তিনি বলিলেন, “আর ত দু'তিনটে মাস কোনো রকীব দিয়ে দাও । বই ত নূতন কিছু wক্ষিনতে হবে না ঐখন। পরের বছর ওদের ক্লাশে একটা স্কলারশিপ আছে, সেটা যদি পায়, তা হ’লে ভাবনাই থাকৃবে না। .তা ছাড়া ও-স্কুলে বিনে-মাইনেতে ত কত মণিহার ৭৩৭ মেয়ে পড়ে, অনেকদিন মাইনে ফেলে রাখলেও নাম কাটে না । মাসে মাসে না পার, দু’দিন বাদেই না হয় টাকা ক’টা দিয়ে দিও।” অক্ষয়কুমার ইঁাপ ছাড়িয়া বঁচিলেন । যে কাজ দুদিন পরে করিলেও চলে, তাহার জন্য ভাবনা ভাবিতে বসা অপব্যয় মনে করিয়া তিনি আর সে চেষ্টা করিলেন না । হিমানী আবার পূর্বের মত রোজ স্কুলে যাইতে লাগিল । তাহার মাহিনী দিবাব কথা তাহার বাবা বেশ খুনী হুইয় ভূলিয়া রহিলেন। কিন্তু এ-বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রীর স্বভাব একটু উন্ট-রকম দেখা গেল। দিন কয়েক তিনি হিমালীকে টিফিনের ছুটীর সময় ডাকিয়া আনিয়া এ-বিষয়ে র্তাহার বক্তব্য যাহা কিছু ছিল বলিলেন । তাহার পর সঙ্গিসের হাতে অক্ষয়কুমারের নামে চিঠি পাঠাইলেন। ইতাতেও ফললাভের কোনো সস্তাবনা না দেখিয়া তিনি হিমানীকে জানাইয়া দিলেন, যে, সব মাসের মাহিনা শোধ কবিতে না পারিলে তাহাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হইবে না। হিমানী রাগে জলিয়া গেল। তাহার অক্ষম পিতার প্রতি তাহার মনোভাবটা যে-প্রকার হইয়া উঠিল, তাহার ভিতর পিতৃভক্তি খুবই কম ছিল। পিসীর কাছে গিয়া কাদ-কাদ হইয়া সে বলিল, “আমার হাতেব চড়ি দু’টো বেচে ফেললে বারো টাকা হয় না ?” সাবিত্রী বলিলেন, “ছি মা, খালি হাত কি করে ? আর তুমি ছেলেমানুষ, তোমার কি ওসব বেচ্যুতে আছে ? ও তোমার বাবার জিনিষ । দাদা আস্বন, আমি তাকে ভাল করে’ বুঝিয়ে তোমার মাইনের টাক দিয়ে দিতে বলব।” “বাবা ছাই দেবেন, তার কিনা টাকা আছে ?” বলিয়া মুক্তকণ্ঠে কাদিতে কাদিতে হিমানী ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল । বাস্তবিক অক্ষয়কুমারকে বলিয়া কোনো লাভ ছিল না। নিরুপায় হইয়ু সাবিত্রীকে অবশেষে নিজের স্বল্প পুজির উপর হাত দিবার উপক্রম করিতে হইল। পাশের বাড়ীর রাধুনীর সঙ্গে তিনি একটি সোনার মাকৃড়ী
পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৬
অবয়ব