৭ মাঘ --سمب-سے ন-নিলে এতগুলি প্রাণী না খেয়ে মরবে। দাদা এদের একেবারে পথে বসিয়ে রেখে গেছে । কাল কি করে চলবে সে সংস্থানও নেই এদের । তার ওপর দাদার অমুখের সময় কিছু দেনাও হয়েছে। చలి এদের ছেড়ে কোথাও নড়তে পারলুম না শেষ পর্য্যস্ত । কালীগঞ্জেই থাকতে হ’ল । এখান থেকে দাদার সংসার অন্ত স্থানে নিয়ে গেলাম না, কারণ আটঘরী ত এদের নিয়ে যাবার ঘো নেই, অন্ত জায়গায় আমার নিজের রোজগারের সুবিধা না-হওয়া পৰ্য্যস্ত বাড়িভাড়া দিই কি ক’রে ? এ সময়ে সাহায্য সত্যি সত্যিই পেলুম দাদার সেই মাস্টীমার কাছ থেকে—সেই যে বাতাসার কারখানার মালিক কুণ্ডু-মশায়ের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী—সেবার যিনি আমাদের নিমন্ত্রণ ক’রে থাইয়েছিলেন । এই বিপদের সময় আমাদের কোন ব্রাহ্মণ প্রতিবেশীর কাছ থেকে সে-রকম সাহায্য আসে নি । ক্রমে মাসের পর মাস যেতে লাগল । ংসার কখনও করি নি, করবো না ভেবেছিলুম। কিন্তু যখন এ-ভাবে দাদীর ভার আমার ওপর পড়ল, তখন দেখলাম এ এক শিক্ষা–মানুষের দৈননিনি অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে, ছোটখাটো ত্যাগস্বীকারের মধ্যে দিয়ে, পরের জন্তে খাটুনি ও ভাবনার মধ্যে দিয়ে, তুচ্ছ ও অকিঞ্চিৎকর পারিপাশ্বিকের মধ্যে দিয়ে এই যে এতগুলি প্রোণীর মুখস্বাচ্ছন্দ্য ও জীবনযাত্রার গুরুভার নিজের ওপর নিয়ে সংসার-পথের চলার দুঃখ—এই দুঃথের একটা সার্থকতা আছে। আমার জীবন এর আগে চলেছিল শুধু নিজেকে কেন্দ্র ক’রে—পরকে মুখী ক’রে নিজেকে পরিপূর্ণ করার শিক্ষা আমায় দিয়েছে—মীলতী । পথে বেরিয়ে অনেক শিক্ষার মধ্যে এটিই আমার জীবনে সব চেয়ে বড় শিক্ষা । কত জায়গায় চাকরি খুঁজলাম। আমি যে লেখাপড়া জানি বাজারে তার দাম কাণাকড়িও না । হাতের কোন কাজও জানি নে, সব তাতেই আনাড়ি । কুণ্ডু-মশায়ের স্ত্রীর সুপারিশ ধরে বাতাসার কারখানাতেই খাতা লেখার কাজ জোগাড় করলাম—এ কাজটা জানতাম, কলকাতায় চাকরির দৃষ্টি-প্রদীপ 8ግU সময় মেজবাবুদের জমিদারী সেরেস্তায় শিখেছিলাম তাই রক্ষে। কিন্তু তাতে ক’ট টাকা আসে ? বৌদিদির মত গৃহিণী তাই ওই সামান্ত টাকার মধ্যে সংসার চালানে সম্ভব হয়েছে । ফাল্গুন মাস পড়ে গেল। গাংনাপুরের হাটে আমি কাজে বেরিয়েছি গরুর গাড়ি ক’রে । মাইল-বারে দূর হবে, বেগুন-পটলের বাজরার ওপরে চটের থলে পেতে নিয়ে আমি আর তনু চৌধুরী বসে। তনু চৌধুরীর বাড়ি নদীয়া মেহেরপুরে, এখানকার বাজারের সাহাদের পাটের গদির গোমস্তা, গাংনাপুরে থরিন্দারের কাছে মাল দেখাতে যাচ্ছে ! গল্প করতে করতে তনু চৌধুরী ঘুমিয়ে পড়ল বাজরার ওপরেই। আমি চুপ ক’রে বসে আছি। পথের ধারে গাছে গাছে কচি পাতা গজিয়েছে, ঘেটুফুলের ঝাড় পথের পাশে মাঠের মধ্যে সৰ্ব্বত্র । শেষরাত্রে বেরিয়েছিলুম, ভোর হবার দেরি নেই, কি মুনীর বিরঝিরে ভোরের হাওয়া, পূব আকাশে জলজলে বৃশ্চিক রাশির নক্ষত্রগুলো বাশবনের মাথায় ঝুকে পড়েছে-- যেন ওই দু'তিমান তারার মণ্ডলী পৃথিবীর সকল সুখদু:খের বাস্তবতার বন্ধনের সঙ্গে উৰ্দ্ধ আকাশের সীমাহীন উদার মুক্তির একটা যোগ-সেতু নিৰ্ম্মাণ করেছে—যেন আমাদের জীবনের ভারক্লিষ্ট যাত্রাপথের সংকীর্ণ পরিসরের প্রতি নক্ষত্রজগৎ দয়াপরবশ হয়ে জ্যোতির দূত পাঠিয়েছে আমাদের আশরি বাণী শোনাতে—যে কেউ উচু দিয়ে চেয়ে দেখবে, চলতে চলতে সেই দেথতে পাবে তার শাশ্বত মৃত্যুহীন রূপ। যে চিনবে, যে বলবে আমীর সঙ্গে তোমার আধ্যাত্মিক যোগ আছে—আমি জানি আমি বিশ্বের সকল সম্পদর, সকল সৌন্দর্যের, সকল কল্যাণের উত্তরাধিকারী—তার কাছেই ওর বাণী সার্থকতা লাভ করবে । এই প্রস্ফুট বন-কুকুম-গন্ধ আমার মনে মাঝে মাঝে কেমন একটা বেদন জাগায়, যেন কি পেয়েছিলুম, হারিয়ে ফেলেছি । এই উদীয়মান সুৰ্য্যের অরুণ রাগ অতীত দিনের কত কথা মনে এনে দেয়। সব সময় আমি সে-সব কথা মনে স্থান দিতে রাজি হই নে, অতীতকে অঁাকড়ে ধরে বসে থাকা আমার রীতি নয় । তাতে দুঃখ বাড়ে বই কমে না । হঠাৎ দেখি
পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৯
অবয়ব