পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মামা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈরাগ্য 位“S কিন্তু ঝড়ে আমি অস্থির, চড়ার বালু যেন ছিটার গুলির মত আমার শরীরে বিদ্ধ হইতে লাগিল । আমি একটা মোটা চাদর গায় দিয়া পাড়ে দাড়াইয়া গঙ্গার সেই ভীষণ প্রমত্ত মুর্কির মধ্যে সেই “মহন্তয়ং বজ্ৰমুদ্রাং” পরমেশ্বরের মহিমা অনুভব করিতে লাগিলাম। আমাদের সঙ্গের পানীখানা সকল আহার্য সামগ্ৰী লইয়া গঙ্গার গর্ভে ডুবিয়া গেল । মহর্ষি এই ভাযে ঈশ্বরের মহিমা দেখিতে দেখিতে কখন বা ভুলিতে চড়িয়া আম্বালা হইয়া লাহোরে পন্থছিলেন। এলাহাবাদে এক রাত্রি গঙ্গার পূর্ব পারে থেয়া-নৌকাতে রাত্রিযাপন করিয়াছিলেন । দিল্লীতে সুখানন্দ স্বামীর সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল । এই সুখানন্দ, হরিহরাননা তীর্থস্বামীর শিয্য, ইহারই কনিষ্ঠ ভ্রাতা আমাদের আদি সমাজের প্রথম আচাৰ্য্য রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ । যুথাননা মহৰ্ষিকে বলিয়াছিলেন যে, “আমি এবং রামমোহন রায় উভয়েই হরিহরানন্দের শিষ্য ” সুদীর্ঘ কত পথ কত ক্লেশ সহ করিয়া মহর্ষি তখন সিমলা পাহাড়ে উপস্থিত হইয়াছিলেন । সিমলা হইতে ধখন তিনি আরও উত্তর হিমাদ্রিতে পর্যাটনে গিয়াছিলেন তখন একদিনের পথের বুক্সাস্ত তিনি এই ভাযে য্যক্ত করিয়াছেন—“...পৰ্ব্বতের গাত্রেতে যিবিধ প্রকারের তৃণলতাদি যে জন্মে তাঁহারই শোভা চমৎকার । তাঁহা হইতে যে কত জাতের পুষ্প পশুটিত হইয়া রহিয়াছে তাহ সহজে গণনা করা যায় না । শ্বেতবর্ণ, রক্তবর্ণ, পীতবর্ণ, স্বর্ণবর্ণ সকল বর্ণেরই পুপ যথাতথা হই.ত নয়নকে আকর্ষণ করিতেছে । এই পুপ সকলের সৌন্দৰ্য্য ও লাবণ্য তাহাদের নিষ্কলঙ্ক পবিত্রত দেথিয়া সেই পরম পবিত্র পুরুধের হস্তের চিহ্ন তাহীতে বর্তমান বোধ হইল। যদিও তাহদের ঘেমন রূপ তেমন গন্ধ নাই । কিন্তু আর এক প্রকার শ্বেতবর্ণ গোলাপ পুষ্পর গুচ্ছসকল বন হইতে বনাস্তরে প্রস্ফুটিত হইয়া সমুদয় দেশ গন্ধে আমোদিত করিয়া রাখিয়াছে । আমার সঙ্গের এক ভূত্য এক বনলতা হইতে তাহার পুপিত শাখা আমার হস্তে দিল । এমন সুন্দর পুষ্পিত শাখা আমি আর কখনও দেখি নাই । আমার চক্ষু খুলিয়া গেল, আমার হৃদয় বিকশিত হইল । আমি সেই ছোট ছোট শ্বেত পুপগুলির উপরে অখিল মাতার হস্ত পড়িয়া রহিয়াছে দেখিলাম। এই বনের মধ্যে কে বা সেই সকল পুষ্পের সুগন্ধ পাইবে, কে বা তাহীদের সৌন্দর্য দেখিবে । তথাপি তিনি কত যত্নে, কত স্নেহে, তাহাদিগকে সুগন্ধ দিয়া লাবণ্য দিয়া, শিশিরে সিক্ত করিয়া লতাতে সাজাইয়া বসাইয়াছেন। তাহার করুণা ও স্নেহ আমার হৃদয়ে জাগিয়া উঠিল। নাথ ! যখন এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুষ্পগুলির উপরে তোমার এত করুণা তখন আমাদের উপরে না জানি তোমার কতই করুণা। তোমার করুণ। আমার মন-প্রাণ হইতে কথনই যাইবে না । তোমার করুণ। আমার মন-প্রাণে এমনই বিদ্ধ হইয়া আছে যে যদি আমার. প্রাণ যায় তথাপি প্রাণ হইতে তোমার করুণা যাইবে না ।” এই পুষ্পগুচ্ছ হাত করিয়া এবং হাফেজের উপরি উক্ত ভাবাপন্ন কবিতা পথে সমস্ত দিন উচ্চৈঃস্বরে পড়িতে পড়িতে তাহার করুণ রসে নিমগ্ন হইয়া স্বর্যাস্তের কিছু পূৰ্ব্বে সায়ংকালে মুভী নামক পৰ্ব্বত-চুড়াতে উপস্থিত হইলেন। দিন কখন চলিয়া গেল কিছুই জানিতে পারিলেন না। যখন মহর্ষি সিমলাতে ছিলেন তখন এক দিন পৌষ মাসের প্রাতঃকালে দেখেন যে রাত্রে দুই-তিন হাত পুরু বরফ পড়িয়া সকল পথঘাট বন্ধ করিয়া ফেলিয়াছে। তিনি কৌতুহলের বশবৰ্ত্তী হইয়! সেই বরফের পথেই বেড়াইতে বাহির হন। মূৰ্ত্তি ও আনন্দে তিনি এতদূর এহ বেগে চলিয়া গেলেন যে সেই শীতকালে বরফের মধ্যে তিনি গ্রীষ্ম অনুভব করিলেন এবং ভিতরের বস্তু বামে অদ্রি হইয়া গেল । তথনকার তাহার শরীরের বল ও সুস্থতার এই পরিচয় । দুই প্রহরের সময় তিনি স্থানে বসিয়া বরফমিশ্রিত জল আপনা-আপনি মস্তকে ঢালিয়া দিতেন । নিমেষের জন্ত তাহার দেহে শোণিত-চলাচল বন্ধ হইয়া যাইত এবং পরক্ষণেই তাহ দ্বিগুণ বেগে চলিয়া তাহার শরীরে সমধিক মূৰ্ত্তি ও তেজের সঞ্চার করিত। পৌষ মাঘ মাসের শীতেও তিনি গৃহে আগুন জ্বালাইতে দিতেন না। শীত শরীরে কতদূর সহ হয় তাহ পরীক্ষার জন্ত এবং তিতিক্ষণ ও সহিষ্ণুতা পরীক্ষা করিবার জন্ত তিনি এইরূপ নিয়ম অবলম্বন করিয়াছিলেন । তিনি রাত্রে শয়ন-বরের দরজা খুলিয়া রাখিতেন, রাত্রির সেই শীতের বাতাস তাহার বড়ই ভাল লাগিত । তিনি কম্বল জড়াইয়া বিছানায় বসিয়া সকল ভুলিয়া অৰ্দ্ধেক রাত্রি পর্য্যস্ত ব্ৰহ্মসঙ্গীত ও হাফেজের