পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ջե-8 এ যেন ক্লাসিকাল নন্দলাল হইতে পৃথক্ অার এক শিল্পীর উক্তি । আমাদের জাতীয় রুষ্টির পরিপূরণের পক্ষে নন্দলালের কাজ কম নয়। বর্তমানে শিল্পজগতে ভারতের প্রতিনিধি যদি কেহ থাকে, তবে নন্দলালই হইতে পারেন। কি চিত্রশিল্পে কি মগুনশিল্পে, তার স্বাতন্ত্র্য সবটার ভিতরেই আছে । বাংলার থিয়েটারে নুতন রূপসজ্জাম্ব তার কাজই কি কম ? রবীন্দ্রনাথের ‘ফাগুনী, তপতী’, ‘নটীর পূজা', শাপমোচন, ‘তাসের দেশ প্রভৃতি নূতন ধরণের নাটিকা বাংলার নাট্যজগতে নূতন রূপলোকের সন্ধান দিয়াছে। তার সাজসজ্জা পরিকল্পনা জোগাইয়াছে কে ? নন্দলালের মত শিল্পীর হাত না পড়িলে রবীন্দ্রনাথের নাটিকার অর্ধেকই মারা যাইত । শুধু বড় চিত্রে বা মাষ্ট্যরপীসে নয়, পেন্সিল ড্রয়িং ও স্কেচেও তার প্রতিভার ছাপ পড়ে। অটোগ্রাফের অর্থাৎ নানা জনের নামস্বাক্ষরের বহিতে তিনি-যে-সব ছবি আঁকিম্বা দিয়াছেন, স্বজনী শক্তির পরিচয় তাহাতে কম পাওয়া যায় না। এ-লব কাজ কেবল র্তাহার পক্ষেই সম্ভব। র্তাহার সম্মুখে অটোগ্রাফের খাতাথান ধরিলে নিমেষে জাকিয় দেন—অনন্ত আকাশে উড্ডীয়মান বলাকাশ্রেণী, পদ্মানদীর বালুর চর, পালতোলা নৌকা, হাস, মুরগী, কুকুর ছানাকে স্তন্তদান করিতেছে, এক টুক্‌র পাথরকে ঘিরিয়া বর্ষার জলধারা চলিতেছে, ক্ষের ফুল ফুটিআছে, পলাশ গাছে রঙের উৎসব, বাছুর লাফাইয়া লাফাইয়া চলিয়াছে, হরিণের দল দৌড়াইতেছে, এমন কত কি ! তিনি যখন ভ্রমণে বাহির হন সঙ্গে থাকে একতাড়া সাদা কার্ড, তাতে কত রকমের স্কেচের সংগ্রহ। এগুলি অনেক সময় আঁকা হয় খেলাচ্ছলে। শিল্পামোদীর কাছে যে এতে কেবল রেখার দৃঢ়তা, পেন্সিল তুলি চালাইবার অপূৰ্ব্ব ক্ষমতা প্রকাশ পায় তাহা নহে - অনেক সময় ইহার ভিতর পাওয়া যায় শিল্পীর একটি প্রচ্ছন্ন হিউমার বা অনাবিল হাস্তরস। তিনি অন্ত আর্টিষ্টদের বা উার ছাত্রদের কাছে যখন চিঠি লেখেন, তার ভিতর লেখা বিশেষ কিছু থার্কে না, ছবি আঁকা থাকে। শাস্তিনিকেতনে ৭ই পৌষের মেলা উপলক্ষ্যে সাদা কার্ডে ছবি আঁকা হয়, মেলায় নামৰাত্র দামে এগুলি বিক্ৰী হয়। নববর্ধ বা অন্ত কোন সময়ে শুভ ইচ্ছ ব্যক্ত করিতে এগুলির ব্যবহার হয় । নন্দলালের স্কেচ (নকশা) "প্রবামী স্ট্র SS8S ও পোষ্ট কার্ডের ছবি জাপানের বিখ্যাত আর্টিষ্ট হোকুসাইর কাজকে স্মরণ করাইম্বা দিবে। দুই শিল্পীর যেন এ-বিষয়ে খুবই নিকট সম্বন্ধ। জাপানীরা নববর্ষে ছোট ছোট ছবি পাঠাইয়৷ বন্ধু ও আত্মীয়দের কাছে শুভ ইচ্ছা জানাইয়া থাকে। এসব ছবিকে জাপানীরা বলে স্করিমোনো (Surimono) হোকুসাইর ডিজাইন ( এগুলি হইত রঙীন উডকাটের ছবি ) করা। মুরিমোনে জাপানীদের কাছে খুব আদৃত ছিল, এগুলির সহিত শাস্তিনিকেতনের ৭ই পৌষের কার্ডের যেন সাদৃশ্ব আছে । এই প্রবন্ধের সঙ্গে যে-আটটি চিত্র দেওয়া গেল, এগুলি ৭ই শেষের কার্ড। লরেন্স বিনিয়ন যেমন হোকুসাইর ছবি সম্বন্ধে লিখিয়াছেন, সেইরূপ নন্দলালের কার্ডের ছবি সম্বন্ধে বলিতে পারি-“কল্পনা ও মাধুর্যে অফুরন্ত ; শিল্পীর পরিপক্ক ক্ষমতা ব্যক্ত করে...র্তার অনুসন্ধিৎসু চক্ষু এবং লিপিকুশল হাতের কাছে প্রকৃতির কিছুই এড়াম না, প্রকৃতির সকল বস্তু র্তার গতিমান রেখাপাতে মূৰ্ত্ত হইয়া উঠে।” নন্দলালের অটোগ্রাফ এবং অন্যান্য স্কেচ সংগ্ৰহ করিতে পারিলে ভারতীয় শিল্পের একটি অপূৰ্ব্ব সামগ্ৰী হইতে পারে। বৈষ্ণৰ গান আছে “কাকু ছাড়া গীত নাই।” তিনি তার স্বজনী শক্তিকে “কাকুর গীতে” বা কোনো বিশেষ বিষয়ে আবদ্ধ করিয়া রাখেন নাই । তার প্রতিভা “নবনবোন্মেযশালিনী বুদ্ধি" শিল্পের বিভিন্ন দিকে প্রকাশিত হইয়াছে । নানা কারুকৰ্ম্মে তার যত্ন পাওয়া যায়। কারুশিল্পকে তিনি র্তার চিত্র অপেক্ষ হেয় জ্ঞান করেন না । একবার এক আমেরিকান আর্টিষ্টের কাছে নন্দলালকে আর্টিষ্ট বলিয়া পরিচয় দেওয়াতে তিনি উত্তর দেন—“আমি আর্টিষ্ট নই—কারিগর মাত্র।” তখন সেই আমেরিকান বলেন-“তাহলে আমি জানি না যে আমি কি !" কারুশিল্পের বিভিন্ন বিষয়ে ও ক্ষেত্রে তিনি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন । বিভিন্ন শিল্পীজনোচিত উপকরণে ব্যঞ্জনা দেওয়ার চেষ্টা-কাগজ, সিল্ক, মাটি, কাঠ, পাথর, রবার প্রভৃতিতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা—বিভিন্ন উপকরণে ব্যক্তিত্বের ছাপ ফোটান তার বৈশিষ্ট । উভকাট, লিনোকাট, লিখে, ঘাটক ওয়ার্ক, ক্ষে, টেরাকোটা, মূৰ্ত্তি নিৰ্মাণ প্রভৃতি সঙ্কল কাজই তিনি করিখছেন। সকল কাজেই দেখা যায় উীর মগুমশিয়ের দক্ষতা । র্তার চিত্রের ভিতরে আছে আকারগঞ্চ গোপাধ্য।