বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ বেরই নি, দাদা হয়ত আপত্তি করবে। সে দিকে থাকবার কোন সুবিধা হয় না ? সে স্কুলের বোর্ডিং নেই ?” “বোর্ডিং হবার কথা হচ্ছে, বোধ হয় শীঘ্রই হবে। আপনার স্বাবলম্বন-বৃত্তি অবলম্বন করতে যাচ্ছেন, অথচ সাহস করে বাড়ীর বাইরে যেতে চান না ?” আমি লজ্জিত হইয়া বলিলাম, “আপনি সে-কথা অবশু বলতে পারেন। প্রথম প্রথম সঙ্কোচ বোধ হবেই ত, পরে সাহস বেড়ে যারে। এখন দাদাকে রাজি করতে পারলে হয় । আমার চাকরি করার কথাতেই ত দাদা মুখ ভার করে আছে, আমার সঙ্গে ভাল করে কথা কয় না ।” শঙ্কর বাহির হইয়। দাদাকে ডাকিল এবং দাদা আসিয়া শঙ্করকে বলিল, “কি হে শঙ্কর, কি মনে করে? আমার । বিরুদ্ধে তোমাদের কি ষড়যন্ত্র হচ্ছিল ?” শঙ্কর বলিল, “নীরু দেবী নারী-স্বাধীনতার ধ্বজ উড়িয়ে এবার রাস্তায় বেরুবেন, সেই পরামর্শ হচ্ছিল ।” দাদা বলিল, “তুমিই দেখছি নীরু দেবীর মন্ত্রী হয়ে দাড়িয়েছ, কিন্তু ভাই যাই কর, নাম হাসিও না ।” আমি বলিলাম, “তোমরা ত চিরদিনই নারীদের উপহাস ক'রে এসেছ । তারা যা-কিছু করতে যাবে, তোমরা তাই ঠাট্টা ক’রে উড়িয়ে দেবে। সুতরাং সে ভয় করলে আমাদের চলবে না। আমাদের নিজের চেষ্টাম নিজের পথ খুজে নিতে হবে।” দাদা বলিল, “নিজের পথ মানে ত কোন স্কুলে টীচারি করা ।” শঙ্কর বলিল, “উনি আপাততঃ সেই রকম একটা কাজ করতে চাইছেন। এখন তোমার মত হলেই হয় ।” দাদা বলিল, “আমার আবার মতামত কি ? নীরু দেবী ত আমার মত-অনুসারে চলবেন না বলেছেন। উনি যা ভাল বোঝেন তাই করুন।” আমি বলিলাম, “দাদা, তুমি রাগ করে না। আমার যখন কলেজ থেকে নাম কাটা যাচ্ছে, তখন আমি কিছু নাকরে নিষ্কৰ্ম্ম ঘরে বসে থাকতে চাই নে। আমি একটা টাচারি করতে চাই, তাতে আমার প্রাইভেট বি-এ পড়াও চলবে। এতে আপত্তির কারণ কি হ’তে পারে ?” সন্ধি ફ૭6 শঙ্কর বলিল, “এ ত ভাল কথাই, এতে তোমার অমত হবে কেন, স্বকুমার ?” দাদা একটু নরম হইয়া বলিল, “কোথায় টীচারি করবে ? মেয়ে-স্কুলের ত ছড়াছড়ি ।” * শঙ্কর বলিল, “আমাদের ভবানীপুরে মেয়েদের জন্য একটা নতুন হাইস্কুল হয়েছে, সেখানে ত্রিশ টাকা মাহিনায় একটা কাজ পাওয়া যাবে । আমি সেই কথাই আজ বলতে এসেছি।” 蟒> দাদা বলিল, “ভবানীপুর এখান থেকে যাওয়া-আসা করা ত সোজা কথা নয়। তুমি আমি পারি, কিন্তু নীরু দেবী পারবেন কি ? তাকে রোজ রোজ কে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে ? এপৰ্যন্ত তিনি ত কখনও রাস্তায় একলা বেরোন নি ?” আমি বলিলাম, "প্রথম প্রথম দু-একদিন সঙ্কোচ বোধ হবে, কিন্তু ক্রমে অভ্যাস করলে আর কোন ভয়-ভাবনা থাকবে না । আমাদের ত ঘরের কোণে আবদ্ধ হয়ে থাকলে চলবে না ।” - দাদা বলিল, “অর্থাৎ ইংরেজীতে যাকে বলে নিজের কপালের ঘাম দিয়ে রুটি উপার্জন তাই করতে হবে । বেশ তা-ই কর।” আমি হাসিয়া বলিলাম, “শঙ্কর বাবু, শুনলেন ত, দাদার মত হয়েছে । আপনি কালই এসে আমাকে নিয়ে যাবেন, আমি সেখানে গিয়ে কাজ ঠিক করে আসব। কখন আসবেন বলুন।” শঙ্কর বলিল, “আমি কাল সকালে সেক্রেটারী অতুল বাবুকে বলে রাখব, আপনি স্কুলের সময় যাবেন। আমি এগারটার সময় আপনাকে নিয়ে যাব ।” দাদা বলিল, “আমিও তোমাদের সঙ্গে গিয়ে দেখে আসব । নীরু আমার সঙ্গে ফিরে আসবে।” এই বন্দোবস্ত অনুসারে আমি দাদা ও শঙ্করের সহিত ট্রামে চড়িয়া ভবানীপুরে সেই স্কুল দেখিতে গেলাম। ট্রামে তখন অনেক ভিড় ছিল, খোলা গাড়ীতে অনেক পুরুষমামুষের সঙ্গে বসিয়া যাইতে আমার কেমন লজ্জা করিতে লাগিল । অনেক লোক ই করিয়া আমাকে দেখিতে লাগিল । । আমাদের দেশের তথাকথিত ভদ্রলোকেরাও কিরূপ অশিষ্ট । চারিদিকের কটাক্ষপাতের মধ্যে আমি ঘাড় নীচু করিয়া বলিয়া