পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

વાિ રામાં ઝં Sළුණ්ථ’ আৰখানে ক্ষেত্রনাথ কয়েক মুহূর্তের জন্য ভাল জগছাত্রীকে দেখিয়াছেন, দেখিয়াছেন বটে—তাহাও বড় ঝাপস রকম, বাসকালের চোখের সে দৃষ্টি নাই—রাত্রিবেলা কোন কিছু ভাল করিয়া দেখিতে পান না, সেই ক্ষণিকের দেখা মূৰ্ত্তি ভুলিয়া গিয়াছেন...কোন কালের কোন মূৰ্ত্তিই মনে নাই ; কেবল মনে আসিতেছে, কারণুে-আকারণে খিল থিল করিম হাসি...আবার সঙ্গে সঙ্গেই জলভরা অভিমানাহত ডাগর ডাগর চোখ দুটি... to —আমায় বিয়ে করবে ? ও দাদা, বিয়ে করবে আমায় ? ক্ষেত্রনাথের বৌদি সম্পর্কের এক নিঃসন্তান বিধবা তাহাদের বাড়িতে থাকিতেন। এতটুকু মেয়ে জগদ্ধাত্রী বেড়াইতে আসিলে বৌদিদি আদর করিয়া চুল র্বাধিয় খয়ের-টিপ পরাইম্বা গিল্পীর ঝাপি হইতে আলতা-পাতায় পা ছোপাইয় অনেক শিখাইয় পড়াইয় তাহাকে ক্ষেত্রনাথের কাছে পাঠাইতেন । ক্ষেত্রনাথের বয়স বেশী, বুদ্ধিও বেশী। নায়িকার শুভ প্রস্তাবের প্রত্যুত্তরে স্বামিত্বের প্রথম সোপানস্বরূপ তার পিঠের উপর যে বস্তু উপহার দিত তাহাতে জগদ্ধাত্রী ব্যথায় যত না হউক অভিমানে চতুগুণ কাদিয়া ভাসাইয়া দিত।...সেই সব কথা মনে পড়িতে লাগিল। সেদিন উমানাথ বাড়ি ফিরিল যখন চাদ ডুবিয়া গিয়াছে । অত রাত্রেও ক্ষেত্রনাথের ঘরে আলো । উমানাথ খিড়কী ঘুরিয়া বাড়ির মধ্যে ঢুকিবার মতলবে টিপিটপি কয়েক পা পিছাইয়াছে, কিন্তু ক্ষেত্রনাথের চোখকে হয়ত ফাকি দেওয়া ধায়, কান ভারী সজাগ ! বলিলেন-কে ? কেও ? উমা ? এই ঘরে এস ; তোমার জন্তে বসে আছি কেবল-- হয়ত সত্যই তাহার অপেক্ষায় বসিয়া ছিলেন, কিন্তু নিতাপ্ত যে হাত-পা কোলে করিয়া চুপ করিয়া বসিয়াছিলেন তাঁহা নহে। তিনটা দলিলের বাল্পই খুলিয়া ডালা তুলিয়া রাখা, প্রদীপে এক সঙ্গে অনেকগুলা সলিত ধরাইয়া দেওয়া হইয়াছে, চোখে চশমা জাটা জুপীকৃত দলিলের মধ্য হইতে একখান বাছিয়া ক্ষেত্রনাথ মেজের উপর উবু হইয়া যেন ঐ দলিলখানির উপর স্তিমিত চোখের সকল দৃষ্টিশক্তি ঢালিয়া দিয়া পড়িতেছিলেন। উমানাথ কহিল—এখনো শোন নি আপনি ? এটা কিছু নূতন ব্যাপার নয়, আশ্চৰ্য হইবার কিছু নাই ইহাতে। বৈষয়িক ব্যাপারে ক্ষেত্রনাথের সতর্কত চিরদিনই অপরিসীম, এ বিষয়ে দিনরাত্রি জ্ঞান নাই। দলিলের বাক্সগুলি থাকে শোবার ঘরে ঠিক শিয়রের কাছ-বরাবর, প্রত্যেকটি দলিলের গায়ে একটুকর করিয়া কাগজ আঁট, তাহাতে ক্ষেত্রনাথের স্বহস্তে লেখা স্কুলমৰ্ম্ম । শীতকালে একদিন কাগজপত্র ঝাড়িয়া ঝুড়িয়া রৌদ্রে দেন, সমস্ত বেলা নিজে পাহারা দিয়া পাশে বসিয়া থাকেন, আবার নিজের হাতে সমস্ত গোছাইয়া নূতন কাপড়ের দপ্তরে সাজাইয়া বাধিয়া রাখেন। এমন অনেক দিন হইয়া থাকে, নিযুপ্ত গভীর রাত্রি, এক ঘুমের পর ক্ষেত্রনাথের মনে কি রকম একটা গোলমাল লাগিল, উঠিয়া আলো জালিয়া বাক্স খুলিলেন, তারপর দুচারিট দলিল বাহির করিয়া নিবিষ্ট মনে থানিক পড়িয়া দেখিম। তবে নিশ্চিন্ত হইয় গুইতে পারেন। গৃহিনী গত হইবার পর হইতে ইদানীং রোগটা আরও বাড়িয়া গিয়াছে । উমানাথ কহিল –রাত একটা-দুটো বেজে গেছে । আর রাত জাগবেন ন দাদা । ক্ষেত্রনাথ বাহিরের পানে চাহিলেন ; কিন্তু জানলা বন্ধ, কি দেখিবেন ? বলিলেন—রোসে । তাড়াতাড়ি কাগজগত্র তুলিয়া রাখিলেন, বলিলেন—এস এদিকে, সিন্দুকটা ধর দিকি-- —কোন সিন্দুক ? বিরক্ত মুখে ক্ষেত্রনাথ বলিলেন-সিন্দুক কট আছে তোমাদের বাড়ি ? বাক্সের কথা বলছি নে, ঐ সিন্দুক । অনেক পুরাণে সেগুন কাঠের অতিকায় সিন্দুক, কাঠগুলি কাল পাথরের মত হইয়া গিয়াছে। এমন জিনিষ আজকালকার দিনে হয় না । আগে উহার সমস্ত গায়ে ফুল-তোলা অঙ্গরীস্বাকানো বিস্তর সাজপত্র ছিল, দু-একটা করিয়া খুলিয়৷ পড়িতে পড়িতে এখন তার চিহ্নমাত্র নাই। ইদানীং ইহা বড় একটা ব্যবহারেও আসে না। এখানে সেখানে তক্তার জোড় ফাক হইয়া ঘরের এক কোণে অবহেলিত ভাবে পড়িয় রহিয়াছে। খানিক টানাটানি করিয়া উমানাথ কহিলেন –চার-পাচ মণের ধাক্কা দাদা, নড়ে চড়ে না একটু। —ভাল করে ধর—বলিয়া ক্ষেত্রনাথ সিজুক ধরিয়া প্রাণপণ বলে ঝুলিয়া পড়িলেন । কিছুতে কিছু হয় না।