পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

§ e আগে উঠিয়া আসিয়া সিলুকের উপর বসিয়া বসিয়া স্বর ভজিতেন। খাগের কলম ও হলদে কাগজের খাতা বাহির হইত। লোকজন আসিতে স্বরু হইলে খাত কলম আবার সিন্দুকে চুকিত। প্রৌঢ় বয়সে সহায়রামকে বড় শোকতাপ পাইতে হয়। তিনটি ছেলে ওলাউঠায় মরিয়া গিয়া একেবারে নির্বংশ হইলেন। আগে যা একটু কাজকৰ্ম্ম দেখিতেন ইহার পরে তাঙ্গ একেবারে বন্ধ হইয়া গেল—বড় একটা বাড়ির মধ্যেই আসিতেন না, সমস্ত দিন ও অনেক রাত্রি অবধি সিন্দুকের উপর চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতেন। এক এক সময়ে গানের খাতা খুলিয়া স্বর ধরিতেন, স্বর খুলিত না, গলা আটকাইম যাইত, চোখের জল খাতার উপর টপ-টপ করিয়া ঝরিয়া পড়িত। এই সময়ে জগদ্ধাত্রীর জন্ম। মেয়ের যতদিন বিবাহ হয় নাই, মেয়ে ছাড়া কিছুরই খোজ রাখিতেন না। গিরি মারা গেলেন, মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলিয়া গেল, সহায়রামের যাহ-কিছু ছিল মেয়ের বিবাহে উজাড় করিয়া দিয়া দিলেন,--দিলেন না কেবল ঐ সিন্দুক । নিরালা থোড়ো ঘরে কৰ্ম্মহীন বৃদ্ধের জীবনান্তকাল পর্য্যস্ত ঐ সিন্দুক ও গানের খাতা সম্বল হইয়া রহিল। উমানাথ সেই সময়ে রাতদিন বুড়ার সঙ্গে লাগিয়া থাকিত। তার অনেক দিন পরে সহায়রামের মৃত্যুর পর তাহাকেই গুরু বলিয়া ভণিতা দিয়া উমানাথ কবির দলে গান বঁাধিতে মুরু করিয়াছে । পরদিন বেলা বোধ করি প্রহরখানেক হইবে, জগদ্ধাত্রী সস্তপণে পা ফেলিতে ফেলিতে ভিতরের উঠানে দাড়াইল । পরণে তাহার অতি জীর্ণ একথানি মটকার থান, স্নান হইয়া গিয়াছে, ভিজা চুলের উপর ফেরত দিয়া আঁচল জড়ানো। —কই গো মানুষ-জন কোথা ? প্রথমটা জবাব আসিল না । আরও দু-একবার ডাকাডাকি করিতে তরঙ্গিনী বাহির হইল। দাওয়ায় পিড়ি পাতিয়া দিয়া মুখ কালো করিয়া প্ৰণাম করিতে জাগিল। জগদ্ধাত্রী তাড়াতাড়ি পা সরাইয়া বলিল— Sත8ෆ ছয়ে দিওন, দিদি। তোমাদের কৰ্ত্তাদের সঙ্গে কাজ রয়েছে, কাজ সেরে এই পথে অমনি মঠবাড়ির মছবে যাব। তুমি ত উমানাথের বউ—বাড়ির গিন্নি হয়েছ এখন। সেদিনকার উমানাথ--তার আবার বউ, সে হ’ল গিরিঠাকরণ। বলিয়া হাসিতে গিয়া তেমন করিয়া হাসিতে পারিল না। বলিল—কি স্বন্দর সোনার সংসার আগুলে বলে আছিস বউ, দেখে হিংসে হয় । সেজবেী ও ছোটবেী ঘাটে গিয়েছিল । সমস্তটা ঘাটের পথ বক-বক করিতে করিতে এখন আসিমা রান্নাঘরে কাখের কলসী নামাইল । অচেনা মানুষ দেখিয়া কপাটের আড়ালে দাড়াইয়া গেল। জগদ্ধাত্রী ডাকিল—ইদিকে আয়, ঘোমটা দিচ্ছিস যে বড় । আমায় ফুটুম্ব ঠাওরালি নাকি ? মুখ তোল—তোল শিগগির— ঘোমটা টানিয়া শান্ত সভ্যভব্য হইয়া থাকা ছোটবেীর পক্ষেও বিষম দুরূহ ব্যাপার। মুখ তুলিয়া একবার চাহিয়া আবার সে ঘাড় নামাইল । জগদ্ধাত্রী বলিল-আমার যে ছোবার জো নেই, ওগো ও গিঠিাকরণ, এখানে এসে দে দিকি এই দুই মেয়ে দুটাের পিঠে দুটো কিল বসিয়ে— তরঙ্গিনী আসিয়া উভয়ের ঘোমটা খুলিয়া দিল। খুলী হইয়া জগদ্ধাত্রী বলিতে লাগিল-—বা বাঃ, চাদের মত মেয়ে—লক্ষ্মী-সরস্বতী দুটি বোন।...হালো, ও মেন্ধেরা, টিপিটিপি হাসছিস যে বড়। জানিস্, আমি কে ? বধুর বোকা নয়। ছোটবে বলিল-আপনি পিসিমা – কৃত্রিম রাগ দেখাইয়া জগদ্ধাত্রী বলিল-জবাব শোন না একবার । পিসিমা ! গুণের নিধি শ্বশুরঠাকুর বলে দিয়েছেন বুঝি ? কেন শুধু মা হলে দোষটা কি ? হ্যারে, মা বেঁচে আছেন ত ? ' ছোটবধূর মুখ মলিন হইয়া গেল । জগদ্ধাত্রী বলিল—নেই ? খেয়ে-দেয়ে অবসর হয়েছিস্ ? নানা কথায় বেলা বাড়িয়া আসিল। বহুকাল পূৰ্ব্বে যখন এ-যুগের এই সব নূতন মাহুষের দল পৃথিবীকে দখল করিয়া বসে নাই, তখন এই গ্রামের মধ্যে এই বাড়ির চতুসীমায় এই উঠানের ধূলার উপর অতীতের আর এক দল কিশোর-কিশোরী দিনের পর দিন যে-সব হাসি ও জঞ্জ