পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 "স্রেহাল্লাষ্ট্র ত সেখানেই ছিলেন, চল্লিশটা পয়সা দিয়ে কোন করে নি। জগদ্ধাত্রী একবার হৃদয়ের মুখের দিকে চাহিল। তারপর বলিল—বাবা কেশব দত্তের টাকা শোধ করে দিয়েছিলেন - অগ্নিদৃষ্টিতে চাহিয়া ক্ষেত্রনাথ বলিলেন—তোমার কাছে টেলিগ্রাফ হয়েছিল বুঝি ? —বাবা চিঠি লিখেছিলেন। —-দেখাও চিঠি। * জগদ্ধাত্রী একটু ইতস্তত করিয়া কহিল—এত দিনের চিঠি...তাই কি থাকে ! ক্ষেত্রনাথ অধীর কণ্ঠে কহিতে লাগিলেন -থাকে, থাকে-- সত্যি হ’লে সমস্ত থাকে। আমার কাছে টুকরো কাগজখানি অবধি রয়েছে। পাঠশালে যে দাগ বুলিয়েছি তা পৰ্য্যস্ত খুজলে পাওয়া যায়। বলিয়৷ মৃত্যু হাসিম বলিলেন -এত কথা শিখিয়ে দিতে পেরেছ হৃদয়, আর একথান চিঠির জোগাড় ক’রে রাখতে পারনি ? হৃদয়ও মহাক্রোধে সমুচিত জবাব দিতে যাইতেছিল, নিবারণ মজুমদার মধ্যবর্তী হইয়া কলহ থামাইয়া দিল । নিবারণ কহিল-মেটের উপর আপনি ঠকে গেলেন চাটুজ্জে মশা, জগদ্ধাত্রী ঠাকরুশকে সাক্ষী মেনে ছিলেন আপনিই ক্ষেত্রনাথ হাতমুখ নাড়িয়া কহিতে লাগিলেন –কিসের ঠক ? ও মিথ্যেবাদী, মহাপাপী—ষ বলবে তাই হবে নাকি ? আইন-আদালত রয়েছে, মামলা করে নিকৃগে। আমার আজ চল্লিশ বছরের দখল, গ্রামের সমস্ত লোক দেখছে, মিথ্যে বলে ও কেবল নিজের পরকাল থোমালে—আমার কি ? নিবারণ কহিল—গ্রামের সব লোক আপনার দিকে সাক্ষী দেবে তাই বা কি করে জানলেন ? ক্ষেত্রনাথ কহিলেন--দিও ঐ দিকে সাক্ষী, গ্রাহ করিনে । এটা কোম্পানীর রাজত্ব—আমার দলিল রয়েছে, জরিপের রেকর্ড—তার উপর মতি বিশ্বেসের মেয়াদী কবুলতি। বিপিন চক্রবর্তীকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন–চক্কোত্তি মশায়, আপনি বন্ধন একটু। যখন পায়ের ধূলো পড়েছে মতি বিশ্বেসের কবুলতিটা একবার দেখে যান দ্রুতপায়ে ক্ষেত্রনাথ ঘরে গেলেন। ঘরের কোণে দেবীদাস রায়ের সিন্দুৰ বিছানায় বালিশে বিলুপ্ত হইয়া রহিয়াছে, কোন স্বত্বং সাহায্য 39BO চিহ্ন নজরে পড়ে না। ক্ষেত্রনাথ দলিলের দুই সম্বর বাক্ষ খুলিয়া মুহূৰ্ত্ত মধ্যে কবুলতি লইয়া বাহিরে জাগিলেন। —দেখুন, দেখুন, রেজেক্টর তারিখটা হ’ল কোন গলি ? হিসেব করে দেখুন, তেত্রিশ বছর হয়ে গেছে। বিশ্বেল জঙ্গল ৰেটে চাষবাস করবে এই চুক্তিতে মেয়াদী বন্দোবস্ত । আপনি ত বৈষয়িক লোক বলুন এবার দখলি-সত্ব প্রমাণ হয় কি নু ? ফিরিবার পথে বিপিন চক্রবর্তী কহিতে লাগিলেন–জামি বুড়োমাহ্য, অনর্থক আমাকে এই সব হাঙ্গামে টেনে আনা। কেঁদে করবি কি মা জগদ্ধাত্রী, ওর আর কোন উপায় নেই। বাঘের মুখ থেকে মানুষ ফেরে, কিন্তু ক্ষেত্তোর চাটুঙ্গের হাত থেকে বিষয়-সম্পত্তি ফিরেছে কেউ কোনো দিন শোনে নি। সেবারে কি হল, ঐ বাস্থলডাঙার ভড়েদের সঙ্গে ? ভড়েদের সেজবাবু এত লাফালাফি, হেনো করেঙ্গা তেনে করেঙ্গ— শেষকালে দেখি ক্ষেত্তেরনাথ ওয়াশীলাতন্ত্রদ্ধ আদায় ক’রে নিলে । মনে পড়ছে না নিবারণ ?... বিকালবেল ক্ষেত্রনাথ সেই চণ্ডীমণ্ডপেই বসিয়াছিলেন । মাদুরের উপর একদল প্রজা-পাটক। গোমস্ত রাপাল হাতি দাখিল লিথিয় টাকা লইতেছিল। মানারূপ গল্প হইতেছিল, বিশেষ করিয়া ওবেলাকার বিজয়কাহিনী। রাগাল একবার মুখ তুলিয়া বলিল--ঠাকরুণের শ্বশুরবাড়ির ত খুব ধনী লোক--- হা-হা করিয়া হাসিয়া ক্ষেত্রনাথ কহিলেন--খুব ধনী— বুঝলে, একেবারে রাজা রাজবল্লভ। আমার ভায় একদিন গেছলেন সেখানে । তার মুখে রাজবাড়ির বর্ণনা পাওয়৷ গেল। ভাঙ পাচিলের উপর একথান দোচালা, নারকেল পাতার ছাউনি, আগুস্তি ফুটো। শুয়ে গুয়ে দিব্যি চাদের আলো পাওয়া যায় – রাখাল বলিল-দেশেও ত ওদের বিস্তর জমিজমা ছিল, সে সব কি হয়ে গেল ? ক্ষেত্রনাথ বলিলেন-দেনাও ছিল একরাশ। সরাই মরেহেঙ্গে গেল, মহাজনেরা আর সবুর করলে না। এখন থাকবার মধ্যে ঐ দোচালা অট্টালিকা আর বিঘেখানেক