পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গভর্ণমেন্টের প্রস্তাবের অনুকূলে মত প্রকাশ না করিলেও পূর্ণ স্বর্ণমান প্রচলনের পক্ষেই মত নিৰ্দ্ধারণ করিলেন। উহাদের প্রস্তাবের তাৎপৰ্য্য এইরূপ:-( ১ ) বিলাতের স্বর্ণমুদ্রা ( সভারিন ) ভারতে অবাধে চলিতে পরিবে ; ( ২ ) ভারতীয় টাকশালে অবাধে স্বর্ণমুদ্রা প্রস্তুত হইতে পারিবে ; (৩) স্বর্ণ অবাধে আমদানী ও রপ্তানী হুইতে পারিবে ( ইহা পূর্ণ স্বর্ণমানের একটি প্রধান লক্ষণ ) , ( s ) গভর্ণমেন্ট স্বর্ণের বিনিময়ে টাকা দিবেন বটে কিন্তু নূতন টাকা আর প্রস্তুত করিতে পরিবেন না, যে পর্যন্ত ন] সৰ্ব্বসাধারণের প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্বর্ণমুদ্রা বাজারে ছড়াইয় পড়ে ; ( ৫ ) হীন মূল্যের টাকা প্রস্তুত করিয়া গভর্ণমেণ্ট প্রতি টাকায় যে by০, ৪/৩ আনা লাভ করেন তাহা সরকারী সাধারণ তহবিলে জমা করা হইবে না । ইহা দ্বারা স্বর্ণমান প্রচলনের উদ্দেশ্য একটি স্বতন্ত্র স্বর্ণ তহবিল (Gold Standard Reserve ) খোলা হইবে, যাহাতে সমস্ত রৌপ্যমুদ্র ইহার সাহায্যে ধীরে ধীরে কিনিয় লওয়া যাক্টতে পারে ; (৬) গভর্ণমেণ্টকে যে অর্থ ভারতবর্ষে ব্যয় করিতে হয় টাকার পরিবর্তে র্তাহার। তাহ স্বর্ণমুদ্রায় করিবেন ; ( 4 ) বিনিময়ের হার ১০ শিলিং ৪ পেনি হিসাবে ধরা হইবে এবং টাকা হীনমুদ্র হইলেও জনসাধারণ কর্তৃক তাহার ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা হইবে না । স্বর্ণমানের প্রধান উপকরণ বা উপাদান নিজ দেশে অবাধে স্বর্ণমুদ্র-প্রস্তুতের অধিকার । এই গোড়ার অধিকারটি বৃটিশ কর্তৃপক্ষের আপত্তির দরুণ ভারতবর্ষকে দেওয় হইল না। স্বর্ণ-তহবিল ধীরে ধীরে রৌপ্যমুদ্রাকে টানিয়া লং দু স্বর্ণমানের পথ প্রশস্ত করিয়া দিবে, স্বর্ণ-তহবিল স্বষ্টির এই উদ্দেশুটিও ভারতসচিব অনেকটা ব্যর্থ করিয়া দিলেন । প্রথমতঃ এই স্বর্ণ-তহবিল ভারতবর্ষে না রাখিয়৷ ষ্টার্লিঙে রূপান্তরিত করিয়া বিলাতে রাখা হইল। দ্বিতীয়তঃ, এই তহবিলের একটা অংশ ভারতের রেলপথ-নিৰ্ম্মাণে ব্যয় হইতে লাগিল। তৃতীয়তঃ, অতিরিক্ত টাকার আবশুক হুইলে রৌপ্য খরিদের মূল্য দিবার জন্য স্বর্ণ-তহবিলের একাংশ রৌপ্যমুদ্র রূপে ভারতবর্ষে রক্ষিত হইল। ভারতীয় পণ্যের মূল্য দিবার জন্ত বা অন্য কারণে ইংলণ্ড হইতে ভারতবর্ষে স্বর্ণ পাঠাইবার প্রয়োজন হইলে ভারতসচিব বাজার-দর Sునరి:BO অপেক্ষা কম মূল্যে তাহদের নিকট হইতে স্বর্ণ গ্রহণ করিয়া কাউন্সিল বিল বেচিতে স্বরু করিলেন এবং এইরূপ বেচা-কেনার কোনরূপ পরিমাণ বা সীমানির্দেশ করা হইল না। ফলে বিদেশ হইতে ভারতে স্বর্ণ প্রবেশের পথ রুদ্ধ হইয়া গেল। যে স্বর্ণ ভারতের প্রাপ্য এবং যাহা ভারতে আসিতে পারিলে নানা উপায়ে ভারতের ধনবুদ্ধির সহায়ত করিতে পারিত তাং বিলাতেই রহিয়া গেল, এবং তথায় আমাদের নামে জমা থাকিলেও অল্প স্বদে ইংলণ্ডের ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নতিকল্পে ব্যবহৃত হইতে পারিল । এত বড় একটা বিরাট ধনভাণ্ডারের কর্তৃত্ব করিতে পা-য়া সহজ সুবিধা নহে। ইহাতে ইংলণ্ডের মধ্যাদা ও ধনবল বাহিরে যেমন বাড়িয়া গেল আমাদের ধন পরহস্তগত হওয়ায় তাহ সম্ভব হইল না। ইহাও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, নোটের টাক দিবার জন্য যে পৃথক তহবিল ( Paper Currency Reserve ) রাখা হয় তাহা হইতে ১৯০৫ সালে ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার স্বর্ণ জাহাজে করিয়! বিলাতে পাঠান হয় । ইহার অমুকুলে এই যুক্তি প্রদর্শন করা হয় যে, টাকা প্রস্তুতের জন্য ইংলণ্ডে রৌপ্য খরিদকালে ভারতবর্ষ হইতে স্বর্ণ আনাইম লইতে তিন-চার সপ্তাহ বিলম্ব ঘটিত - ইহাতে সেই অনুবিধা আর হইবে ন! ! এখানে কাউন্সিল বিলের পরিচয় দেওয়া আবশুক । আমাদিগকে প্রতি বৎসর হোম চার্জেস্ দরুণ যে অর্থ বিলাতে দিতে হয় তাহার জন্য স্বর্ণ আবশ্বক। কিন্তু আমাদের মুদ্রা স্বর্ণমুদ্র নহে । বাজার হইতে স্বর্ণ ক্রয় করিয়া জাহাজে করিয়া বিলাতে পাঠাইবার হাঙ্গামা ও খরচ এড়াইবার জন্য নিম্নলিপিত পন্থ অবলম্বন করা হইত। বিলাতের ব্যবসায়ীকে ভারতীয় পণ্য ক্রয় করিবার জন্য মূল্য দিতে হুইবে ; পক্ষান্তরে ভারতসচিব ভারতবর্ষ হইতে ‘হোম চার্জেস বাবদ বহু অর্থ পাইবেন । সামান্য কিছু খরচ ও কমিশন ধরিয়া ভারতসচিব ইংরেজ ব্যবসায়ীর নিকট হইতে তাহার দেয় স্বর্ণমুদ্রা গ্রহণ করেন এবং তদ্বিনিময়ে তাহার বরাবর ভারতসরকারের উপর একটি ‘পে অর্ডার’ দেন। ইহারই নাম কাউন্সিল বিল বা ড্রাফটস্ ! ইংরেজ ব্যবসায়ী ইহা ভারতীয় পাওনাদারের নিকট পাঠাইয়া দেন এবং তিনি এখানকার ট্রেজারী হইতে উহা ভাঙাইয়া লয়েন। বিশেষ তৎপরতার