পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় পোষ্টাপিসের পিয়ল ও ভার মেয়ে VSEDß সকালে তুলে দিলি না যে কালী ? আজ হাট বার খেয়াল ফেলিয়া কালী তাহাকে পরিবেশন করিল, মাছের কালিয়া নেই? দিনকে দিন তোর কি হচ্ছে ! দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন হয়েছে বাবা।’ ‘তুমি উঠলে ? র ধতে রাধতে ক’বার যে ডেকেছি তার ঠিক নেই। কৈলাসের রাগ হইয়াছিল। সে আরও কিছু বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু হঠাৎ গত সন্ধ্যার কথা মনে পড়ায় এক নিমেষে গলিয়া জল হইয়া গেল । ‘রাধতে তোর যদি কষ্ট হয় তো বল তোর মাসীকে এনে রাখি । ‘রাধতে আবার কষ্ট কিসের ? মাসীর ধাক্কা পোয়াতে পারব না বাবু। কৈলাস খুশী হইয়া মনে মনে হাসিল। ভাবিল, বাপের সেবার ভারটা মাসীর উপরেও ছাড়িয়া দিতে কালীর বাধে । সে স্নান করিয়া আসিল । পিড়িতে বসিয়া বলিল, আন রে কালী, চটপট আৰু। দেখেছ শালার রোদুর ! প্রাণটা যাবে।" - কালী বলিল, ‘হুটোপুটি করলে চলবে না বাব, বসে খেতে হবে।’ ‘বসে খাওয়ার সময় গড়াচ্ছে ।" কিন্তু কালী যে কাণ্ড করিয়া রাখিয়াছে তাহাতে বসিয়া না খাইয়া তার উপায় রহিল না। ডাল আর আলুভাতে খাইয়াই নিত্য সে পোষ্টাপিসে যায়, আজ কালী নিমন্ত্রণ রাধিয়াছে। কখন সে এত সব করিল কে জানে। কৈলাস যা খাইতে ভালবাসে তার কোনটাই একরকম সে বাদ দেয় নাই। কলাপাতার বদলে আজ খাওয়ার ব্যবস্থা থালাতে, থালায় তরকারী সাজাইয়া কালী কুলাইম্ন উঠতে পারে নাই। "এ কি করেছিল রে । তুই কি ক্ষেপেছিল কালী ? 'একদিন কি ভাল খেতে নেই ? "এত কেউ খেতে পারে ? ‘না খাও তো আমার মাথা খাও।” কৈলাস প্রাণপণে খাইল। মেয়ের এতটুকু সখের জন্ত সে প্রাণ দিতে পারে, মেয়ে সাধ করিয়া রাধিয়াছে, সে খাইবে না ! উঠান রোদে ভরিয়া গিয়াছে, সেখানে ছায়া ফেলিয়া ‘বেশ হয়েছে। চমৎকার রে ধেছিস কালী । কালীর পায়ের মলের অ-রাজ বাড়িটাকে যেন জীবন্ত করিম রাথিয়াছে। সে একাকিনীই ঘরভরা। এ বাড়িতে তার অতগুলি ছেলেমেয়ে যে পট-পট করিয়া মরিয়াছিল, কৈলাসের কাছে আর তাহ শোকাবহু স্মৃতি নয়। এমনি ভাবে ভাত বাড়িয়া দিয়া, এমনি ভাবে মল বাজাইয়৷ ইাটিয়া কালী তার জীবনে শোকের চিহ্ন রাখে নাই, তার গৃহের আবহাওয়া হইতে মৃত্যুর স্তন্ধত মুছিয়া লইয়াছে। কটা ছেলেমেয়ে আর তার মরিয়াছে ? দু’টা তাও পাচ-সাত বছর বয়সে-একযুগ আগে। তবু, কালী না থাকিলে তাদের জন্যই কৈলাস শোকাতুর হইয়া থাকিত বই কি ! খাওয়ার পর বসিয়া বসিয়া কৈলাস খানিক তামাক টানিল। বেলার দিকে তার নজর ছিল না, ধীরেসুস্থে থাকী কোট কাধে ফেলিয়। সে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হইল। কালী ছল ছল চোখে বলিল, এই রঘুরে কি করে অদূর যাবে বাবা ? মেয়ের মমতায় মুগ্ধ হইয়া কৈলাস বলিল, “জনিস কালী, তোর মা ঠিক অমনি করে বলত। তারপর সাত্বনা দিয়৷ বলিল, “বিশ বছরের অভ্যেস, আর কি কষ্ট হয় ? বলে, রোদে ঘুরে ঘুরে মাথার চুলে ছাই এর রঙ ধরে গেল।’ ধূসর মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে কৈলাস বাহির হইয়া গেল। কালী বলিয়া দিল, ‘গাছের ছায়ায় জিরিয়ে জিরিয়ে যেও বাবা।’ মানুষের ছায়ায় যে জিরাইয়৷ জুড়াইয়া গেল, গাছের ছায়া দিয়া সে করিবে কি ? বিশ বছরের দুবেলা চেনা পথ কাঠফাট রোদে বোঝাই পেটে পথ চলিতে কৈলাসের মুখের হাসি কোন মতেই মুছিয়া গেল না। চেন মানুষকে দাড় করাইয়। সে কুশল জিজ্ঞাসা করিল, যে ডাকিল দুদণ্ড বসিয়া তার তামাক খাইল, মেয়ে আজ তাকে কি রকম গুরভোজন করাইয়াছে অনেক বাড়াইয়া তার বর্ণনা করিল। পোষ্টাপিসে পৌছানোর আগেই তার পেটে কেমন করিয়া মাংস সন্দেশ আর নাম ন-জানা একটা ক্ষীরের খাবার হাজির হইয় গেল ।