পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় একত্র হবার পর একজন একটু দূরে দাড়িয়ে মাথার উপর একটা লোহার শিক ধরে মৃদু গলায় স্থর করে কি গাইল । সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে 'স্থর করে সমস্বরে উত্তর এল। প্রথম লোকটি এবং তার সঙ্গে দুচারজন তারপর স্বরের সঙ্গে তালে তালে পা ফেলে ধীরে ধীরে নেচে অগ্রসর হতে লাগল, এদিকের দলও অস্ত্র আস্ফালন করে সমস্বরে ক্রমেই জোরে উত্তর দিতে থাকল। প্রথম দিকে সকলেই হাসিমূপে আমাদের দিকে মাঝে মাঝে তাকিয়ে এসব করছিল। ক্রমে তাল দ্রুততর হয়ে তাণ্ডবে পরিণত হল। তারপর নৰ্ত্তকদের মুখে উত্তেজন দেখ দিল, কণ্ঠস্বরও গম্ভীর ও কর্কশ হয়ে এল। তার পর দুইদল একত্র হবার পর যুদ্ধের নাচ আরম্ভ হল, সে একেবারে রৌদ্ররসের ব্যাপার। দীর্ঘ বলিষ্ঠ দেহ, সশস্ত্র যোদ্ধার প্রচণ্ড নৃত্য, অস্ত্র আস্ফালন ও ক্ৰৌঞ্চনিনাদ সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রের বিস্ফোরণ, মুখের ভাবে বিষম উত্তেজনার পরিচয়, শ্বেনচক্ষুর তীব্র দৃষ্টি । সে এক অপূৰ্ব্ব দৃশ্য। এদিকে অস্তঃপুর থেকে মেয়েদের সমন্বরে উলুধ্বনি আরম্ভ হল—এতদিনে বুলাম পুরনো চিঠি 8$3 উলুধ্বনির অর্থ কি । উলুধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে দলের মধ্যে কয়েকজন এতই উত্তেজিত হয়ে উঠল যে শেখ ও তার ভ মাঝে পড়ে তাদের টেনে এনে রক্তপাতের সম্ভাবনা বন্ধ করলেন । কিছুক্ষণ পরে ধপন সকলে অসম্ভব উত্তেজিত হয়ে উঠল তখন এ ব্যাপার বন্ধ করে দেওয়া হ’ল। আর একদিন নদীর ধারে শ্ৰীমুক্ত শাবেন্দারের সৌজন্তে বাগদাদের সূৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ নৰ্ত্তকীর নাচগান দেথা ও শোনা গেল । গালের সঙ্গে তালে ভালে নাচ ; নাচের গতি, দেহের চালন ইত্যাদি সমস্তই আমাদের বাঙ্গনাচ অপেক্ষ অনেক সতেজ, তবে সংযত মোটেই নয়। গানেও সেই উদাম ভাব, কিন্তু দুইয়ে সামঞ্জস্যের অভাব ছিল না। এদিকে কবি অসুস্থ হয়ে পড়লেন মৃতরাং তার সোজ দেশে ফিরে যাওয়াই ঠিক হ'ল। একদিন অতি ভোরে তিনি ও তার পুত্রবধু হিনায়দি এরোড্রোম থেকে বায়ুযানে কলিকাতার মুখে রওয়ানা হলেন । আমি এবং বন্ধুবর অমিয় চক্ৰবৰ্ত্তী রয়ে গেলাম এদেশের আতিথ্যের শেষ অংশ সম্ভোগ করার জন্য । পুরাণে চিঠি শ্রীপ্রমোদরঞ্জন সেন ভট্টাচাৰ্য্য-গৃহিণী হাতমুখ ঘুরাতীয় সক্রোধে গর্জন করিয়া উঠিলেন, “বয়েস তে তিন কুড়ি পার হয়ে গেল, বুদ্ধি তোমার কবে গজাবে শুনি ? সকাল বেল আমি কি তোমার কাছে মিথ্যে লাগাতে এসেচি ? জিজ্ঞেস ক’রেই দেথ না তোমার গুণধর ছেলের বেীকে ৷” স্ববৃহৎ মাংসল বপুখানি যখন দুলিতে দুলিতে ঘরের বাহির হইয়া গেল তখন ভট্টাচার্যের মুখ খুলিল। গৃহিণী সম্মুখে থাকিলে তাহার বীরত্ব বড় দেখা যায় না, কিন্তু এখন তিনিও সপ্তমে গল চড়াইয়া বলিলেন, “ছেলের বোঁকে জিজ্ঞেস করা-করি কি ? ছেলে যদি তাকে কলেজের খরচ । থেকে লুকিয়ে দুল গড়িয়ে পাঠিয়েই থাকে তে বোঁ কি করবে ? আর ওকালতিতে সে হতভাগা যে তিন-তিনবার ফেল করল সে-ও কি বৌমারই দোষ নাকি ?...ইঃ, বুদ্ধি শুধু আমারই নেই, বুড়ো শুধু আমিষ্ট হয়েছি, আর কারও পান ছেচে পেতে হয় না, আর কারওঁ চুল দিয়ে শোনের দড়ি ” হঠাৎ উচ্ছ্বাসে বাধা পড়িয়া গেল। গৃহিণী চিরকালের অভ্যাস মত ঘর হইতে বাহির হইয়। গিয়া থাকিলেও দরজার আড়ালেই অবস্থান করিতেছিলেন, অকস্মাৎ রুদ্রমূৰ্ত্তিতে দেখা দিলেন। -