পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধু ও চলিত ভাষা শ্রীরাজশেখর বসু কয়েক মাস পূৰ্ব্বে প্রবাসীতে শ্ৰীযুক্ত অঙ্গরচন্দ্র সরকার এবং শ্রযুক্ত যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি বাংলা অক্ষর সংস্কার সম্বন্ধে যে প্রবন্ধ লিখেছেন তার ফলে সাহিত্যাকুরাগীদের ভিতর একট চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এই চাঞ্চল্য স্বাস্থ্যের লক্ষণ। আর একটি সুসমাচার— স্বয়ং রবীন্দ্রাথ সংস্কারকার্য্যে উৎসাহী হয়েছেন। যোগেশচন্দ্র অক্ষর ও বানান সংস্কারের বহু চেষ্ট। এ যাবৎ করেছেন, কিন্তু তিনি অসহায়, তাই তার নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এখন আশা করা যায় রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আহুকুল্যে যদি ছাপার হরফের সংখ্যালাঘব ও কিছু কিছু রূপান্তর ধাৰ্য্য হয় এবং যদি বানান নিরূপিত হয়, তবে অক্ষরকার মুদ্রাকর গ্রন্থকার সকলেই বেশী বিতণ্ডা না করে তা মেনে নেবেন । শুনেছি কোনো এক বড় ছাপাখানার কৰ্ত্তা কেউ কেউ অপক্ষপাতে দুষ্ট রীতিই চালাচ্ছেন। পাঠকমণ্ডলী বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়েছেন—বাংলা সাহিত্যের ভাষা পূৰ্ব্বে এক রকম ছিল, এখন দু রকম হয়েছে। আমরা শিশুকাল থেকে বিদ্যালয়ে যে বাংলা শিপি ত৷ সাধু বাংল, সেজন্য তার রীতি সহজেই আমাদের আয়ত্ত হয়। খবরের কাগজে মাসিক পত্রিকায় অধিকাংশ পুস্তকে প্রধানত: এই ভাষাই দেখতে পাই । বহুকাল বহুপ্রচারের ফলে সাধুভাষ এদেশের সকল অঞ্চলে শিক্ষিতজনের অধিগম্য হয়েছে। কিন্তু চলিত ভাষা শেখবার স্থযোগ অতি অল্প। এর জন্য বিদ্যালয়ে কোনও সাহায্য পাওয়৷ যায় না, বহুপ্রচলিত সংবাদপত্রাদিতেও এর প্রয়োগ বিরল। এই তথাকথিত চলিত ভাষা সমগ্র বঙ্গের প্রচলিত ভাষা নয়, এ ভাষা ভাগীরথী-তীরবত্তী কয়েকটি জেলার কথিত ইতিমধ্যেই কিছু কিছু নূতন রকম টাইপ ফরমাশ দিয়েছেন। ভাষার মার্জিত রূপ। এই কারণে কোনো কোনো অঞ্চলের গতানুগত্যের প্রতি অন্ধ অনুরাগ আমাদের এখন কিছু কমেছে, অনুকূল লক্ষণও দেখা যাচ্ছে, স্বতরাং কিছুন-কিছু পরিবর্তন ঘটবেই। সংস্কারের এই সন্ধিক্ষণে একটা পুরাতন প্রসঙ্গ তুলতে চাই—সাধু ও চলিত ভাষা। কিছুকাল পূৰ্ব্বে সাধু ও চলিত ভাষা নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল এখন তা বড় একটা শোনা যায় না। ধারা সাধু অথবা চলিত ভাষার গোড়া, তারা নিজ নিজ নিষ্ঠ বজায় রেখেছেন, লোক চলিত ভাষা সহজে আয়ত্ত করতে পারে কিন্তু অন্য অঞ্চলের লোকের পক্ষে তা দুরূহ। যোগেশচন্দ্র-প্রবর্তিত দুটি পরিভাষা এষ্ট প্রবন্ধে প্রয়োগ করছি—মৌখিক ও লৈথিক । আমার একটা অষয়লব্ধ মৌখিক ভাষা আছে, তা রাঢ়ের বা পূর্ববঙ্গের বা অন্য অঞ্চলের। চেষ্টা করলে এই ভাষাকে অল্পাধিক বদলে কলকাতার মৌখিক ভাষার অনুরূপ করে নিতে পারি—