পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতি ও জীবন-সংগ্রামে তাহার মূল্য জীপ্রফুল্লচন্দ্র রায় অধুনা বাংলা দেশের শিক্ষা প্রায় অশিক্ষাতে পরিণত হইয়াছে। বস্তুভ এই তথাকথিত শিক্ষার মোহে পড়িয়া বাংলার যুবকগণ তাহাদের ভবিষ্যৎকে একেবারে নষ্ট করিয়া ফেলিতেছে। পুরাকাল হইতে স্কটল্যাণ্ড দেশে একপ্রকার প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলিত আছে। বাংলা দেশের দুই একটি জেলার সমান এই ক্ষুদ্রায়তন দেশে চারিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রামে গ্রামে শত শত পাঠশাল বিদ্যমান । এই কারণে, ঐ দেশের সামান্য শ্রমজীবী এবং চাষীর ছেলেরাও প্রাথমিক শিক্ষা হইতে বঞ্চিত হয় নাই। মনীষী কালাইলের জীবনচরিতপাঠে ইহা সম্যকরূপে উপলব্ধি করা যায়। বাল্যকাল হইতে বালকের প্রতি দৃষ্টি রাখিলে বোঝা যায় ধে, তাহার ভাবী উন্নতির আশা কিরূপ। একটি চলতি প্রবাদ আছে, “উঠন্তি মূলোর পত্তনেই বোঝা যায়” অর্থাৎ কোন ছেলের দৌড় কত দূর এবং কোনদিকে তাহার প্রতিভা খেলে তাহ বাল্যকাল হইতেই বুঝিতে পারা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে সৰ্ব্বনাশের মূল এই যে মা-বাপ ও অভিভাবকগণের ইচ্ছ—তাহাদের প্রত্যেক ছেলেই ইংরেজী বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিবে এবং প্রবেশিক পরীক্ষার পর বি-এ, বি.এসসি, এমৃ এ, এমূ-এসসি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত হইবে। তাছাদের ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে না পারিলে ভাবী জীবনযাত্রার পথ রুদ্ধ হইয়া ধাইবে। এইজন্ত জোরজবরদস্তি করিয়া প্রত্যেক ছেলেকেই পাস করান চাই এবং যদি দেখেন যে, কোন ছেলে ইংরেজীতে, সংস্কৃতে বা গণিতে একটু পশ্চাৎপদ আমনি প্রত্যেক বিষয়ের জন্য একটি করিয়া প্রাইভেট টিউটর बाषिब cन७ब्र श्, अयश बनि अवश नक्कल थाटक । ধেন, জীবনের একমাত্র উদেণ্ড ডিগ্ৰী’ ও ‘নকরী লাভ। আমার শৈশবাবস্থা হইতে এই ছড়াটি গুনিয়া আসিতেছি।

  • লেখাপড়া করে যে-ই গাড়ী ঘোড়া চড়ে সে-ই”

আমার স্মরণ আছে, প্রায় বাট বৎসর পূর্বে আমার পরলোকগত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা প্রায়ই বলিতেন "পাশায় অধ্যয়নমূ”। সেই সময় অন্ততঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ পাইলেই একটি চাৰুরি মিলিত, না-হয় ডাক্তারী ও ওকালতী দ্বারা রোজগারের পথ পরিষ্কার হুইত, সেইজন্তই এই সময় ডিগ্রির উপর একটি কৃত্রিম মূল্য নির্ধারিত হইয়াছিল। বিশেষতঃ যে-ছেলে পরীক্ষায় যত উচ্চ স্থান অধিকার করিত তাহার তত মোট মাহিনার চাকুরি মিলিত । জলপানী-পাওয়া ছেলেদের আরও আদর, এই রকম পাস-করা ছেলেদের হাতে কস্ত সম্প্রদান করিবার জন্য সমাজের বড় বড় লোকও লালায়িত হুইত এবং বিবাহের বাজারে তাহারা নিলাম হইয়া সৰ্ব্বোচ্চ দরে বিক্রীত হইত। এই স্থানে একটি কথা অপ্রাসঙ্গিক হইলেণ্ড না-বলিয়া থাকিতে পারিলাম না। বরিশালের প্রথিতনামা অশ্বিনীবাবু বলিতেন, “আমি যদি জানিতাম ষে এই ব্ৰজমোহন কলেজ স্থাপন করাতে অবিবাহিত কন্যার পিতার রক্ত শোষণ করিবার কল স্বষ্টি হইয়াছে, তাহ হইলে কখনও এই দুক্ষৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হইতাম না।” আমাদের বালকদের এই একমুখে শিক্ষাই যত রকম অনর্থ স্বষ্টি করিতেছে। মনে করুন, এক বাপের চার ছেলে, তাহাদের মধ্যে যে-ছেলের বিদ্যাশিক্ষার প্রতি ঐকান্তিক অনুরাগ আছে তাহাকেই বাছিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করা উচিত। কিন্তু প্রত্যেক ছেলেকেই ষে উপাধিধারী করিডে হইবে এরূপ অদ্ভুত বা উৎকট রীতি পৃথিবীতে আর কোথাও দেখা যায় না। ছেলেদের পিতামাতা ও অভিভাবকগণ তাহাদের অজ্ঞাতসারে যে কি সৰ্ব্বনাশের প্রশ্রয় দিতেছেন তাহা বলা যায় না। আজ শতাধিক বর্ষ যাবৎ অর্থাৎ হিন্দু কলেজ সংস্থাপনের পর হইতে আমাদের সমাজে এমন একটি হাওয়া প্রবাহিত হইতেছে যে, ছেলেরা ভাবে পাল না করিতে পারা একটি অপরাধ। কলিকাতার অনেক পাড়ায় যেখানে খুব ঘন বসতি এবং স্বৰ্য্যাস্তের পর এক ছাদ হইতে অপর