পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 & প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩০ [ ૨૭ન છtsા, રક્ષ શાહ বাংলা ছন্দ ও সঙ্গীত গানের ছন্দের সঙ্গে কাব্যের ছন্দের সাদৃশ্য কোথায় ও পার্থক্য কোথায় সে-বিষয়ে একটু আলোচনা করব । সকলেই জানেন যে যদিও কাব্য ও সঙ্গীতের মধ্যে ভাবগ, পার্থক্য অপরিসীম, তথাপি তাদের মধ্যে কোথাও একটু যোগ যেন রয়ে গেছে ; কাব্য-জগতের দিক্‌চক্রবাল ধেখiনটিতে নিজেকে নিজে অতিক্রম করে গিয়ে অনন্তকে স্পর্শ করেছে ঠিক সেখানটিতেই সঙ্গীত-লোক স্বরু হয়ে অনন্ত ভাব-জগতে প্রসারিত হয়ে গেছে। কাব্যের শক্তির ঘেথানটিতে শেষ সীমা, সেখানটিতেই সে সঙ্গীত-রাজ্যের পরিধিতে সংলগ্ন হয়ে আছে, কিন্তু কিছুতেই সে ওই পরিধির ভিতরে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে পারে না । কাব্যশক্তির লক্ষণই হচ্ছে এই যে কাব্য প্রধানত বাকু ও অর্থের সাহায্যে প্রথমে মানসলোকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার পরে ওই মনোজগতের অন্তর্গত ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিজাত অনস্তরূপের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে’ রূপের অতীত অসীম সৌন্দৰ্য্যলোকের দিকে ইঙ্গিত করতে থাকে ; সেখানটিতেই আমাদের মন কাব্যের বুচনকে অতিক্রম করে গিয়ে কাব্যের অনিৰ্ব্বচনীয়তাকে স্পর্শ করে অগাধ আনন্দের মধ্যে মগ্ন হয়ে সার্থকতা লাভ করে, আর সেখানটিতেই কাব্যের ধ্বনি এবং ছন্দও হিসাবের রাজ্যকে অতিক্রম করে” কেবলি সঙ্গীতের স্বর ও লয়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার তীব্র অগ্রহে ও আকুলতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে । পক্ষাস্তরে সঙ্গীত-শক্তির আত্মপ্রকাশের প্রক্রিয় এর প্রায় সম্পূর্ণ বিপরীত । সঙ্গীত প্রথমেই কথাকে অতিক্রম করে’ গিয়ে মনকে অনিৰ্ব্বচনীয়তার নিবিড় অনিন্দস্পর্শে সাফল্য দান করে ; পরে কথার ও ভাবের রাজ্যসীমায় এসে পৌছে কথা ও ভাবকে অনিৰ্ব্বচনীয়তা ও অনন্তের মহিমায় স্পন্দিত করে তোলে এবং কথাকে চিরন্তনতা ও অসীমের দিকে ছুটিয়ে নিয়ে গিয়ে তাকে অমরত দান করে । স্বতরাং দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কাব্যের গতি বহু কথা ভাব এবং রূপের থেকে অনন্ত অরূপ অনিৰ্ব্বচনীয়তার আনন্দ-জগতের দিকে ; কাব্যের গতি সীম ও বহুত্বের জগং থেকে অনন্ত অনিৰ্ব্বচনীয়তার দিকে আরোহণ। কিন্তু সঙ্গীত অনন্ত অনিৰ্ব্বচনীয়তার আনন্দ-জগং থেকে সীমা ও রূপের জগৎকে উৰ্দ্ধদিকে আকর্ষণ করতে থাকে ; সঙ্গীতের গতি কথা ও রূপের জগৎকে অরূপ অনিৰ্ব্বচনীয়তার দিকে উৎকর্ষণ। কাজেই কাব্য চায় সঙ্গীতের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে সার্থকতা লাভ করতে, আর সঙ্গীত চায় কাব্যকে আপন অস্তরের অনিৰ্ব্বচনীয় আনন্দে মণ্ডিত করে সার্থকতা দান করতে । এই নিগুঢ় সত্যটিকে আপনার কবিচিত্তে উপলব্ধি করে’ই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “মুর আপনারে ধরা দিতে চাহে ছন্দে, ছন্দ ফিরিয়া ছুটে যেতে চায় মুরে।” কিন্তু সৌন্দৰ্য্যতত্ত্বের দিক থেকে কাব্য ও সঙ্গীতের অন্তগূঢ় সাদৃশ্যের আলোচনা আমাদের আলোচ্য বিষয়ের বহিভূত । আমাদের উদেশ্ব বাহ গঠনের দিক্‌ থেকে কাব্য ও সঙ্গীতের রচনা-প্রণালীর সাদৃশু ও পার্থক্যের আলোচনা করা ; কাব্যের ছন্দ ও গানের ছন্দ কোন ঐক্য-ভূমিতে পরস্পরের সাযুজ্য লাভ করেছে আমরা সেইটেই দেখতে চেষ্টা করব। প্রথমেই মনে রাখতে হবে গানেই হোক, বা কাব্যেই হোক, ছন্দ । কোনোটারই মুখ্য উদ্দেশু নয় ; গানে এবং কাব্যে উভয়েতেই ছন্দ গৌণ, মুখ্য-উদ্দেশ্বরূপ সৌন্দৰ্য্য-স্থষ্টির সে সহায়ক বা বাহন মাত্র। কিন্তু যেহেতু কাব্য ও সঙ্গীত কোনো একটি সীমারেখায় পরস্পরের সহিত সংলগ্ন হয়ে থাকলেও তারা স্বরূপত সৌন্দর্য্য-লোকের দুটো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হয়ে গেছে, সেজন্তে তাদের বাহন ছন্দ গুলোও কোনো একটি সামান্য ক্ষেত্রে পরস্পর মিলিত হয়েও দুটো বিভিন্ন পথেই আপন আপন উদ্দেশু সিদ্ধ করছে। কাব্যে ছন্দের উদ্দেশু কাব্যের