পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88७ প্রবাসী-শ্রাবণ ১৩৩০ [ ২৩শ ভাগ, ১ম ৰও রবীন্দ্রনাথ . স্বজনের আদিযুগে অতীন্দ্রিয় অমৃত-লোকের যে উদার উৎসমুখে বিশ্বভুর জমাট শোকের কঠিন বেদনাভার, আনন্দের চঞ্চল ধারায় প্রেমের পরশ লভি, টুটি রুদ্ধ অন্তর-কারায় গলি গলি’ পড়িল ঝরিয়া, তোমার কবিতা-বধু হৃদয়ের পাত্রে তার, তাহারি কি তৃষাহরা মধু রাখিল সঞ্চিত করি ? নিল তার চরণ-নুপুর বাধিয়া লীলার ভরে তারি চলকলনৃত্যস্থর । কী গীতি রচিলে কবি ! একদিন বিশ্বস্বচনায় বেজেছিল যে রাগিণী গ্রহে গ্রহে মিড়ে মূর্ছনায় আবেগে বেপথুমতী, মূৰ্ত্তি ধরি তারি গুঢ় বাণী, তোমার চরণতলে দাড়াইল জুড়ি দুই পাণি ; কী ভাষা লিখিলে কবি ! কী আশার স্বধা-সঞ্জীবনী তাহাদের বহলে কঙ্কাল-মাঝে, আচারের শনি অন্তরে বাহিরে করি যাহাদের চিরদিন-মুত রেখেছিল ত্রিভুবনে উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত, ধিক্কত ! বুকে তার ভাবক্ষুধা, কণ্ঠে তার রসের পিপাসা, ফিরেছিল স্বারে স্বারে দীন হীন কাঙালিনী ভাষ। স্তাবকের চাটুবাক্যে ছিল যাঁরা বাণীর সভায় শূন্তগর্ভ অহংকারে স্ফীতবক্ষে সঙ্কীর্ণ হিয়ায় তাহীদের জনে জনে নিশিদিন সাধিয়া কাতরে উন্মুখ আশার ভরে ; পটু নাই তবু কারে ঘরে হেন স্বধা একবিন্দু হবে স্নিগ্ধ পরশে যাহার দীর্ঘ অনশনক্লিষ্ট শুষ্ক তপ্ত অস্তর তাহার। জালাময়ী তৃষা লয়ে জানি না সে কোন শুভক্ষণে তোমার সহায় মাগি দীপ্তিহীন মলিন নয়নে দাড়াইল অভাগিনী ; চুমি’ শুধু ব্যাকুল অধবে তব ভাবপীযুষের মনোমদ মধুগন্ধভরে স্ববাসিত শুভ্র পাত্রখানি, নিঃশেষে মিটিল স্বখে আজন্মের বুভূক্ষ তাহার ; উঠিল উথলি বুকে সৌভাগ্যের নব ক্ষীরধারা ; বিষাদের হিমরাতে হরবের হেমসূর্য্য দিল দেখা মহামহিমাতে । মুদিয়া আবেশভরে অস্বাদিত পুরুকে নয়ন বার বার করি পান তারি স্বচ্ছ সোহগ-কিরণ জীবনের মব বসন্তের, প্রেমের মদির তানে মেতেছিল প্রীতি-পার্থী নবীনের চিরজয়গানে, তারি কান্ত আলোকের হিল্পোলিত রভস-পরশে লালসা-বাড়ানো তারি প্রতি দীর্ঘচুম্বনের রসে দিনে দিনে প্রাণপদ্ম উঠিয়াছে বিকশি’ তাহার, অনন্ত-ঐশ্বৰ্য্যময়ী—আজি সে যে রূপসীর সার । সেই বিশ্ব-আলোকরা সব-হর সব-ভরা রবি উজলিয়া দেশান্তর ফেলিল যে খণ্ড প্রতিচ্ছবি আভাসে ইঙ্গিতে তারি নিখিলের নরনারী-হিয়া বক্ষোরক্তে লভি দোলা, যাদুস্পর্শে উঠে সচকিয়া । শুধু যেই জীর্ণপ্রাণ শীর্ণশক্তি অৰ্ব্বাচীন-দল অর্থহীন ব্যর্থমন্ত্রে স্বজি নিত্য নব ধৰ্ম্মছল

  • সে অচল-আয়তনে চাহিছে রাণিতে, আয়ু যার

অস্তমিত, তাহদের ঘুচিল ন নিবিড় আঁধার । শুনেছিছু এতদিন গ্রাসে রাহু শশাঙ্ক-রবিরে, আবরিয়া করজাল ভরে ধরা সহসা তিমিরে, ভূ তারে করে ত্যাগ, কতু ধরে অসহ আগ্রহে সে বুঝি কন্দুক সম গণে মনে গ্রহে, উপগ্রহে ; আজি বুঝিয়াছি সত্য, জানিয়াছি মিথ্যা জনরব দেখেছি আপন চক্ষে রবিগ্রস্ত জ্যোতিষ্কেরা সব, মুক্তির নাহিক পথ, চারিদিকে ঝলে অনিবার তারি বিশ্ববিজয়িনী উন্মাদিনী শিখা প্রতিভার । একা তুমি ঘুচায়েছ স্বদেশের বহু অপবাদ, এক তুমি হরিয়াছ মরমের দৈন্ত অবসাদ, চির-সবুজের মন্ত্র দেছ তুমি আমাদের কাণে, চির-রসধারা তুমি বহাঁয়েছ মরুভূ-পরাণে, বাঙলার বহু লজ্জা এক তুমি করেছ বারণ, বাঙালীর এত গৰ্ব্ব—এক তুমি তাহারি কারণ। নিখিল-মিলন-কেন্দ্র, প্রেম লেখা ললাটে তোমার, ভক্তের প্রণাম দেব ! লহ স্নেহে, লহ বার বার । শ্ৰী গিরিজাকুমার বস্থ