পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ல் সংখ্যা.] প্রাচীন ভারতের অলঙ্কার t:్చలి প্রাচীন ভারতের অলঙ্কার মনুষ্যজাতির মধ্যে একটা স্বাভাবিকী ইচ্ছ। আছে, সেই ইচ্ছাটি হইতেছে এই—কিরূপে আমাদিগকে ভাল দেখাইবে বা কিরূপে আমাদিগকে ভাল শুনাইবে । এই ইচ্ছ। কেবল মানুষের মধুে সীমাবদ্ধ নহে-পশুপক্ষীগণের মধ্যেও এই ইচ্ছা বলবতী দেখা যায়। স্বতরাং যাহা পশুপক্ষীর মধ্যে বলবতী, তাহা যে আমাদের মধ্যে আরও অধিক পরিমাণে বলবতী হইবে, তাহাতে আর বিচিত্র কি ? মনুষ্যজাতির এই স্বাভাবিকী ইচ্ছাকে কাৰ্য্যে পরিণত করিবার জন্ত আমরা সকলেই চেষ্টা করি । অলঙ্কারই এই চেষ্টার মূল অলঙ্কার জিনিষটি প্রাচীনকাল হইতেই প্রচলিত হইয়া আদিতেছে, তাহা বোধ হয় সকলেই অবগত আছেন। রামায়ণ-মহাভারতের যুগ হইতেই আমাদের দেশে স্বর্ণকার ও মণিকারের কথার উল্লেখ আছে। এমন কি প্রাচীন ঋগ্‌বেদের মধ্যেও দেবতাদের অলঙ্কারপ্রিয়তার উল্লেখ পাওয়া যায় । বরুণ-দেবতাকে উজ্জল সুবর্ণ অলঙ্কারে ভূষিত দেখিতে পাই। মরুৎগণের মধ্যেও নানা অলঙ্কারের সমাবেশ দেখি । কাহারও বক্ষঃস্থল হারে সুশোভিত । আবার কোনও স্থানে স্থবৰ্ণময় শিরস্ত্রীণের উল্লেখ দেখা যায় । অনুসন্ধান করিলে এরূপ ভূরি ভুরি প্রমাণ পাওয়া যায় । সুতরাং প্রাচীনকাল হইতেই ভারতবর্ষে নানাপ্রকার অলঙ্কারের নাম ও বিবরণ পাওয়া যায়। এস্থলে কতকগুলি অলঙ্কারের নাম এবং সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করিতেছি। মস্তক – মাথার অলঙ্কারের মধ্যে স্ৰক, বীপ, হংসতিলক, ললামক, মুকুট, গর্ভক, বালপাখ্যা, পারিতথ্য বিশেষরূপ উল্লেখযোগ্য । স্ত্রক-অলঙ্কার ও ঝাপ কবরীতে (খোপায় ) পরিধান করা হইত। হংসতিলক অনেকটা অশ্বখ-পাতার মত । উহা সীথিতে পরিধান করিত । ললামক মস্তকের সম্মুখভাগে পরিধান করা হইত। গর্তক অলঙ্কার অক-জাতীয়ের স্কায়। বালপাশু বোধ হয় সঁথিতে পরিত। পারিতথ্যার এক নাম সীথি। এইসমুদয় অলঙ্কারের মধ্যে মুকুট এবং পারিতথ্য বা সীথি এখনও আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। কণ্ঠালঙ্কার—কণ্ঠালঙ্কারের মধ্যে একাবলী, বক্ষঃস্বত্রিকা, প্রালম্বিকা, বর্ণসার, গুচ্ছ, হার প্রভৃতি গলদেশ হইতে বিলম্বিত হইত। প্রাচীন-কালীন কণ্ঠালঙ্কারের মধ্যে পদকই সবিশেষ উল্লেখযোগ্য । কর্ণালঙ্কার—প্রাচীন কালে যে-সকল কর্ণালঙ্কার ব্যবহৃত হইত, বোধ হয় বঙ্গদুেশে সেগুলির প্রচলন নাই। কেননা, চলিত থাকিলে মণিকারদের মূল্যতালিকায় ঐসমুদয় অলঙ্কারের নাম দুষ্ট হইত। প্রাচীনকালের কর্ণলঙ্কারের মধ্যে ত্রিরাজিক, কুণ্ডল, মুক্তাকণ্টক, বজ্রগর্ত, দ্বিরাজিক, স্বর্ণমধ্য—এই কয়টি সমধিক উল্লেখযোগ্য । উহাদের মধ্যে ২১টি এখনও বিহার প্রদেশে ব্যবহৃত হইয়া থাকে শুনিতে পাই । বাহুর অলঙ্কার—বাহুর অলঙ্কারের মধ্যে এই কয়েকটি প্রধান—অঙ্গদ, বলয়, চুড়, কেয়ূর, রতনচুড়, কণ্টক, পঞ্চক। ইদানীং আমাদের দেশে বলয়-ব্যবহার ক্রমশঃ রহিত হইতেছে । কিন্তু কেয়ুর বা বাজুর ব্যবহার এখনও কতক কতক স্থানে প্রচলিত আছে। বর্তমান রতনচুড়ের ব্যবহারও ক্রমে ক্রমে উঠিয়া যাইতেছে ? অঙ্গুলীর অলঙ্কার—অঙ্গুলীর অলঙ্কারের মধ্যে অঙ্গুরী বা আংটি আবহমানকাল হইতে চলিত আছে। নাসিকার অলঙ্কার—নাসিকার অলঙ্কারের মধ্যে কুবর্ণের নর্থ ও তাড় ব্যবহৃত হইত। আজকাল তাড়ের প্রচলন নাই। নথের চলনও বিরল। কটিবন্ধ - কটিবন্ধের অলঙ্কারের মধ্যে কাঞ্চীদাম, . মেখলা, বরান, কলাপ প্রভৃতি প্রধান । পায়ের অলঙ্কার—পায়ের অলঙ্কার-শ্রেণীর মধ্যে কিঙ্কিণী, পাদচুড়, পাদপদ্ম, পাদকণ্টকই উল্লেখযোগ্য । ইহাদের মধ্যে কিঙ্কিণী ও পাদপদ্ম যে সমধিক প্রসিদ্ধ, তাহা বলাই নিম্প্রয়োজন। কিঙ্কিণীর রুণুঝুণু মধুর শৰে কে না বিমুগ্ধ হন ? পাদপদ্মও তদ্রুপ । - উপরি উক্ত অলঙ্কার ব্যতিরেকে আরও কয়েকটি অলঙ্কারের প্রচলন দেখিতে পাই। গুলফের উপরে গোটামল, কটিদেশে ঘাঘরের উপরে ঘণ্টা, বুকে কর্ণাটী কাচুলী, দুই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে দর্পণের ছবি, পদচাকির উপরে বউলীই উল্লেখযোগ্য । শ্রী রমেশচন্দ্র চক্রবর্তী