পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

هیلا سوا ততই সভ্যতার যথার্থ স্বরূপ পরিস্ফুট হয়। ধর্মের নামে, কৰ্ম্মের নামে, বৈষয়িকতার নামে, স্বাদেশিকতার নামে, যেখানেই মানুষ মানবলোকে ভেদ হুষ্টি করেচে সেইখানেই দুৰ্গতির কারণ গোচরে অগোচরে বল পেতে থাকে । সেখানে মানব আপন মানবধৰ্ম্মকে আঘাত করে, সেই হচ্চে আত্মঘাতের প্রকৃষ্ট পস্থা । ইতিহাসে যুগে যুগে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে । সভ্যতাবিলাসের কারণ সন্ধান করলে একটি মাত্র কারণ পাওয়া যায় সে হচ্চে মানব সম্বন্ধের বিকৃতি বা ব্যাঘাত । যারা ক্ষমতাশালী ও যার অক্ষম তাদের মধ্যেকার ব্যবধান প্রশস্ত হয়ে সেখানে সামাজিক সামঞ্জস্য নষ্ট হয়েচে । সেখানে প্রভুর দলে, দাসের দলে, ভোগীর দলে, অভূক্তের দলে সমাজকে দ্বিখণ্ডিত ক’রে সমাজদেহে প্রাণ প্রবাহের সঞ্চরণকে অবরুদ্ধ করেচে —তাতে এক অঙ্গের অতিপুষ্টি এবং অন্য অঙ্গের অতিশীর্ণতায় রোগের হষ্টি হয়েচে । পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই এই ছিদ্র দিয়ে আজ যমের চর আনাগোনা করচে । আমাদের দেশে তার প্রবেশপথ অন্ত দেশের চেয়ে আরও যেন অবারিত । এই দুর্ঘটনা সম্প্রতি ঘটেচে। একদিন আমাদের দেশে পল্লীসমাজ সজীব ছিল। এই সমাজের ভিতর দিয়েই ছিল সমস্ত দেশের যোগবন্ধন, আমাদের সমস্ত শিক্ষাদীক্ষা ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের প্রবাহ পল্লীতে পল্লীতে ছিল সঞ্চারিত। দেশের বিরাট চিত্ত পল্লীতে পল্লীতে প্রসারিত হয়ে আশ্রয় পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে। একথা সত্য যে, আধুনিক অনেক জ্ঞান বিজ্ঞান স্থযোগ স্থবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলুম। তখন আমাদের চেষ্টার পরিধি ছিল সঙ্গীর্ণ, বৈচিত্র্য ছিল স্বল্প, জীবনযাত্রার আয়োজনে উপকরণে অভাব ছিল বিস্তর। কিন্তু সামাজিক প্রাণক্রিয়ার যোগ ছিল অবিচ্ছিন্ন। এখন তা নেই। নদীতে স্রোত যখন বহমান থাকে তখন সেই স্রোতের দ্বারাই এপারে ওপারে এদেশে ওদেশে আনাগোনা দেন। পাওনার যোগ রক্ষা হয় । জল যখন শুকিয়ে যায় তখন এই নদীরই খাত বিষম বিঘ্ন হয়ে ওঠে । তখন এক কালের পথটাই হয় অন্তকালের অপথ । বর্তমানে তাই ঘটেচে । যাদের আমরা ভদ্রসাধারণ নাম দিয়ে থাকি তারা প্রবাসী-- ফাল্গুন, ১৩৩৭ ৩•শ ভাগ, ২য় খণ্ড যে বিদ্যালাভ করে, তাদের যা আকাঙ্ক্ষা ও সাধনা, তার যে-সব স্থযোগ সুবিধা ভোগ ক’রে থাকে সে সব হ’ল মরা নদীর শুষ্ক গহবরের এক পাড়িতে, তার অপর পাড়ির সঙ্গে জ্ঞান বিশ্বাস আচার অভ্যাস দৈনিক জীবনযাত্রায় দুস্তর দূরত্ব। গ্রামের লোকের না আছে বিদ্যা, ন৷ আছে আরোগ্য, না আছে সম্পদ, না আছে অম্লবঙ্গ । ওদিকে যারা কলেজে পড়ে, ওকালতী করে, ডাক্তার করে, ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেয়, তারা রয়েছে দ্বীপের মধ্যে, চারদিকে অতলস্পর্শ বিচ্ছেদ । যে স্বায়ুজালের যোগে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বেদন দেহের মৰ্ম্মস্থানে পৌঁছয়, সমস্ত দেহের আত্মবোধ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বোধের সম্মিলনে সম্পূর্ণ হয়, তার মধ্যে যদি বিচ্ছিন্নত ঘটে তবে ত মরণদশ । সেই দশা আমাদের সমাজে । দেশকে মুক্তিদান করবার জন্যে আজ র্যার উৎকট অধ্যবসায়ে প্রবৃত্ত এমন সব লোকের দেখা যায় সমাজের মধ্যে গুরুতর ভেদ যেখানে, যেখানে পক্ষাঘাতের লক্ষণ, সেখানে তাদের দৃষ্টিই পড়ে না। থেকে থেকে বলে ওঠেন কিছু করা চাই, কি স্তু কণ্ঠের সঙ্গে সঙ্গে হাত এগোয় না । দেশ সম্বন্ধে আমাদের যে উদ্যোগ তার থেকে দেশের লোক বাদ পড়ে । এট। আমাদের এতই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, এর বিপুল বিড়ম্বন সম্বন্ধে আমাদের বোধ নেই। একটা তার দৃষ্টান্ত দিই। মধ্যে ও আমাদের দেশে আধুনিক শিক্ষণবিধি ব’লে একটা পদার্থের আবির্ভাব হয়েচে । তারই নামে স্কুল কলেজ ব্যাঙের ছাতার মত ইতস্তত মাথা তুলে উঠেছে । এমনভাবে এটা তৈরি যে, এর আলো কলেজি মণ্ডলের বাইরে অতি অল্পই পৌছয়- সূর্য্যের আলো চাদের আলোয় পরিণত হয় যতটুকু বিকীর্ণ হয় তার চেয়েও কম। বিদেশী ভাষার স্থল বেড়া তার চারদিকে । মাতৃভাষার যোগে শিক্ষাবিস্তার সম্বন্ধে যখন চিন্তা করি সে-চিস্তার সাহস অতি অল্প। সে যেন অস্তঃপুরিকা বধুর মতই ভীরু । আঙ্গিন পর্য্যন্তই তার অধিকার, তার বাইরে চিবুক পেরিয়ে তার ঘোমটা নেমে পড়ে। মাতৃভাষার আমল প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যেই, অর্থাৎ সে কেবল শিশুশিক্ষারই যোগ্য—অর্থাৎ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনে