পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] অপরাজিত Ե-(t বাক্সট ! কাপড়ে, কাগজে বইয়ে হাঙুল পাগুল—আচ্ছা এত বাজে কাগজ কি হবে দাদা ? ফেলে দেবো ?... অপু বলিয়া উঠিল—ই ই-না না-ওসব ফেলো না । সে আজ দুই তিন বছরের চিঠি, নানা সময়ে নানা কথা লেখা কাগজের টুকুর, সব জমাইয়া রাথিয়াছে। অনেক স্মৃতি জড়ানো সেগুলির সঙ্গে, পুরাতন সময়কে আবার ফিরাইয়া আনে—সেগুলি প্ৰাণ ধরিয়া অপু ফেলিয়া দিতে পারে না। কবে কোন কালে তাহার দিদি দুর্গ নিশ্চিন্দিপুরে থাকিতে আদর করিয়া তাহাকে কোন বন হইতে একটা পার্থীর বাসা আনিয়া দিয়াছিল, কত কালের কথা-বাসাটা সে আজও বাক্সে রাখিয়৷ দিয়াছে - বাবার হাতের লেখা একখানা কাগজ—আরও কত কি । নিৰ্ম্মলা বলিল—এ কি আপনার মোটে দুখান কাপড়, আর জাম নেই ? অপু হাসিয়া বলিল—পয়সাই নেই হাতে, তা জামা ! নৈলে ইচ্ছে তো আছে স্বকুমারের মত একটা জামা করাবো—ওতে আমাকে যা মানায়—ওই রংটাতে নিৰ্ম্মল ঘাড় নাড়িয়া বলিল—থাক্ থাকৃ, আর বাহাদুরী কৰ্ত্তে হবে না। এই রইল চাবী, এখুনি হারিয়ে ফেলবেন না যেন আবার ! আমি মিশির ঠাকুরকে বলে দিয়েচি, এখুনি লুচি তেজে আনবে—দাড়ান, দেখি গিয়ে আপনার গাড়ীর কত দেরী ?... —এখনও ঘণ্টা দুই। মা’র সঙ্গে দেখা করে যাবে, আবার হর তো কত দিন পরে আসবো তার ঠিক কি ?... —আসবেনই না। আপনাকে আমি বুঝিনি ভাবছেন ?...এখান থেকে চলে গেলে আপনি আবার এ-মুখো হবেন ?—ককৃথনো না । অপু কি প্রতিবাদ করিতে গেল, নিৰ্ম্মলা বাধা দিয়া . বলিল—সে আমি জানি। এই দু বছর আপনাকে দেখে আসূচি দাদা, আমার বুঝতে বাকী নেই, আপনার শরীরে মায়া দয়া কম। —কম ?..বারে- এ তো তুমি—আমি বুঝি— তাড়া না দিলে সে কি আর— নিৰ্ম্মলার মা যাইবার সময় চোখের জল ফেলিলেন। নিৰ্ম্মলা বাড়ীর মধ্যে কি কাজে ব্যস্ত ছিল, মায়ের বহু ডাকাডাকিতেও সে কাজ ফেলিয়া বাহিরে আসিতে পারিল না। অপু ষ্টেশনের পথে যাইতে যাইতে ভাবিল —নিৰ্ম্মলা আচ্ছা তো ? একবার বার হোল না যাবার সময়ট দেখা হ’ত-আচ্ছ খামখেয়ালি ! যখন তখন রেলগাড়ীতে চড়াটা ঘটে না বলিয়াই রেলে চড়িলেই তাহার একটা অপূৰ্ব্ব আনন্দ হয় । ছোট্ট তোরঙ্গ ও বিছানার মোট লইয়া জানালার ধারে বসিয়া চাহিয়া দেখিতে দেখিতে কত কথা মনে আসিতেছিল । এখন সে কত বড় হইয়াছে—এক এক ট্রেনে চড়িয় বেড়াইতেছে। তার পর এমনি একদিন হয়ত নীল নদের । তীরে, ক্লিওপেট্রার দেশে, এক জ্যোৎস্না রাতে, শত শত প্রাচীন সমাধির বুকের উপর দিয়া অজানা সে যাত্ৰা ! ষ্টেশনে নামিয়া বাড়ী যাইবার পথে একটা গাছতলা দিয়া যাইতে যাইতে মাঝে মাঝে কেমন একটা স্বগন্ধ— মাটির, ঝরা পাতার, কোন ফুলের। ফাগুনের তপ্ত রৌদ্র গাছে গাছে পাতা ঝরাইয়া দিতেছে, মাঠের ধারে অনেক গাছে নতুন পাতা গজাইয়াছে,—পলাশের ডালে রাঙা রাঙা নতুন ফোটা ফুল যেন আরতির পঞ্চপ্রদীপের উৰ্দ্ধমুখী শিখার মত জলিতেছে। অপুর মন যেন আনন্দে শিহরিয়া ওঠে—যদিও সে ট্রেনে আজ সারা পথ শুধু নিৰ্ম্মলা আর দেবব্রতের কথা ভাবিয়াছে।--কখনো শুধুই নিৰ্ম্মল, কখনো শুধুই দেবব্রত...তাহার স্কুল-জীবনে এই দুইটি বন্ধু যতটা তাহার প্রাণের কাছাকাছি আসিয়াছিল, অতটা নিকটে অমন ভাবে আর কেহ আসিতে পারে নাই, তবুও তাহার মনে হয় আজকার আনন্দের সঙ্গে নিৰ্ম্মলার সম্পর্ক নাই, দেবব্রতের নাই-- আছে তার নিশ্চিন্দিপুরের বাল্যজীবনের স্নিগ্ধস্পর্শ আর বহুদূর বিলুপিত, রহস্যময় কোন অনন্তের ইঙ্গিত-লে মনে বালক হইলেও একথা বোঝে। 制 প্রথম যৌবনের স্বরু, বয়ঃসন্ধিকালের রূপ ফাটিয়া পড়িতেছে,—এই ছায়া, বউলের গন্ধ, বনাস্তরে অবসন্ন