পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্য J আমাদের কথা ᎼᎼ☾ আমাকে বড়ই স্নেহ ভক্তি করিত। তাহার একটি কন্যা এবং পুত্র হইবার কয়েক বছর পর হইতেই শরীর অসুস্থ হইয়া পড়ায় শেষকালে ক্ষয়কাশ রোগে তাহার মৃত্যু ঘটে। সেই দুরন্ত রোগের সময় তাহার চতুর্থ দেওর yস্বধীন্দ্রনাথ তাহার পার্শ্বে বসিয়া পুত্রের ন্যায় সেবা করিয়াছিলেন। সে মৃত্যুর সময়, একমাত্র কন্যা নলিনী ও পুত্র দিনেন্দ্রনাথকে রাখিয়া যায়। তাহার মৃত্যুতে আমার মনে বড়ই ব্যথা লাগিয়াছিল। তাহার কন্যা নলিনী ঠিক তাহার মায়ের স্বভাবটিই পাইয়াছে। স্নেহে, মমতায়, দয়া, মায়ায়, সেবাযত্বে তাহারও মনটি খুবই সুন্দরভাবে গঠিত হইয়াছে। পুত্র দিনেন্দ্রনাথ, তাহার স্বমধুর কণ্ঠস্বরে সকলকে মুগ্ধ করিয়া রাখে। সুশীলার গলাও মিষ্টি ছিল । যে গানই সে করিত, তাহা এতই ভাবের সহিত গাহিতে থাকিত যে তাহাতেই লোকের মনকে মুগ্ধ করিত। দিনেন্দ্রনাথের গানের মধ্যেও তাহার মাতার সঙ্গীতের সেই বিশেষত্বটুকু রহিয়া গিয়াছে। তাহাদের মাতার আশীৰ্ব্বাদের ফলে, তাহারা দুজনেই উপযুক্ত মাতার উপযুক্ত সস্তান হইতে পারিয়াছে। স্বশীলার মৃত্যুর পর দ্বিপেন্দ্রনাথ পুনরায় ডেপুটম্যাজিষ্ট্রেট ললিতমোহন চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় কন্য হেমলতা দেবীকে বিবাহ করেন। হেমলতার পুত্রকন্য হয় নাই, তিনি তাহার সপত্নীর সন্তানদিগকে ঠিক নিজের সস্তানের ন্যায় স্নেহে, যত্নে প্রতিপালন করিয়াছেন । আমি যখন পুত্ৰশোকে কাতর, সেই সময় তিনি যথেষ্ট যত্ব আদরে আমার সেবা ও তত্ত্বাবধান করিয়াছিলেন । ইহারই দুই ভ্রাতা, মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায় ও রজনীমোহন চট্টোপাধ্যায়ের সহিত আমার বড় জায়ের দুই কন্যা, সরোজা ও উষার দুইজনের বিবাহ হইয়াছিল। এখন তাহাদের দুই ভগ্নীর মধ্যে কেহই জীবিত নাই। আমার বড় ননদ সৌদামিনী দেবীর, তার পিতার দ্যায় ধৰ্ম্মভাব প্রবল ছিল এবং স্বভাবও বড় মিষ্ট ছিল , ১১ই মাঘের উৎসবের দিন সন্ধ্যার সময়, আমাদের বাড়ীর একটি ঘর ফুল দিয়া নিজের হাতে সাজাইয়া তিনি আমাদিগকে সকলকে সঙ্গে করিয়া লইয়া সেই ঘরটিতে উপাসনা করিতেন, আমার শ্বাশুড়ীও যাইতেন। সেখানে উপাসনা করিবার পর বাহিরে—যেখানে বিশেষভাবে উৎসবের জন্য আয়োজন করা হইত, সেইখানে যাইয়া আমরা আড়াল হইতে শুনিতাম। শ্বশুর মহাশয় যখন বাড়ীতে থাকিতেন তখন তিনি নিজেই উপাসন করিতেন, তাহা না হইলে তাহার অনুপস্থিতিতে, বেদাস্তবাগীশ আনন্দরাম, —পাকৃড়াশি, জ্ঞানেন্দ্র—, এই তিন জনে ১১ই মাঘের উৎসবে বেদীতে বসিতেন। মাঝে মাঝে আমার বড় ভাস্কর দ্বিজেন্দ্রনাথও উপাসনা করিতেন । - আমার শ্বশুর আমার বড় ননদকে বড় ভালবাসিতেন। তাহার এই সকল সৎকার্য্যে খুলী হইয় তাহাকে তিনি “গৃহরক্ষিতা সৌদামিনী’ নামকরণ করিয়াছিলেন। আমার শ্বশুর চার কন্যাকে ঘরজামাইরূপে বাড়ীতে রাখিয়াছিলেন, তাহ ছাড়াও প্রত্যেককে এক একখানি বাড়ী দিয়াছিলেন। আমার বড় ননদ ছাড়া অন্ত ননদের সেই বাড়ীতে উঠিয়া গেলেন। বড় ননদ মৃত্যুকাল পৰ্য্যস্ত র্তাহার বাপের বাড়ীতে ছিলেন এবং মৃত্যুও র্তাহার এই বাড়ীতেই হইয়াছিল । পিতা যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন পিতার খাওয়া-দাওয়া সৰ্ব্ববিষয় তত্ত্বাবধান তিনিই সব করিতেন । আমার বড় ননদের দুটি কন্যা ও একটি পুত্র হইয়াছিল। বড় মেয়ে ইরাবতীর, রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের ভাইপো, ৬নিত্যরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের সহিত বিবাহ হয়, ছোট মেয়ে ইন্দুমতীর সহিত বৰ্দ্ধমান জেলায় একটি ব্রাহ্মণের পুত্র ৬নিত্য চট্টোপাধ্যায়ের সহিত বিবাহ হইয়াছিল। এই জামাতা পরে খুব বড় ডাক্তার হইয়াছিলেন । পুত্র, সত্যপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায়, বিষয়কাৰ্য্যে ও সাংসারিক কাৰ্য্যে র্তাহার মাতার ন্যায় স্বদক্ষ ছিলেন। মাতার মৃত্যুর পর তিনি এখন বরোদায় তাহার পুত্র ও পুত্রবধুর নিকট রহিয়াছেন । উৎসবের সময় আমাদিগকে নানারকম গহনা পরিয়া সাজিতে হইত। এখনকার মত তখনকার দিনের গহনা অত হাল্কা ছিল না। বাড়ীর যে নতুন বউ আসিত তাহাকে আরও বেশী রকম গহনার উৎপাত সহ