পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२०७ এমনি করিয়া দিনের পর দিন কাটিতে থাকে। মাধবচন্দ্রের প্রদত্ত টাকা প্রায় নিঃশেষ। হিরণের উপরই সংসারের যাবতীয় ভার। সে চুপ করিয়া বসিয়া ছিল না। তাহারই মতো বিধবা মেয়ের সংখ্যা তাহাদের গ্রামে নিতান্ত কম নয়। তাহাদের বাড়ী বাড়ী ঘুরিয়া তাহার কি ভাবে সংসার চালায় তাহ। সে দেখিয়া আসিল । সেই পথ অনুসরণ করিয়া যে কয়টি টাকা অবশিষ্ট ছিল, তাহার কিয়দংশ লইয়া মহাজনদের নিকট হইতে কিছু ধান স্থবিধা দূরে কিনিয়া লইয়া, সেই ধান ভানিয়া চাউল প্রস্তুত করিতে লাগিল। গ্রামে শ্রমজীবীর সংখ্যা অল্প নহে। তাহাদের জমি নাই। তাহার চাষও করে না। মজুরীর অর্থে চাউল ইত্যাদি কিনিয়া সংসার চালায়। তাহারাই হিরণের চাউল কিনিয়া লইয়। যাইত। হিরণ এইভাবে পরিশ্রম করিয়া সংসার চালাইতে লাগিল । এমনি করিয়া হিরণের আস্তরিক চেষ্টায় ও যত্নে তাহাদের গৃহস্থালীতে একটু শ্ৰী-শৃঙ্খলা ফিরিয়া আসিল । হিরণের মা ও শশী অল্পে অল্পে স্বস্থ হইতে থাকে। কিছুদিন পরে শশী উঠিয়া হাটিয়া বেড়াইতে লাগিল । হিরণ তাহার পথ্যের ব্যবস্থা করিয়াছিল কিন্তু ঔষধের অর্থ জোগাইতে পারিত না । কিছুদিন ঔষধ খাইয়া শশী ঔষধ বন্ধ করিল—কিন্তু কিছুতেই সে আর স্বস্থ সবল হইয়া উঠিতে পারিল না। হিরণের মা’রও সেই অবস্থা । কাজেই এক হিরণ তাহীদের সংসার চালাইতে লাগিল । গ্রামের ইতর-ভদ্র সকলেই এই কৰ্ম্মপটু আনন্দময়ী মেয়েটিকে দেখিয়া মনে মনে খুসি হইত। অনেকের বাড়ীতে কাজেকর্ষে এই মেয়েট গিয়া অনেক সাহায্য করিত। অনেক অসহায় গ্রামবাসীর রোগে বিপদে হিরণ তাহার যথাসাধ্য করিত। বহুদূরের গ্রাম হইতে তাহাঁদের জন্ত সে ঔষধ আনিয়া দিত। প্রয়োজন হইলে সেবা-শুশ্রীষাও করিত ! এক একদিন দিনের সব কাজ শেষ করিয়া সন্ধ্যার অন্ধকারে পরিশ্রান্ত হিরণ দাওয়ায় একান্ত আপন মনে বসিয়া থাকিত। দু’টি একটি তারা জামগাছের অন্তরাল হইতে আত্মপ্রকাশ করিত-সন্ধ্যার সেই সকল-ভুলানো মায়ার মধ্যে হিরণের মনে হইত—সে নিতান্তই একা । প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ,.১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড মনের এই অবস্থাটি সে ঠিক নিজেও বুঝিতে পারিত না । বাতাস যেমন করিয়া নবীন কিশলয়গুলি দুলাইয়া দিয়া যায়, তেমনি এক-একটি অস্পষ্ট চিন্তা-বায়ু হিরণের মনের কিশলয়গুলিকে দুলাইয়া দিয়া যাইত। কিন্তু সে শুধু এক মুহূর্তের জন্য। পরক্ষণেই সে আত্মসঙ্গত হইয়৷ সংসারের কাজে মন দিত । একদিন একটি ছোট ছেলে হিরণকে ডাকিতে আসিল । তাহার মা'র বড় অমুখ । কেহই দেখিবার নাই। হিরণ যদি গিয়া একটু সাহায্য করে ত সব দিক রক্ষা হয় । এসব আহবানকে হিরণ উপেক্ষা করিতে পারিত না । কোথা হইতে তাহার মনে একটি অদ্ভুত শক্তির আবির্ভাব হইত। তাহারই প্রেরণায় আজিও সে ছেলেটির সঙ্গে সঙ্গে তাহীদের বাড়ীর দিকে চলিল । পথে সেই নেবুগাছতলায় ঢালু জমির উপব আজিও তামাকের ও নানালোকের শ্রাদ্ধ চলিতেছিল । ছেলেটির সঙ্গে হিরণকে আসিতে দেখিয়া সেখানে একটি সাড় পড়িয়া গেল। যতনচন্দ্র নিধিরামের কানে কানে বলিতে লাগিল—মতিচরণের বাড়ীর দিকে চলেছেন দেখছি ষে--সঙ্গে সঙ্গে তা’র ছেলেটাও আছে দেখছি ! ব্যাপার কি বলে ত হে ! —আরে জানো না বুঝি ! মতির ইস্ত্রী যে মরুতে বসেছে ! একটা মরা ছেলে হ’য়েছিল, তারপরে এখন খুব অস্বথ ? —আচ্ছা ও গিয়ে কি করবে শুনি- ও কি পাশকরা ধাই, না কি ! গুপীদাস গম্ভীর মুখে বসিয়াছিল। বলিল—আরে যেতে দাও না হে, যেতে দাও! মতেটাকে একবার দেখে নেব আমি—কিপটে লোক ; পাছে কিছু খসাতে হয় ভেবে ওকে নিয়ে যাচ্ছে—ও গিয়ে যে কি করবে তা আমার জানা আছে। হিরণ তাহদের দিকে দৃকপাত না করিয়া ছেলেটির সঙ্গে সঙ্গে তাহদের বাড়ীতে গিয়া উঠিল। মতিচরণ অল্পদিন হুইল গ্রামের বাহিরে মাঠের কাছে একখানি