পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

•©ዓ<% ঢুকিয়া দেখিয়াই সে অবাক হইয় গেল। নানা ধরণের জিনিষপত্র, খেলনা, আসবাবপত্র, ছবি, ঘড়ি, জুতা, কলের গান, বই, বিছানা, সাবান, কোঁচ, কেদারা—সবই পুরানো মাল। অপুর মনে হইল বেশ সস্তাদরে বিকাইতেছে একট। ফুলের টব, দর বলিল ছ’ আন।। একটা ভাল দোয়াতদান দশ আনা । এগারে টাকায় কলের গান মায় রেকর্ড। এতদিন কলিকাতায় আছে, এত সস্তায় এখানে জিনিষপত্র বেচা-কেন হয়, ত৷ তো সে জানে না । এত সব সৌর্থীন জিনিষের এত কম দাম । তাহার মাথায় এক খেয়াল অসিয় গেল । পরদিন সে বাকী টাকা হাতে বৈকালে আসিয়া চোর-বাজারে ঢুকিল। মনে মনে ভাবিল—এইবার একটু ভাল ভাবে থাকবে, ও রকম গোয়ালঘরে আর থাকতে পারি নে— যেমন নোংরা তেমনি অন্ধকার। প্রথমেই সে কালকার ফুলদানিজোড়া কিনিল । দোয়াতদানের উপর অনেকদিন হইতে ঝোক, সেটিও কিনিল । একটা জাপানী পর্দা, খানচারেক ছবি, থানকতক প্লেট, একটা আয়না, ঝুটা পাথর বসানো ছোট একটা আংটি, ছেলেমানুষের মত আনন্দে শুধু জিনিষগুলাকে দখলে আনিবার ঝোকে যাহাই চোখে ভাল লাগিল, তাহাই কিনিল । দাও বুঝিয়া দু-একজন দোকানদার বেশ ঠকাইয়াও লইল । ডবলউইকের একট। পিতলের টেবিল-ল্যাম্প পছন্দ হওয়াতে দোকানীকে জিজ্ঞাসা কলিল,—এটার দাম কত ? দোকানী বলিল,—সাড়ে তিন টাকা । অপুর বিশ্বাস এরকম আলোর দাম পনেরে ষোল টাকা । এরূপ মনে হওয়ার একমাত্র কারণ এই যে, অনেকদিন আগে লীলাদের বাড়ী থাকিবার সময় এই ধরণের একটি আলো লীলার পড়িবার ঘরে টেবিলে জলিতে দেখিয়াছিল। সে বেশী দর কষিতে ভরস। করিল না, চার আন মাত্র কমাইয়া তিন টাকা চার আন মূল্যে সেই মান্ধতার আমলের টেবিল ল্যাম্পট মহাখুন্সীর সহিত কিনিয়। ফেলিল। মুটের মাথায় জিনিষপত্র চাপাইয়া সে উৎসাহে ও আগ্রহে সব আনিয়া বাসায় হাজির করিল ও সারাদিন খাটিয়া ঘরদোর ঝাড়িয়া, ঝাট দিয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিয়া ছবিগুল দেয়ালে টাঙ্গাইল, সস্তা জাপানী পর্দাটা দরজায় ঝুলাইল, আয়নাটাকে গজাল আটিয়া প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ AMAMAMMMMAMMMMMS SSMAAA AAAA AAAA AAAAMAMSAS SSAS SSASAMASAMAMAMMMMS [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড বসাইল, ফুলদানির জন্য ফুল কিনিয়া আনিতে ভুলিয়া গিয়াছিল, সেগুলিকে ধুইয়া মুছিয়া আপাততঃ জানালার ধারে রাখিয়া দিল, দোয়াতদানট। তেঁতুল দিয়া মাজিয়৷ ঝকঝকে করিয়। রাখিল । টেবিল ল্যাম্পট পরিষ্কার করিয়া, বাহিরে অনেকদিনের একটা খালি প্যাকবাক্স পড়িয়াছিল, সেটা ঝাড়িয়া মুছিয়া টেবিলে পরিণত করিয়া সন্ধ্যার পর টেবিল ল্যাম্পট। সেটার উপর রাখিয়া পড়িতে বসিল । বই হইতে মুখ তুলিয়। সে ঘন ঘন ঘরের চারিদিকে খুন্সীর সহিত চাহিয়া দেখিতেছিল—ঠিক একেবারে যেন বড়লোকদের সাজানে। ঘর । ছবি, পর্দা, ফুলদানী, টেবিল ল্যাম্প সব.সে একটু ভালভাবে থাকিতে চায়। এতদিন পয়সা ছিল না, হয় নাই । কিন্তু এইবার কেন সে মহিষের মত বিলের কাদায় লুটাইয় পড়িয়া থাকিতে যাইবে ? পরদিন সে ক্লাসের বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়া নিজের ঘরে খাওয়াইল –প্রণব, জানকী, সতীশ, অনিল, এমন কি সেন্ট-জেভিয়ার কলেজের সেই ভূতপূৰ্ব্ব ছাত্র চালবাজ মন্মথকে পর্য্যস্ত । মন্মথ ঘরে ঢুকিয়া বলিল--হুররে ...আরে আমাদের অপূৰ্ব্ব এসব করেচে কি ! কোথেকে বাজে রাবিশ এক পুরোনো পদ জুটিয়েচে দাখে । এত খাবার কে থাবে ? অপু নীচের কারখানার হেড মিস্ত্রীকে বলিয় তাহাদের বড় লোহার চায়ের কেটলীটা ও একটা পলিতা-বসানো সেকেলে লোহার ষ্টেভি ধার করিয়া আনিয়া চ। চড়াইয়াছে, একরাশ কমলা নেবু, সিঙ্গাড়া, কচুরী, পানতুয় কলা ও কাচা পাপর কিনিয়া আনিয়াছে—সবাই দেখিতে দেখিতে খাবার অৰ্দ্ধেকের উপর কমাইয়া আনিল । কথায় কথায় অপু তাহাদের দেশের বাড়ীর কথা তুলিল— মস্ত দোতাল বাড়ী, নদীর ধারে, এখনও পূজার দালানটা দেখিলে তাকৃ লাগে, দেশে এখনও খুব নাম—দেনার দায়ে মস্ত জমিদারী হাতছাড়া হইয়া গিয়াছে, তাই আজ এ অবস্থা—নহিলে ইত্যাদি । প্রণব চা পরিবেশন করিতে গিয়া খানিকটা জানকীর পায়ের উপর ফেলিয়া দিল । ঘরকুদ্ধ সবাই হো-হে করিয়া হাসিয়া উঠিল। সতীশ আসিয়াই সটান শুইয়।