পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড পারে ? মনে মনে এই প্রথম সাক্ষাৎ ব্যাপারটিকে কত বার কত রকম করিয়া সে ভাবিয়া দেখিয়াছে, কল্পনায় কত রকম রং তাহার উপর মাথাইয়াছে ; কিন্তু বাস্তবিক যাহা ঘটিল, তাহ মায়ার মনকে একেবারে বিরক্ত করিয়া তুলিল, দেবকুমারের উপরে নয়, নিজের উপরেই। দেবকুমার বিলাত যাইবার আগে না কি তাহার আত্মীয়স্বজন রক্ষাকবচ-স্বরূপ তাহার গলায় একটি পত্নী ঝুলাইয়া দিতে চাহিয়াছিলেন। তাহাতে সে বলিয়াছিল, “আমার আয়ার কাজ করা অভ্যাস নেই, খুকীটুকি মানুষ করতে পারব না।” জনৈক আত্মীয় বলিয়াছিলেন, “তবে তোমার মতলবথান কি বল দেখি ? বিলাত থেকে মেম বউ নিয়ে আসবে বুঝি ?” দেবকুমার বলিয়াছিল, “মেমের শাদ চামড়ার লোভে ত করব না, শিক্ষাদীক্ষার লোভে করতে পারি ” মায়। এই গল্পটি বাণীর কাছে অনেকবার শুনিয়াছে। শুনিলেই তাহার মনে কেমন একটা উত্তেজন| আসিত । দেবকুমার নিজে এমন একটা কি যে, দেশের মেয়েদের প্রতি তাহার এমন অবজ্ঞা ? এমন মেয়ে কি দেশে কেহ নাই, ঘে, রূপে গুণে শিক্ষায় এই অবিনীতকে পায়ের তলায় টানিয়া অনিতে পারে ? সে নিজেই কি পারে না ? বাণী একদিন ঠাট করিয়াছিল, “বাছাধন ফিরে এলে আশা করি তোর কাছে একটু জব্দ হবেন। সহজে ছাড়িস না।” মনে মনে মায়া তখন ইহাতে আপত্তি অহুভব করে নাই, যদিও প্রকাশ্যে বাণীর পিঠে চড় মারিয়া বলিয়াছিল, “আমি ত আর সার্কাসের ট্রেনার নয় যে, যত দুরস্ত জানোয়ার বশ করে বেড়াব ? তোমাদের দেবকুমার যা খুসি ভাবুক স্তুর বলুক না, আমার তাতে কি এল গেল ?” কিন্তু ঝাপস রকম একটা সঙ্কল্প তখন হইতে তাহার মনে ছিল, দেবকুমারের সহিত কখনও যদি তাহার পরিচয় ঘটে, তাহা হইলে মায় তাহাকে বুঝাইয়া ছাড়িবে যে, বাঙালীর মেয়েও এমন আছে, যে, মেমের চেয়ে কোনো ংশে হীন নয়। কিন্তু আজ দেবকুমার তাহাকে দেখিয়া কি ভাবিল কে জানে ? নিতান্ত মায়ার চেহারা দেখিয়া যদি কিছু মুগ্ধ হইয়া থাকে, তাহাও বিশেয হইবার কথা নয় । কারণ মায়া স্বন্দরী হইলেও, সদ্য বিলাত-ফেরতের চোখে তাহাকে এমন কিছু অপরূপ রূপসী মনে নাও হইতে পারে। অন্য কোনোদিকে সে মুর্থ পাড়াগেয়ে মেয়ে অপেক্ষ বিন্দুমাত্রও ভাল ব্যবহার করিতে পারে নাই। শিবচরণবাবু যাহা কিছু জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, তাহাকে ই৷ কিংবা না উত্তর দিয়াছে মাত্র । দেবকুমারের সহিত একটাও কথা বলে নাই। দেবকুমার তাহাকে বেশ তীক্ষ দৃষ্টিতে দেখিয়া লইতেছে, তাহা সে লক্ষ্য করিয়াছিল বটে, কিন্তু সপ্রতিভ ভাবে একবারও তাকাইয় তাহাকে দেখিতে পারে নাই। ছি, ছি, এ কি কাগু ! বিলাতফেরৎ ছেলেটি বাড়ী ফিরিয়া মনে মনে হয়ত প্রচুর হাসিয়া লইয়াছে। মায়ার কথা সেও আগে কিছু শুনিয়া থাকিবে । তাহণকে কিরূপ কল্পনা করিয়াছিল, কে জানে ? বাস্তবে এবং সেই কাল্পনিক মূৰ্ত্তিতে কতখানি প্রভেদ দেখিল, তাহা বলা যায় না । যাইবার সময় দেবকুমার নমস্কার করিয়ু বলিয়াছিল, “আচ্ছা, আসি তবে, ষ্টীমারে আবার দেখা হবে।” মায় তাহার উত্তরেও সামান্য একটা ‘হঁi’ ছাড়া আর কিছু বলিয়া উঠিতে পারে নাই । মোটের উপর সমস্ত ব্যাপারটাই হাস্যকর হইয়াছিল। উহারা না আসিলেই ছিল ভাল । নিঃসম্পৰ্কীয় যুবকের সহিত আলাপ-পরিচয় করা মায়ার কাছে কিছু নুতন নয়, সৰ্ব্বদাই সে সপ্রতিভ ভাবে আলাপ করিতে পারিয়াছে, আজই তাহাকে কি ভূতে পাইল কে জানে ? নীচ হইতে তাহার জ্যাঠাইমা ডাকিয়া বলিলেন, “মায়া, নীচে অায়, খাবার দেওয়া হয়েছে যে । আজ কি আর ছাদ থেকে নামবিই না ?” হাজার ভাবনা ভাবিতে ভাবিতে কথন যে সন্ধ্যার ধূসর মান আলো রজনীর গাঢ় কালিমায় বিলীন হইয়া গিয়াছে, মায় তাহ লক্ষ্যও করে নাই । যাক, আর ভাবিয়া কি হইবে ? যদিও আজ বিকালের ব্যাপারটা না ঘটিলেই সে খুসি হইত, তাহা হইলেও ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটিয়া গিয়াছে মনে করিবার কোনো কারণ নাই। না হয় দেবকুমার তাহাকে দেখিয়া মুগ্ধ না-ই হইয়াছে। কেবল