৪র্থ সংখ্যা ] মহামায়। সহ্য করতে পারেন, আমি ইয়্যাংম্যানূ হয়ে যদি তা না পারি,তাহলে ত আমার ডুবে মরা উচিত। নিজের জন্যে ততটা নয়, তারই জন্তে আমি একটু ব্যবস্থা বদল করতে চাইছি। আচ্ছা, বৰ্ম্মাটা আপনার কেমন লাগে ?” মায়া বলিল, “মন্দ নয়। ওখানে যাবার আগে ত একেবারেই পাড়াগায়ে থাকৃতাম। ওখানে সবই নৃতন রকম, কাজেই প্রথম প্রথম যদিও কয়েকদিন অসোয়াস্তি লেগেছিল, তারপর থেকেই মন্দ লাগে না । সারাক্ষণই একটা কিছু নিয়ে থাকতে হয়, কাজেই খারাপ লাগবার অবসরও থাকে না ।” দেবকুমার বলিল, “আপনার বাবা ত বহুকাল এখানে, আপনারা এর আগে একবারও আসেন নি যে ?” অন্য মানুষ হইলে এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই ভাল করিয়া পাইত না । মায়া যেমন করিয়া হোক কথাটা ফিরাইয়া দিত । কিন্তু কেন জানি না, দেবকুমারের কথার উত্তর না দিয়া সে থাকিতে পারিল না। বলিল, “ম সাহেবী আন বড় বেশী অপছন্দ করতেন, তাই তিনি যতদিন বেঁচেছিলেন আমাদের আর আসা হয়নি। মা মারা যাবার পর বাবা আমাকে আর পিসীমাকে নিয়ে যান।” দেবকুমার জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার পিসীমা এখনও ওখানে আছেন না কি ?” মায়া বলিল, “না, তিনি বছরখানেক থেকেই দেশে ফিরে যান। এবারে তাকে নিয়ে যাবার জন্যে বাবা খুবই জেদ করেছিলেন, তিনি কিছুতেই এলেন না।” দেবকুমার বলিল, “তাহ’লে রেঙ্গুনের ঘরসংসার সব আপনাকেই তদারক করতে হয় ?” মায়। হাসিয়া বলিল, “তদারক ত ভারি, এক পাল চাকর ঝি আছে, তারাই সব করে।” দেবকুমার বলিল,“সেই ত আরও মুস্কিল। নিজে কাজ করা বরং সহজ, কিন্তু এক পাল ইন্এফিশিয়েণ্ট লোককে দিয়ে মনের মত করে কাজ করান খুবই শক্ত ব্যাপার। বিলেতে একটা ঝি যা কাজ করে এখানে তিন চারটে চাকর দিয়ে সে কাজ পাওয়া যায় না।” মায়া বলিল, “এপর্য্যস্ত যত বিলেত-ফেরৎ দেখলাম, NVඑ ওদেশের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ । ওখানের সব কিছু কি সত্যিই এত ভাল ?” দেবকুমার হাসিয়া বলিল, “সবই ভাল মোটেই নয় । তবে কোনো কোনো বিষয়ে ভাল বই কি ? আবার আমাদের দেশেও এমন জিনিষ আছে, ধা ওখানে একেবারে দুলভ।” এমন সময় খাওয়ার ঘণ্টা বাজিয়া ওঠাতে দেবকুমার উঠিয়া পড়িল। বলিল, “যাই, এ ব্যাপারটা সেরে আসি । এ লাইনে সেকেণ্ড ক্লাসে এমন বাজে থাওয়া দেওয়া হয় জানলে আমি উইথ ডায়েট্ টিকিট করতাম না। বাবার মত চাল ডাল পুটলি বেধে আনতাম। বাব আবার এমন হিসেবী মানুষ যে, একমুঠো কিছু বেশী আনেন নি। কাজেই এখন ব্যবস্থা বদলানে চলে না " . __ খাওয়া-দাওয়ায় কাহারও অস্থবিধা হইতেছে শুনিলে স্ত্রীজাতির মন কখনও অবিচলিত থাকিতে পারে না। মায়া তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিল, “ওমা, আপনি এত কষ্ট করছেন কেন ? আমার সঙ্গে যা দিয়ে দিয়েছেন জেঠাইম, তাতে চারজন লোক দশদিন বসে খেতে পারে। আমি কাল থেকে আপনাকে খাবার পাঠিয়ে দেব, আপনি জাহাজের খাবার থাবেন না। আজ রাত্রেও বলেন ত পাঠিয়ে দিই।” দেবকুমার বিন্দুমাত্র আপত্তি করিল না। হয়ত মায়াকে এই কথা বলাইবার জন্যই সে খাওয়ার দুঃখ বর্ণনা করিতে বসিয়াছিল। মায়া ঠিক ততটা বুঝিল কি না সন্দেহ ; তবে একটা কিছু বুঝিল বটে। দেবকুমার শুধু বলিল, “আপনার যদি অস্থবিধা না হয়, তাহলে আমি ত বেঁচে যাই । চলুন আপনাকে কেবিনে রেখে আসি, আবার বিকেল বেলা আসছেন ত ?” মায়া বলিল, “আচ্ছ, একেবারে ভাড়ারটাড়ার লোকটাকে বের করে দিয়ে, চ খেয়ে আসব।” দেবকুমার মায়াকে কেবিন পৰ্য্যস্ত পৌছাইয়া দিয়া চলিয়া গেল। মায়া ঘণ্টা বাজাইয়া ভাণ্ডারীকে ডাকিয়া পাঠাইয়া, রাত্রের আহারের ব্যবস্থা করিতে বসিল। ওবেলা ডালভাত নিরামিষ তরকারিতেই কাজ চালাইয়াছিল। এ বেলা তাহাতে মন উঠিল না।
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮২
অবয়ব