পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] , দ্বীপময় ভারত ৫৭৯ বিধি আমাদের দেশে আছে আর ত৷ তাদের দেশের বিধির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে দেখে, খুব যেন খুশী হ’য়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা ব’লতে লাগলেন । রাজা প্রশ্ন করলেন, —জাতিভেদ, অসবর্ণ বিবাহ, সামাজিক রীতি-নীতি ( যেমন বড়োভাইকে ‘দাদা’র মতন সম্মানসূচক শব্দে সম্বোধন করা, বয়সে বড়ো ভাইপোর বয়সে ছোটে। খুড়োকে প্রণাম করা উচিত কিন৷ ) ইত্যাদি গুরু লঘু নানা বিষয়ে । আমি লাণ্টার্ণের স্নাইড একে একে আলোর দিকে ধ’রে দেখাতে লাগলুম—স্নাইডগুলি হাতে হাতে ঘুরতে লাগ ল—উত্তর আর দক্ষিণ ভারতের বিরাট শিব আর বিষ্ণুর মন্দির, আর এদেশেও পূজিত নানা দেবতার মূৰ্ত্তি, এসব দেখাতে লাগলুম। এর বেশ চমৎকৃত হয়ে দেখতে লাগলেন । আমিও মাঝে মাঝে এদেশের রীতি-নীতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে লাগলুম। এইরূপে কথায় কথায় সন্ধ্যে হয়ে এলো। তখন আমাদের আলোচনা-সভা ভঙ্গ হ’ল । রাজা সব শেষে একটা প্রশ্ন ক’রলেন,—দেবতা, মন্দির, দেবর্চিন, শ্রাদ্ধ, সদাচার, সামাজিক রীতি-নীতি পালন, এ সব তে বাহ অন্তষ্ঠান, এ তো মাতুষের জীবনের চরম উদেশ্ব হ’তে পারে না ; মাহুষের পক্ষে প্রধান আর প্রথম উদ্দেশ্ব আর কৰ্ত্তব্য কি ? —সমস্ত বিকাল ধ’রে যে সব বিষয়ে আমাদের আলোচনা হ’চ্ছিল, সে সমস্তকে যেন উলটে দিয়ে এই প্রশ্ন ; আমি এ রকম গভীর ভাবের কথার জন্য প্রস্তুত ছিলুম না। রাজার এই প্রশ্ন শুনে মনে কিন্তু বেশ আনন্দ হ’ল ; আমি নিজে জবাব না দিয়ে, দ্রেউএস-এর মায়ফৎ ব’ললুম—এ কথার উত্তর আপনিই দিন, আপনাকেই আমি জিজ্ঞাসা করছি। রাজা ব’ললেন—দেবতা টেবত কিছুই নয় অৰ্চনা অনুষ্ঠান এ সমস্ত বাইরেকার কথা—মাহুষের জীবনের উদ্দেশু হ’চ্ছে, নিৰ্ব্বাণের জন্ত.সাধন করা। রাজার শেষ কথা কানে যেন এখনও বাজছে—তার বলিদ্বীপের উচ্চারণে মালাই ভাষায় তিনি যখন ব’ল্লেন—"ডেউঅ|ডেউআ টিল্ডাঃ আপ—নিরূওঅন সাটু’—দেবতার কিছু নয়–নির্বাণই হচ্ছে একমাত্র বস্তু। স্থদর মালাই দ্বীপপুঞ্জে, সহস্ৰ বৎসর কাল ধ’রে ভারতবর্ষ থেকে বিছিন্ন হ’য়ে থেকেও, ভারতীয় সংস্কৃতির মূল কথা, ষে নিৰ্ব্বাণ মোক্ষের সাধনাই মানবজীবনের চরম লক্ষ্য,—কি ক’রে এদের মনে এমন ভাবে গেথে রয়েছে, ত। ভেবে বিস্মিত আর পুলকিত হ’তে হয়। আমি রাজাকে বললুম— আপনি ঠিকই ব’লেছেন,—পুরুষাৰ্থ যে এইই, তা আমাদের শাস্ত্রে বলে, শাশ্বত বস্তুর সাধনা জীবনের প্রথম আর প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ; বাহ্যিক ধৰ্ম্মানুষ্ঠান, সামাজিক রীতি-নীতি পালন, সেবাধৰ্ম্ম, এ সব আক্ষঙ্গিক । রাজার এই প্রশ্ন আর মস্তব্যের কথা পরে রবীন্দ্রনাথকে আমি বলি ; তিনিও এই কথা শুনে বিশেষ খুশী হন ; আমায় তিনি বলেন,—দেখ হে, মালাইজাতের লোক এরা, এদের চিন্তা-প্রণালী আমাদের থেকে কত আলাদা, এর দুনিয়া দেখে অন্য ভাবে, আমাদের সভ্যতার বাহ অনুষ্ঠান অনেকগুলি এর যা নিয়েছে তা তার spectacular বা দৃষ্টি-সুন্দর ভাবের দ্বারাই বেশী আকৃষ্ট হয়েই যে নিয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই ; আমাদের ইতিকথা আমাদের শিল্প-কলা এদের উপর তার প্রভাব সহজেই বিস্তার ক’রেছে ; কিন্তু রাজ। যে ভাবের কথা বললেন, তাতে বেশ বুঝতে পারা যাচ্ছে যে আমাদের সভ্যতার অtধ্যাত্মিক বাণীও এর ঠিক নিতে পেরেছে ; আর তা না হ’লে এত বিরুদ্ধ প্রতিবেশ-প্রভাব সত্ত্বেও এর এই সভ্যতাকে প্রাণপণে অঁাকড়ে ধ’রে থাকতে পারত না । বলিদ্বীপ আর যবদ্বীপের ভ্রমণ শেষ ক’রে পরে রবীন্দ্রনাথ যখন বলিদ্বীপের উপরে যে সুন্দর কবিতাট লেখেন—যেটা প্রবাসীতে প্রকাশিত হয়েছিল আর যার কথা পূৰ্ব্বে অন্যত্র ব’লেছি,—তাতে, কারাঙ-আসেম-এর রাজার কথায়, আর তা ছাড়া অন্য দু একটা খুটা-নাটী বিষয়ে, বলিদ্বীপীয়দের চরিত্রে অধ্যাত্মিক জীবনের দিকে একটা অনপেক্ষিত গভীরতার আর অস্তমুখিতার পরিচয় পেয়েই, এই ছত্র কয়ট লিখতে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন— পরের দিনে তরুণ উষা বেণুবনের আগে জাগিল যবে নব অরণ রাগে,— মৗরবে আসি দাড়ামু তত্ব আঙন-বাহিরেতে ; শুনিলু কান পেতে, গভীর-স্বরে জপিছ কোন থানে উদ্বোধন-মন্ত্র যাহ নিয়েছ তব কানে— একদা দোহে পড়েছি যেই মোহ-মোচনী বাণী মহাযোগীর চরণ স্মরি যুগল করি' পাণি ॥