পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] বাদশাহী বিচার-পদ্ধতি ও দণ্ডনীতি لا نی\ উৎপত্তি ও অন্যের মতানুযায়ী রায় দেওয়াতেই ইহার সার্থকতা। খৃ: পূ: ৫ম শতাব্দীতে গ্রীস দেশে আইনঅনভিজ্ঞ লোককে বিচারকের পদে নিযুক্ত করার রীতিতেও বোধ হয় এই মূল নীতিই নিহিত থাকৃতে । পারে । বার্ণিয়ের বিবরণ থেকে জানা যায়, মোগল আমলে কাজীদের এমন ক্ষমতা ছিল না যে, তারা পীড়নকারী প্রাদেশিক শাসনকৰ্ত্ত | জায়গীরদারদের হাত থেকে অত্যাচারপীড়িত প্রজাদের রক্ষা করেন । রাজধানী বা তন্নিকটস্থ স্থানসমূহে এরূপ ঘটনা দেখা না গেলেও, দূরদেশে শাসনকৰ্ত্তার ক্ষমতা ছিল অপরিসীম, এবং তারাই ছিলেন সেখানকার কৰ্ত্ত । রাজধানী ছাড়া প্রত্যেক প্রদেশেই ছিল কাজীর আস্তান। সবগুলি কাজীর উপরে ছিলেন এক শ্রেষ্ঠ কাজী, বা কাজী-উল-কুজ্জৎ । তিনি সৰ্ব্বদাই বাদশাহের সঙ্গসুখ লাভ করতেন। যেখানেই সম্রাট গমন করুন না কেন, সঙ্গে যেতে হ’ত এই কাজী সাহেবকে । ইনিই ছিলেন বিচারের সময় রাজার ডানহাতস্বরূপ । নূতন কাজীকে পদে বাহাল করবার সময় নিম্নলিখিত উপদেশগুলি দেওয়া হ’ত— ১ । হ্যায়বিচারী, সৎপথাবলম্বী ও অপক্ষপাতী হবে। ২ । বাদী ও প্রতিবাদীর সামনে বিচার করবে । ৩ । কাছারী ছাড়া অন্য কোথাও বিচার করবে না। ৪ । কাহারও নিকট হ’তে কোন রকম উপহার নেবে না বা যার তার মজলিশে বা নিমন্ত্রণে যাবে না। ৫ । রায়, দলিল বা অন্যান্য আইন-ঘটিত কাগজপত্র এমন করে লিখবে যা’তে কেহ দোষ বার করে অপদস্থ না করে । ৬। দরিদ্র্যকেই নিজের গৌরব মনে করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ এই উপদেশগুলি বড় একটা কাজে আস্ত না । কারণ কথিত আছে যে, কাজী সাহেবরা মোটেই উপদেশ অনুযায়ী কাৰ্য্য করতেন না । কয়েকজন ছাড়া বেশীর ভাগ কাজীই ছিলেন অসৎকার্যের পূর্ণাবতার। ঔরংজীবের আমলের শ্রেষ্ঠ কাজী, আবদুল ওহ হাব বোরা, র্তার ১৬ বৎসর চাকরীর মধ্যে নগদ ৩৩ লক্ষ টাকা ছাড়া জহরৎ ও অন্যান্ত অনেক মূল্যবান জিনিষ সঞ্চয়, করেন। রাজ-দরবারের সর্বশ্রেষ্ট কাজীই যখন এইরূপ, তখন অন্য পরে কী কথা। আবার মধ্যে মধ্যে ভাল লোকও দেখতে পাওয়া যায়। আবদুলের পুত্র শেখউল-ইসলাম-এর ( যিনি পরে তার পিতার পদ পান ) চরিত্র ছিল ঠিক তার পিতার উণ্টা। অসদুপায়ে সঞ্চিত পিতার বিপুল সম্পত্তি তিনি স্পর্শ পৰ্য্যস্ত করেন নি, এবং দান-খয়রাতে সব খরচ করেন । কারও কাছ থেকে কোনো সওগাদ তিনি গ্রহণ করতেন না। শেখ-উলইসলামের মত লোক ছিল খুবই অল্প, বেশীর ভাগ লোকই ছিল অত্যাচারী। তাই, বড় দুঃখে ঔরংজীব তার আদালতগুলিকে পীড়নের কাছারী’ আখ্যায় ভূষিত করেন ; আর বোধ হয় কাজীদের অত্যাচারের জন্যই কাজীর বিচার প্রভৃতি প্রবাদবাক্য জনসাধারণে এতদিন চলে আসছে । o প্রতি সপ্তাহের বুধবার ও শুক্ররার ছাড়া আর সবদিনে কাজী বিচারে বসতেন। শুক্রবার ছিল ছুটীর দিন— আজকালকার রবিবারের মত সেদিন কাজকৰ্ম্ম সবই বন্ধ থাকত। প্রতি খুধবার কাজী সাহেবদের স্ব স্ব প্রাদেশিক শাসনকৰ্ত্তার সঙ্গে দেখা করতে হ’ত । সকাল থেকে আরম্ভ করে দুপুর পর্য্যস্ত বিচারের কাজ চলতে থাকত। কাজী কোরাণ অনুযায়ী নগরের জুমা মসজিদে বা জনসাধারণের সামনে বিচার করতেন। সময়-বিশেষে স্বীয় বাসস্থানে বিচার করবার ব্যবস্থা কোরাণে নিষেধ না থাকলেও, এটা বেশ স্পষ্ট বলা ছিল যে, যদি কাজী নিজের বাড়ীতে বিচার করেন, তাহলে সেখানে সকলকে যেতে দিতে হবে, এবং এরূপ বন্দোবস্ত করতে হবে যে, কারও যেন কোনপ্রকার অন্ধবিধা না হয়। পূৰ্ব্বে একবার বলা হয়েছে যে, সদর বা কাজীর আদালত প্রাদেশিক রাজধানীতে অবস্থিত ছিল, এবং ইহাকে ‘মহকুমা-ই আদালত' বলে অভিহিত করা হত। এখন প্রশ্ন হ’তে পারে এই যে, তাহলে ছোট ছোট গ্রামগুলিতে বিচারের কি ব্যবস্থা ছিল ? অর্থশালীরা না হয় খরচ-খরচা করে নিজেদের অভিধোগ সদর আদালতে পেশ করতেন, গরীবদের ত টাকা ছিল না,