পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

۴۹۹ به بهانههای টানিয়া দিয়া বলিল—ও কাকে নাসাই ( বসিতে আজ্ঞা হোক ) । আমি চেয়ারে বসিলাম । তরুণী চায়া-ওন্ন পুতুল বাজির পুতুলের মত নিঃশব্দে চলিয়া গেল এবং মুহূৰ্ত্তেক পরে এক পেয়াল চা আনিয়া আমার সামনে একটা সেপায়ার উপর রাখিল ; আর আনিল একটা রেকাবে করিয়া থানকতক সাকুরা-মোচি ( চেরিফুলের পিঠে। ) চীনে মাটির শুভ্র স্বচ্ছ পেয়ালার গায়ে ঈষৎ হরিতাভ চায়ের ক্ষীণ আভাসটুকু সেই তরুণীরই কপোল দুটির অনুকরণ করিতেছিল ; চেরিফুলের পিঠেগুলির বুকের মাঝে যে মৃদ্ধ ঘ্ৰাণ তাহ সেই তরুণীরই অন্তরখানির আভাস দিতেছিল। আমি চায়ের পেয়ালাটিতে অধর স্পর্শ করিয়া চুমুকে চুমুকে মুগন্ধি চা আর তারই মাঝে মাঝে সাকুর-মোচি আস্বাদন করিতে লাগিলাম । কিন্তু চোখ দুটা আমার নিবিষ্ট হইয়াই ছিল সেই তরুণীর ভকুলতায় । সে ঠিক যেন একটি রজনীগন্ধ ফুল—তেমনি তস্বী, তেমনি শুভ্ৰ, তেমনি নিটোল, তেমনি কোমল, তেমনি মধুর । তাছার মাথায় ফাপানো খোপা। পরণে চিত্রবিচিত্র কিমোনে ( জাপানী পোষাক ), যেন একটি প্রজাপতি তাহার বর্ণবহুল ডান মেলিয়া রজনীগন্ধার গায়ে জড়াইয়া ধরিয়াছে । আমি দেখিয়া দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া যাইতেছিলাম । অনেক বিলম্ব করিয়াই চায়ের পেয়ালা শেষ করিলাম । তখন আর অপেক্ষা করিবার কোনো ছুতা খুজিয় পাইলাম না। অগত্যা উঠিতে হইল। চায়ের দাম শোধ করিয়া দিতেই তরুণী অতি মোলায়েম কণ্ঠে বলিল— আরিগাতো ! ( ধন্যবাদ ] ) ইহার উত্তরে আমার কি বলা উচিত ঠিক করিতে না পারিয়া আমি একটু হাসিয়া মন্তক নত করিলাম। সে হাসিকে আমার প্রাণের সমস্ত তরল তা ঢালিয়া দিয়া তরুণীকে বুঝিতে দিলাম-আমি বিদেশী, আমার মুখে ভাষা নাই, কিন্তু সৌন্দর্য্যের সমাদর করিতে পারি এমনতর সরস প্রাণ একখানি এই কালে চামড়ার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন আছে । চায়া-ওন্না SAASAASAASAASAASAAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAeeAeSASAeSAMAAA SAAAAA . ৬৩৯ আমি বাহির হইয়া আসিতেছি, তরুণীও আমার সঙ্গে সঙ্গে চায়ার দ্বার পর্য্যন্ত আসিল এবং আবার তাঙ্গার কণ্ঠস্বরে জগতের সকল মাধুৰ্য্য মিশাইয়া সে বলিল— সায়ে নারা । আরিগাতো গোঞ্জাইমাশ, মাত নেগাইমাস। ( বিদায় ! ধন্যবাদ মহাশয় ! আবার অনুগ্রষ্ঠ করিয়া আসিবেন! ) মুন্দরী কি বলিল কিছুই বুঝিলাম না ; শুধু ভাবে বুঝিলাম সে বলিল—হে বন্ধু, আজিকার মতন বিদায় ; কিন্তু এ বিদায় যেন শেষ বিদায় না হয়, আবার এসো বন্ধু, আবার এসে ! আমি ঘাড় নাড়িয়া সম্মতি জানাইয়া চলিয়া আসিলাম । বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কত মানুষ আছে, তাছার মধ্যে এক একজনের সঙ্গে কেমন ক্ষণে দেখা হয় যে তাহাকে আর কিছুতেই ভুলিতে পারা যায় না । সে যে সৌন্দর্য্যের মোহ বা নূতনত্বের মাদকতা ঠিক তা বলা যায় না। . প্রাণটা যেন এতদিন তাহারই প্রতীক্ষায় বিরহবেদন ভোগ করিতেছিল, তাঙ্গারই মিলনে হৃদয় মন ভরিয়া উঠে, জীবন ধন্ত বোধ হয় । সামান্ত একটি চায়া-ওয়াকে দেথিয়া আমার প্রীতির সাগর যেন উছলিয়া উঠিল ; তাহার কোমল রূপ, মধুর বাণী, ললিত ভঙ্গী, সুরস সঙ্গ আমার অন্তর যেন ভাবে আননে ভরিয়া ছাপাষ্টয়া তুলিল । মাত্র দুদিন য়োকোহামায় থাকার কথা । এই দুদিনে যতবার পারি তাহাকে দেখিয়া আমার আকুল অন্তরটাকে তৃপ্ত করিয়া লইব ঠিক করিলাম। সন্ধ্যাবেল আবার চায়াতে গেলাম। তরুণী আমায় দেখিয় তাহাদের দেশের রীতি অনুসারে দুষ্ট উরুতে হাত রাথিয়া ঈষৎ নত হইয়া মধুকণ্ঠে আমাকে অভ্যর্থন করিল—কোম্বান ওয়া ! ( শুভ সন্ধ্য ! ) তাহার মুখে হাসির রেখামাত্র ছিল না, কণ্ঠে প্রকম্প ছিল না, কিন্তু তার ছোট টানা বাকা চোখ দুটি আমার সাক্ষাৎলাভে উজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছিল। আমিও তাহাকে শুভ সন্ধ্য জ্ঞাপন করিলাম। রাত্রে হোটেলে 'ফিরিলাম, কিন্তু মন পড়িয়া রহিল সেই চায়ের দোকানে। একটি সাকুরা ফুলের মত ।