পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WNo. Sకరికుశు খাবারের দিকে চাহিয়া দুশ্চিন্তা নাই, লাভক্ষতির হিসাব হরিশটার জন্য সব ফাসিয়া গেল। এত সতর্কতা সত্ত্বেও নাই, পুত্ৰকস্তাদের জন্য এক তিলও ভাবনা নাই। খাইতে বসিয়া যেন হাস্ত-কলরব বাড়িয়া উঠিল। রমেশ এক কোণে বসিয়া প্রাণ ভরিয়া আহার করিতেছিল। কি সব তরকারীর নামও জানে না—খাইতে চমৎকার। ভাল লাগিতেই বলিতেছে,—ও মশাই, একবার এই দিকে আসবেন ত। না, ন, লুচি নয়—পোলাও চাই ন, ই, ওই থেকে একটু মাছ বেছে। মুড়ে নেই ? দইয়ের মাথাটা ভেঙে দেবেন ত! রসগোল্লা থাক, বরং আপনার আইসক্রীম সন্দেশটা একবার—আহাহা! একেবারে অতগুলো দিলেন! পেট ভরিয়া খাইয়াও দশ-বারটি সন্দেশ পাতে পড়িয়া রছিল। রমেশ ভাবিতে ভাবিতে প্রায় যেন ক্ষেপিয়া উঠিল। এগুলি ফেলিয়া দিবে ? অপচয় করা কি ভাল ? কিন্তু উপায়ই বা কি । এদিকে-ওদিকে চাহিয়া দেখিল—পান লইবার বাস্ততায় সকলে উঠিয়া দাড়াইয়াছে, কাহারও নজর এদিকে নাই। ভাবিয়া-চিন্তিয়া রমেশ এক দুঃসাহসিকের কাজ করিল। টপাটপ সন্দেশগুলি পকেটে পুরিয়া সেই দিকটায় চাদর ঝুলাইয়া দিল। পকেট উচু হইলেও চাদরে ঢাকিয়াছে বেশ, কাহারও সন্দেহ হইবে না। ট্রেনে বসিবার সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করিলেই, ব্যস্ ! যে-দিকে কোণ সেই দিকে পকেট রাখিলে মিষ্টগুলি চ্যাপ্টাইয়া যাইবে না । দিব্য নিরাপদে এবং সন্ত্রম অক্ষুঞ্জ রাখিয়াই বাড়ি পৰ্য্যন্ত পৌছান যাইবে । চাদর ঢাকিয়া রাবড়িটাও লওয়া যায়, কিন্তু অস্ববিধা অনেক। একহাত জোড়া করিয়া পথ চলা—কেহ দেখিয়া ফেলিতে পারে, চলৰাইয়া চাদর নষ্টও হইতে পারে। না, থাক। ওদিকে : চাহিয়া চক্ষুকে মিছাই সকরুণ করা। সন্দেশ লুকাইয়া এদিক-ওদিক চাহিতেই নজরে পড়িল, আরও জনকয়েক রমেশের মত সন্ত্রস্ত ভাবে এদিক-ওদিক চাহিতেছে। উহারাও হয়ত এই পথের পথিক। রমেশ মনে মনে হাসিয়া হাত মুখ ধুইল। পান লওয়া আর হইল না। মান-সন্ত্রম প্রায় বঁচিয়া গিয়াছিল ; কিন্তু রাসকেল সে খপ করিয়া তাহার পকেটে হাত পূরিয়া দিয়া কহিল,— মেলাই পান নিয়েচ যে, দাদা! দেখি দুটো। বলিয়া হাত টানিতেই একমুঠ সন্দেশ বাহির হইল। হরিশ চীৎকার করিয়া কহিল,—জারে ছো, এ যে সন্দেশ ! ক্যায়সা ভানুমতীর খেল দেখ—পান হয়ে গেল সন্দেশ ! —সমবেত জনতার উচ্চ হান্তধ্বনিতে রমেশ মূচ্ছিতের মত দাড়াইয়া রহিল,—কেন যে জ্ঞান হারাইয়া সেইখানে পড়িয়া গেল না—সেইটাই আশ্চৰ্য্য ! শতকণ্ঠের তীক্ষু বিদ্রুপ তীরের মত শাণিত । এমন কৌতুক অনেক দিন কেহ ভোগ করেন নাই যেন! প্রতিভোজনের এই হাসির ব্যাপারটাও উৎসবের शब्लांक्र-वत्र ! • - হুম্ হুম্ শব্দে ট্রেন আসিল । রমেশ কিছুই শুনিতে পাইল না। না গাড়ির গর্জন, না উহাদের হাসির তীয় ধ্বনি । হরিশই অভিভূত রমেশকে ঠেলিয়া গাড়িতে তুলিয় দিল। নিৰ্ব্বিল্প একটি কোণ রমেশের ভাগ্যে মিলির এবং সেই দিকে সন্দেশ-মাখ পকেট লইয়া সে বসিতেও পাইল। না পাইলেই বা কি ক্ষতি হইত ! বরং আসিবার কালে এক পাল কুলী যেমন গাড়ীতে উঠিয়াছিল, তেমনই কুলীর ভিড়ে সে যদি ঢাকিয়া যাইত ! বেশ হইত। হরিশ পকেট হইতে তিন প্যাকেট সিগারেট বাহির করিয়া কহিল,—এই দেখ এখন দশ দিনের দায় নিশ্চিন্তু ব্যোমকেশটা চালাক খুব। আটটা প্যাকেট ও গোটা পচিশেক বৰ্ম্ম বাগিয়েচে । ননী, পান আছে তোমা কাছে ! একগাল হাসিয়া ননী পকেট হইতে মুঠাভর্তি পা বাহির করিয়া সকলকে এক একটা দিল। সকলেই খুশ হইয়া সিগারেট ধরাইল । - হরিশ কহিল,—নাও না হে রমেশ,-পান খাও। আে ছো:–সন্দেশ মাখিয়ে পকেটটাকে নষ্ট করেছ। প:ে গোটা-দুই পান ও একটা সিগারেট তার মুখে গুজিয় দিয়া কহিল,—দুটো পান আনলে যে কাজ দেখতে নাও ধর—আগুনটা নইলে নিবে যাবে।