পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকরুণ সহাস্ত চক্ষু, সহজেই সকলের মনোহরণ করে, অজয়েরও করিয়াছিল । মুখটি খুব সুন্দর নয়, চোখদুইটির রং কটা, মুখ ছণ্টয়া কোনও এক সময়ে ত্রণ হইয়াছিল, সেগুলির অবশেষ-চিহ্ন চোখের নীচে গালের উপরিভাগকে লোহিতাভ করিয়া রাপিয়াছে, উপর-পাটির মাঝখানকার দুইটি দাত অল্প একটু উচু। কিন্তু এসমস্তই তাহার সমস্ত মুখশ্রীর সঙ্গে আশ্চৰ্য্যরূপে মানাইয় যাওয়াতে তাহাকে দেখিতে বেশ ভালই লাগে। অন্ততঃ অজয় মনে করে, তাহার দাতদুইটি ঐটুকু উচু না হইলে, চোখের নীচে গালের কাছটায় ঐটুকু লালের আভাস না থাকিলে তাহাকে মোটেই ভাল দেখিতে হইত না । স্বভাবের দিক্ দিয়া বিধাতা স্বভদ্রকে এমন করিয়া গড়িয়াছিলেন, যে, অজয়ের মত তুষ্টিহীন মানুষ৪ তাহার মধ্যে বিরক্ত হুইবার মত কিছু খুজিয়া পায় না। স্বভদ্র সম্পূর্ণভাবেই নিয়হঙ্কার বলিয়া অজয়ের অহঙ্কারী স্বভাব তাহার মধ্যে এমন একটা আশ্রয় পাইয়াছে যাহা আর কোথাও এতদিন পায় নাই । পৃথিবীতে ঠিক বন্ধু বলিতে স্বভদ্রেরও এতদিন কেহ ছিল না। পরের জন্য প্রয়োজন হইলেই সে যদিও প্রাণপণ করিত, সে-প্রয়োজন ফুরাইয়া গেলে অথবা চোখের আড়াল হইলেই কাহারও কথা তাহার আর মনে থাকিত না । যাহারা সম্মুখে থাকিত তাহাদের সেবার দাবি মিটাইয় তাহার সময় এবং সামর্থের কিছুমাত্র আর অবশিষ্ট থাকিত না, এবং সেব করিয়া ছাড়া মানুষের সঙ্গে আর যে কিরূপে সম্বন্ধ স্থাপন এবং রক্ষা করিতে হয় তাহাও সে জানিত না । দেহ-মনে ধে একটা চূড়ান্ত নির্ভরের প্রয়োজনকে অজয় অলক্ষ্যে নিজের চতুদিকে সারাক্ষণ বহন করিত, হইতে পারে কোনও অৰ্চিপ্তিত উপায়ে স্বভদ্র প্রথমদৃষ্টিতেই তাহার পরিচয় পাইয়াছিল, কিন্তু কেন যে প্রথম হইতেই অজয়কে তাহার এত বেশী ভাল লাগিতেছে তাহ নিজে জানে না । মন্দিরের নিমন্ত্রণরক্ষা করিতে অজয় আজও ধায় মাই বটে, তবু এই ক’দিনেই আরও একটি মানুষের মধ্যে তাহার মনের একটা আশ্রয় গড়িয়৷ উঠিতেছিল, সে বীণা ৷ কিন্তু বাণাকে তাহার ভাল লাগিতেছে ইহার বেশী তাহার সম্বন্ধে আর-কিছু সে একদিনও ভাবে নাই। এই মেয়েটি এমনই যে ইহাকে লইয়া ভাবিতে পারা যায় না, অলক্ষ্যে সে সমস্ত ভাবনার নিবৃত্তি করিয়া দেয় । সমস্ত ভাবনী-চিন্তার চূড়ান্তনিবৃত্তিই অজয়ের এখনকার মনের অবস্থায় তাহার সৰ্ব্বাপেক্ষা কাম্য । দ্বিতীয়বার ক্লাবে যাওয়া লইয়া সে স্বভঙ্গের সঙ্গে যথারীতি তর্ক করিয়াছিল, বলিয়াছিল, “তুমি যেটাকে ক্লাব বলছ স্বভদ্র, আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি সেটা প্রিয়গোপালবাবুদের বাড়ির বৈঠকখানা। অকারণে এক অপরিচিত ভদ্রলোকের বাড়িতে হঠাৎ কেন আমি ধাতায়াত স্বরু করব বুঝতে পারছি না।” - সুভদ্র বলিয়াছিল, “আমরা যে ক্লাবের জন্তে আলাদা বাড়ি ভাড়া করিনি, প্রিয়দার বাড়িতে জায়গা চেয়ে নিয়েছি, সেটা আমার ইচ্ছাক্রমেই ঘটেছে।” অজয় বলিয়াছিল, “তা জানি । তোমার ইচ্ছাঅনিচ্ছাটাই এক্ষেত্রে যদি একমাত্র ভাববার কথা হুত তাহলে আমার কিছুই বলবার থাকৃত না ।" স্বভদ্র বলিয়াছিল, “প্রিয়দাদের অনিচ্ছা-সত্ত্বেও আমি তাদের ওপর চড়াও হয়ে অত্যাচার মুরু করেছি, এই ধারণা কি তোমার জন্মেছে ?” অজয় বলিয়াছিল, "তা আমি বলতে চাইনি। হয়ত এই ক্লাব সম্বন্ধে তোমার যতখানি উৎসাহ, তোমার প্রিয়দাদের উৎসাহ তার চেয়ে কিছু কম নয় । কিন্তু ভুলে ষেও না, উৎসাহের অভাব ঘদি তাদের দিকে কোনোদিন ঘটেও, তোমাকে সেটা জানতে দেওয়া র্তাদের পক্ষে সহজ হবে না। তুমি সংসারী নও, সমাজের কাছে তোমার কোনো বিষয়ে কোনো দাবিদাওয়া নেই, যদি এই ক্লাব থেকে কখন কোনো অনর্থের সূত্রপাত হয়, তোমার কাছে তা নিয়ে কেউ জবাবদিহি দাবি করবে না, তোমার প্রিয়দা এরং উরে স্ত্রীর কাছেই করবে। তারা বুদ্ধিমান মানুষ, এ আশঙ্কার কখন ধে তাদের মনে উদয় হয়নি এ হতেই পারে না। এমনও ত হওয়া সম্ভব যে, অত্যন্ত সহৃদয় এবং অমায়িক