পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সঙ্কলন শ্ৰীচারুচন্দ্র ভট্টাচার্য সম্পাদক, পরিভাষা সমিতি, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙ্গাল ও অন্যান্য বিবিধ প্রাদেশিক ভাষায় দীর্ঘকাল ধরিয়া বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সঙ্কলনের কার্য বিক্ষিপ্তভাবে চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু দেশীয় ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনার প্রয়োজন ও প্রচলন অতি অল্পমাত্র হওয়ায় এই কার্য জন-সাধারণের তেমন দৃষ্টি আকর্ষণ করে নাই, এই কার্যে ব্যাপৃত মুষ্টিমেয় কয়েক জন ব্যক্তির মধ্যেই ইহার আলোচনা নিবদ্ধ ছিল । সাহিত্যিক সমাজে এই পরিভাষার তেমন চাহিদ না থাকায় এই কার্যে ব্ৰতী পণ্ডিতবর্গকে সাধারণের মুখ চাহিয়া কার্য করিতে হয় নাই –সুচিত পরিভাষা সর্বজনগ্রাহ হইবে কি না,—সুবিধাবাদী কাঠিন্ত-বিরোধী জনসাধারণের ইহা মুখরোচক এবং সাধারণ সাহিত্যে প্রয়োগের উপযুক্ত হইবে কি না এরূপ বিচার অনেক স্থলে তাহদের করিবার কোনও প্রয়োজন হয় নাই। ফলে, বৈজ্ঞানিক সাহিত্য যখন অল্পবিস্তর রচিত হইয়াছে তখন রচয়িতার রুচি অনুসারে এক-এক গ্রন্থে এক-এক রূপ পরিভাষা ব্যবহৃত হইয়াছে। বর্তমানে কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়াছে। মাতৃভাষার সাহায্যে বিজ্ঞানাদি বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা হইতেছে। স্বতরাং পঠিতব্য পুস্তকে কিরূপ ভাষা ব্যবহৃত হইবে তাহ নিদিষ্ট করিয়া দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অবশ্যকতব্য হুইয়া দাড়াইয়াছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কতৃপক্ষ কিছুদিন হইল পরিভাষা-সঙ্কলন কাযে অবহিত হইয়াছেন । কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর ভার দিয়া তাহারা নিশ্চিন্ত হন নাই বা কোন প্রতিষ্ঠানবিশেষ হইতে বা কোন ব্যক্তিবিশেষ কতৃক প্রচারিত পরিভাষা নির্বিচারে গ্রহণ করিবার উপদেশ দিয়াই তাহদের কতব্য পরিসমাপ্ত হইয়াছে বিবেচনা করেন নাই। পরিভাষা-সঙ্কলনব্যাপারে বিশ্বপিয়ালয় কোন পদ্ধতি অবলম্বন করিয়াছেন এবং তাহার ফলে কবি কিরূপ ভাবে অগ্রসর হইতেছে সাধারণের অবগতির জন্য এ স্থলে তাহা নির্দেশ করা যাইতেছে। ১২ গত বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বপ্রথম এই কার্যে হস্তক্ষেপ করেন। প্রত্যেক বিষয়ে পরিভাষা সঙ্কলনের জন্য সেই সেই বিষয়ের পণ্ডিতগণকে লইয়া এক-একটি ক্ষুদ্র শাখা-সমিতি গঠিত হয়। কার্য যাহাতে দ্রুত অগ্রসর হইতে পারে সেই উদ্দেশ্যে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকদিগকে লইয়াই এই সকল শাখা-সমিতি গঠিত হয়। বিভিন্ন গ্রন্থে ও পত্রিকায় পণ্ডিতবর্গ এ পর্যন্ত যে সমস্ত পারিভাষিক শব্দ প্রচার করিয়াছেন শাখা-সমিতি সেই শব্দগুলি সংগ্রহ করেন। এই শব্দগুলির মধ্যে যে যে শব্দ এই শাখা-সমিতি সঙ্গত বলিয়া বিচার করিয়াছেন সেই সেই শব্দ তাহার প্রস্তাব করিয়াছেন এবং যে সকল স্থলে কোন শব্দ পাওয়া যায় নাই বা প্রস্তাবিত শব্দগুলির মধ্যে কোনটি স্বসঙ্গত বলিয়৷ বিবেচিত হয় নাই সেস্থলে সমিতি নুতন শব্দ প্রণয়ন করিয়াছেন । তৎপরে গত সেপ্টেম্বর মাস হইতে পরিভাষা কেন্দ্রীয় সমিতি বিভিন্ন শাখা-সমিতির প্রস্তাবিত শব্দগুলি বিচার করিতে প্রবৃত্ত হন। কেন্দ্রীয় সমিতি যখন যে শাখাসমিতির শব্দ বিচার করেন তখন সেই শাখা-সমিতির সদস্যগণ উপস্থিত থাকিয়া কার্যের সহায়তা করেন । এই কেন্দ্রীয় সমিতি কেবল বৈজ্ঞানিক সদস্য লইয়া গঠিত নহে। বাঙ্গাল, সংস্কৃত ও অন্যান্ত সাহিত্যে অভিজ্ঞ একাধিক ব্যক্তিও এই সমিতির সদস্ত। প্রস্তাবিত শব্দ বিজ্ঞানশাস্ত্রে পরিগৃহীত অর্থ প্রকাশ করে কি না, অধ্যাপনাকালে বা সাহিত্যরচনায় ঐ শব্দ ব্যবহার করিতে কোন অসুবিধা হইবে কি না, ব্যাকরণের কোনও রূপ দোষ ইহাকে কলুধিত করিয়াছে কি না, শব্দশাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে ইহা প্রস্তাবিত অর্থ প্রকাশ করিতে সমর্থ কি না, প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় সমিতির বিভিন্ন সদস্য স্বতন্ত্র ও সম্মিলিত ভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে আলোচনা করেন ।