পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণক্ষ্মণ श्रटै ७ खमॉarञा $\t তাহাজের ভোগে কতকটা সংযম থাকে ; কারণ, তাহাদিগকে উপার্জনের জন্ত পরিশ্রম করিতে হয়। কিন্তু যাহারা পরের উপাঞ্জিত অৰ্থ ভোগ করে, তাহদের সংযমের প্রয়োজন কম। বিশেষতঃ এই অর্থ যদি অযাচিত ভাবে অপরিমিত পরিমাণে আসিতে থাকে, তাহা হইলে সেখানে সংযমের ছায়াও থাকে । না। ঠিক এই জিনিষটি খ্ৰীষ্টান-জগতে সন্ন্যাসীদের বেলায় ঘটয়াছিল। অনেক মঠে এত পাপ আচরিত হইত, যে, তাহ কল্পনা করাও কঠিন। কোন কোন মঠে পুরুষের বেশে স্ত্রীলোক যাতায়াত করিত ; অথচ মঠাধীশরা সবই কামিনীকাঞ্চন পরিত্যাগী সন্ন্যাসী বলিয়া পরিচিত হইতেন । এই সব পাপাচরণ যখন আবিষ্কৃত হইল, তখন জোর করিয়া রাজার আইন মঠগুলি সব ভাঙিয়া দিতে বাধ্য হইল। * এদেশেও দু-চারটা মোহন্তের মোকদ্দমা হইয়াছে ; এবং সেখানেও অকৃতদার, প্রকাণ্ডে কামিনী-কাঞ্চন-ত্যাগী সন্ন্যাসীদের গুপ্ত পাপাভিনয় আবিষ্কৃত হইয়াছে। এদেশেও দু-একটা আশ্রম পুলিসকে সঙ্গীনের সাহায্যে ভাঙিয়া দিতে হইয়াছে। সুতরাং :খ্ৰীষ্টান-জগতে মঠ ও আশ্রমে যাহা ঘটিয়াছে, তাহার সহিত আমরাও অপরিচিত নহি । এত সহজে এদেশে মঠ ও আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হইয়া যায় এবং এত সহজে লোকের বৈধ কিংবা অবৈধ উপার্জনের অর্থ এই সব মঠ ও আশ্রমে প্রবেশ করে যে, অনাচার ও পাপাচার মোটেই আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। এত দেব-বিগ্রহ হিন্দু সমাজে আছে এবং ইহাদের ধনসম্পত্তি এত প্রচুর যে, এসবের প্রকৃত শালিক যাহারা—অর্থাৎ মোহন্ত, পাণ্ডা প্রভৃতি—তাহার সহজেই ভোগ-বিলাসের পথে প্রলুদ্ধ হইতে পারে। হইতে পারে বলিলেই যথেষ্ট বলা হইল না ; কারণ, চক্ষুষ্মান ব্যক্তি মাত্রেই স্বীকার করিবেন যে, একাধিক স্থলেই এ-সব অর্থ ভোগ-বিলাসেই ব্যতি হয়। শিষ্য ভক্তি করিয়া গুরুকে নানা ফ্রব্য উপঢৌকন দেয়; শুরুর পায়ে অর্থের থলি নিঃশেষে ঢালিয়া দেয়; ইহাতে শিষ্ঠের ভক্তির পরিচয় হয়ত পাওয়া যায়। কিন্তু সৰ্ব্বত্যাগী সন্ন্যাসী এই অর্থ গ্রহণ করেন, তারা ইমারত নিৰ্মাণ করেন,

  • Burnet—History of the Reformation of the Church of England, p. 142.

এবং সেই ইমারতে বাস করিয়া শিষ্য-শিষ্যাণীর হাত-পাখার হাওয়া উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে ভগবদারাধনা করেন,—এট .. কোন রকমের সন্ন্যাস ? ত্যাগ ও ভোগের এই বিকৃত সমন্বয় কি করিয়া যে শিক্ষিত লোককে মোহিত করে, তাহা আমরা ভাবিয়া পাই না ; কিন্তু লোককে মোহিত হইতে দেখি । অর্থের মালিক এবং অর্থের ব্যবহর্জা সন্ন্যাসী নন। এই সোজা কথাটা বিশ্বত হওয়া অমার্জনীয়। স্বতরাং যে-মঠ ও আজম ধনসম্পত্তির আশ্রয়, সেই মঠ ও আশ্রমের অধিপতিরাও সন্ন্যাসী নহেন। অন্য ধনীকে সমাজ যে-চক্ষে দেখে, ইহাদিগকেও সেই চক্ষে দেখিবার অধিকার সমাজের আছে । বৰ্ত্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজের পুনর্গঠন জগতের সম্মুখে একটি বিরাট প্রশ্ন। ভারতীয় সমাজও এই প্রশ্ন অবহেলা করিতে পরিবে না। সমাজে সঞ্চিত অর্থের যথাযথ বণ্টন অর্থনীতির একটা বড় সমস্ত । কোনও দেশের সমস্ত সম্পত্তির দশ ভাগের নয় ভাগ সে দেশের এক-দশমাংশ লোকে ভোগ করিবে, আর বাকী নয়-দশমাংশ লোক এক-দশমাংশ অর্থ লইয়া সন্তুষ্ট থাকিবে,—এটা এখন যুক্তিম্বারা সমর্থন করা কঠিন। স্বতরাং মঠ ও আশ্ৰম-সমূহের অধিকারে যে প্রভূত সম্পত্তি রহিয়াছে, তাহার ব্যবহার লইয়া একটা প্রশ্ন সমাজকে তুলিতেই হইবে। কিছু দিন আগে তারকেশ্বরে যে সত্যাগ্ৰহ হইয়াছিল তাহার মধ্যে মোহস্তের সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহারের কথাটাই ছিল বড় কথা। তারকেশ্বরের ব্যাপার সম্প্রতি অন্য জাকার ধারণ করিয়াছে। কিন্তু দেব-বিগ্রহের এবং মঠ ও আশ্রমের অধিপতিদের অধিকারে যে বিপুল সম্পত্তি প্রতিদিন সঞ্চিত হইতেছে, তাহার কথা ভারতীয় ব্যবস্থাপক, রাষ্ট্রনেতা এবং অর্থনীতিবিদকে এক দিন ভাবিতেই হইবে। ভারতের সমুদয় দেবোত্তর-সম্পত্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করিবার জন্য আইন-প্রণয়নের চেষ্টা একবার ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভায় হইয়াছিল। তখন কথাটা চাপা পড়িয়াছিল এই যুক্তিতে যে, ধর্শ্বে হস্তক্ষেপ করা ভারতে ইংরেজ-শাসনের নীতির বাহিরে। নিজেদের হাতে শাসনশক্তি পাইলে কোন ভারতবাসী আর এ যুক্তি ব্যবহার করিতে পারিবে না। কাজেই মঠ ও আশ্রম ইত্যাদির ধনসম্পত্তির কথাটা অম্বুব ভবিষ্যতে একটি অনিবার্ঘ্য প্রশ্ন। .