পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ජෑෆණ් প্রবাসী ১৩৪২ তত বড় কথা ? তুমি কার সামনে দাড়িয়ে কথা বল্‌ছ জান ?” ধাত্রী বলিল, “আমি তা জানতে চাই না। আমি কলকাতার নাস থাটব খুটব টাকা রোজগার করব। আপনার আমার পাঞ্চন টাকা দিয়ে দিন, আমি আজই চ'লে যাচ্ছি।” - চন্দ্ৰজ্যোতি তাহাকে ঘাড় ধরিয়া বাহির করে আর কি ? শঙ্কর উঠিয়া বলিল, “দাড়াও, আগে ব্যাপার কি হয়েছে দেখতে দাও, তার পর যা করবার করে।” খাজাঞ্চিখানায় খবর গেল, কেন এমন গোলমাল ? খাজাঞ্চি বলিল, “বড় বৌরাণী প্রতিমাসেই সকলের বেতন লিখিয় পাঠান, এবারেও তিনিই লিখিয়া দিয়াছিলেন—দশ টাকা । আমরা বলতে তিনি বললেন, ছেলের বিয়ের মাইনে এযাবৎ কখনও খাস থেকে দশ টাকার বেশী দেওয়৷ হয় নি, আজ হঠাৎ হবে কেন ? তোমরা ঐ টাকা পাঠিয়ে দাও, যে বেশী চায় সে যেন আমার সঙ্গে দেখা করে।” গুনিয়া চন্দ্রজ্যোতি বলিলেন, "এমনি ক’রে আমাকে আমূলা-গোমস্তার সভায় অপমান করা? আমি যে ওকে চল্লিশ টাকা মাইনে ব'লে রেখেছি তা বড় বৌরাণী বেশ জানেন, কেবল র্তার পায়ে ধ'রে অল্পমতি নিয়ে আসি নি, এই আমার অপরাধ ” খাজাঞ্চিদের গোলমাল এবং ধাত্রীর ঔদ্ধত্যের দোহাই দিয়া দুই পক্ষকেই অকারণ যথেষ্ট বকুনি দিয়া ধাত্রীকে বিদায় দেওয়া হইল, কারণ তাঁহাকে রাখিতে গেলে প্রকাশ্বে স্বরেশ্বরীকে সমস্ত গোলযোগের জন্ত দায়ী করিতে হয়। নিরপরাধ খাজাঞ্চি ইতিমধ্যেই এবাড়ির হালচাল বুঝিয় গিয়াছিল। সে বুঝিল, ইহা ঝিকে মারিয়া বেীকে শিক্ষা দেওয়া মাত্র ; স্বতরাং বড় বৌরাণীর পরামর্শ না লইয়াও অতঃপর সে ছোট তরফের সমস্ত দেনা-পাওনা চন্দ্ৰজ্যোতিকে দিয়াই লিথাইয়া লইয়া যাইত। কিন্তু নিরপরাধিনী মাস বেচার আপনার দোষ কোথায় না দেখিতে পাইয়া সারা কলিকাতায় জমিদার-বাড়ির ন্যায়বিচারের কাহিনী জয়ঢাক পিটাইয়া প্রচার করিয়া বেড়াইতে লাগিল । দুই পক্ষে মন-কষাকষি চলিতে লাগিল, পরস্পরের ক্রটি আবিষ্কারের জন্য পরস্পর সহস্ৰ চক্ষু মেলিয়া চারি দিকে অন্বেষণ করিতে লাগিল। কিন্তু বাহিরে এখনও চন্দ্রজ্যোতি বিকালবেলা গা ধুইয়া ছোপানো কাপড় পরিয়া পানের বাট হাতে স্বরেশ্বরীর বারান্দায় সাতরাজ্যের গল্প ফাদিতে ও পান বিনিময় করিতে যান ; স্বরেশ্বরীও সকাল হইলেই পূজাপাট সারিয়া ছোট জা’র থোকাকে কোলে লইয়া আদর করিয়| আসেন। কিন্তু যেদিন ভিতরের আগুন অকস্মাৎ ঠিকরাইয় বাহিরে আসিয়া পড়িল, সেদিন একেবারে দাবানল ঘটিয়া গেল । সন্তানাদি হইবার পর রাজবাড়ির বউরা সকলেই মন্ত্র লইয়া থাকেন, এ বাড়ির এই রীতি। চন্দ্রজ্যোতির ছেলে বছর দুই-তিনের হইলে তিনি শিবমন্ত্ৰ লইলেন এবং বলিলেন, “শুধু মন্ত্র নিয়ে আমার মন ওঠে না, মন্ত্রই যখন আমি নিলাম তখন আমার নামে আমি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে যেতে চাই। চিরকাল যেন মাহুষ আমার নাম করে, এমন কিছু ক'রে যাবার আমার বড় সাধ হয়।” স্বামী শঙ্কর বলিলেন, “মন্দির প্রতিষ্ঠা না করলেই কি আর তোমার নাম থাকবে না। তুমি বড়রাণী স্বরেশ্বরীর ছোট জা, এইতেই দেখে তোমার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।” চন্দ্রজ্যোতি বলিল, “থাকৃ, আর বেশী রসিকতায় কাজ নেই। অমন নাম হওয়ায় আমি খ্যাংরা মারি । তোমায় আমার মন্দির করে দিতেই হবে। রূপাই নদীর ধারে ভাঙা মন্দিরে যে মহাকালের মূৰ্ত্তি খাওলা ধরে পড়ে রয়েছেন, সেই মূৰ্ত্তি আমি আমার মন্দিরে প্রতিষ্ঠা ক’রে যাব, তুমি আগে তাকে নিয়ে আসবার ব্যবস্থা কর।” শঙ্কর আয়োজন আরম্ভ করিলেন । জোয়ান জোয়ান লাঠিয়ালদের ডাকিয়া বলিলেন, “বাঁকে ক’রে তোরা মহাকালকে তুলে নিয়ে আয়। আমি আমাদের পুকুর-পাড়ে কুলুঙ্গি বঁধিয়ে তাকে নামাব, তার পর ঘটা ক’রে প্রতিষ্ঠা হবে।” চক্সজ্যোতি বলিল, “কিন্তু সাবধান, বড়রাণী যদি জানতে পারেন যে তাকে ডিঙিয়ে আমি শিব প্রতিষ্ঠা করছি, তাহলে ছিষ্ট উন্টে দেবেন।” ” শঙ্করনারায়ণের প্রিয় লাঠিয়াল গোপীনাথ বুক ঠুকিয়া