অগ্রহায়ণ বাঙালীর পল্লীজীবন-পুনর্গঠনে ডাক-চরিত্রের উপকারিত Roము চাষ করিতে হইলে বাস চাই। চাষ করাইতে হইলেও তাই। শহরে বসিয়া চাষ হয় না। ধনীনিধন-নিৰ্ব্বিশেষে পল্লীতে ফিরিতে হইবে। কোনও স্বনির্বাচিত পল্লীতে স্থায়ী ভাবে বাস করিতে হইবে। পরিহর গারডু গায়ের বাস । ‘পরিহর দুই গ্রামের বাস । রাজা প্রজাপালক এবং ধাৰ্ম্মিক হইবেন। প্ৰজাগণেরও রাজ-সেবায় অনুরাগ থাকা চাই। বসত-প্রকরণ :-- যৌথ রাজ প্রজ৷ পীলে । তোথ বসত করিবেক ভালে । ধাৰ্ম্মিক রাজাতে সুখ পাই । নিত্যি রাজ! সেবিতে চাই ॥ যেমন রাজা তেমন বেশ । যেখানে জিয়ে সেখানে দেশ । ইত্যাদি । বাস্তুর স্থান নির্বাচন দরকার । পল্লীর যে-কোনও অংশে গৃহনিৰ্ম্মাণ চলে না। পল্পীজীবন যাপনের সুবিধাঅসুবিধা দেখিতে হইবে । বিপদ-আপদের কথা ভাবিতে হইবে। বাসবাট সম্পূর্ণ নিজের হইবে। পরিহর পরপৃহে বাস ।' "বসত করিবে মধ্য গ্রামে। তাহার অধিক দুঃথ যার জল কানা বাড়ী । ‘পরিহর নদীতীরে বাস । ‘পরিহর বাস্তুর কাছে বন । ‘পরিহর নিকটে হাট। ইত্যাদি । জমি চষিয়া লোহালক্কড়, ইটপাথর উৎপাদন করা যায় না। ধনসঞ্চয় এবং ধনরক্ষা মানুষ মাত্রেরই করা কৰ্ত্তব্য। বড় বড় দালাল কোঠা পল্লীগ্রামে শোভাও পায় না । মাটি, বঁাশ এবং খড় হইলেই পল্লীগ্রামে অতি অল্প খরচে বা বিনাখরচে উত্তম বাসগৃহ নিৰ্ম্মিত হইতে পারে। বঁাশ পুতিলেই গাছ। চাষ থাকিলে খড়ও মূল্য দিয়া কিনিতে হয় না । চারিদিকে প্রাচীর দিয়া, প্রশস্ত উঠান রাখিয়৷ গৃহ নিৰ্ম্মাণ করিতে হয়।—‘মন যদি হয় ফুর উঠান দিয়৷ ইলিহ ঘর। তাহাকে অধিক দুঃখ যার বাড়ী দিয়া বাট।’ গৃহিণী লইয়াই গৃহ । গৃহিণীগণ যদি সস্তান গর্ভে পারণ করিতেও নারাজ হন, তাহা হইলে অবশু পুরুষদের সমবাস না করিলেও চলিতে পারে । ধর্মের মূলস্বত্র কিন্তু মানুষ কোন দিন হারাইবে না। পুরুষদের যাযাবরত্বও নারীদিগের পক্ষে হানিকর। পাশ্চাত্য আদর্শে গৃহস্ত সংসার প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না। সস্তান-প্রতিপালনে নারীদিগের কৰ্ত্তব্যের সীমা নাই। বংশোল্পতি বলিয়াও । একটা কথা আছে। পিতা, মাতা, স্ত্রী, পুত্র, বে, ঝি লইয়া, ভাই ভাই একত্রবাস--গৃহস্থ-লক্ষণ। গৃহস্থ নষ্ট যোথা ছুরি। গৃহস্থের প্রতিটি স্ত্রীলোক শতকৰ্ম্মান্বিত হইবেন । বিবাহ করিব যার মাত ভালি। শতকৰ্ম্মান্বিত তার ঝিয়ালী ॥ পুরুষেরা একযোগে চাষ করিয়া ধান্ত, তুলা, তরিতরকারি উৎপাদন করিবেন। স্ত্রীলোকেরা টেকির দ্বারা ধান্ত হইতে চাউল তৈয়ার করিবেন, রান্না করিবেন, স্থত কাটিবেন। ‘যার ঘরে নাই টেকির মুসল। তার দরে কি উপজিবে কুশল ॥’ ‘মিষ্ট রাধে সরু কাটে। তার ঘর কভু না টুটে ॥’ গুহশান্তি চাই। স্ত্রীলোকগণ আয় দেখিয়া ব্যয় করিবেন। ‘আয় দেখিয়া করিবেক ব্যয় । তার দুঃখ কভু না হয় ।" অতি ক্ষুদ্র ব্যাপারেও ব্যয়সঙ্কোচ করিতে হইবে। রৌত্রে কাটা কুটাতে রাধে। কাষ্ঠ, খড় বর্ষাকে বঁধে । ‘খায় ফেলায় সব প্রচুর। ডাক বলে নিকাল দূর ' 'রৌড়ে রাধে কাষ্ঠ খড়ে। বর্ষ হইলে চাল কঁাড়ে । ভিজাহাতে লবণ র্কাড়ে। তার ঘর . লক্ষ্মী ছাড়ে ॥’ ‘যে দেখে তাই কিনে প্রচুর। তার স্বামী হয় দূর ॥ স্বামী-ভক্তি স্ত্রীলোকদিগের প্রধান ধৰ্ম্ম । ‘বড় বংশে যার জন্ম । স্বামিভক্তি তার ধৰ্ম্ম ॥’ ইহা শুধু অস্তরে রাখিলেই চলিবে না। "...স্বামি ভজে প্রদীপ জালি ॥ স্বামির সেবা সাঝে বাতি। বলে ডাক স্বর্গে স্থিতি ॥’ ‘স্বামির পিড়ি পায়ে টালে’ ‘স্বামির শখ্য পায় তোলে’ ‘এমন স্ত্রীতে যার বাস । মুখ নাহি তার পাশ ॥’ লজ্জা, পরিচ্ছন্নতা, অল্প এবং মৃদুবচন স্নগুহিণীর লক্ষণ । ‘অতিথি দেখিয়া মরে লাজে ‘কাৰ্থে কলসি জলকে যায়। হেঁট মাথায় কারো পানে না চায় ॥ ‘গুহিণী হইয় ফুবোল বলে ‘এক বলিতে অনেক বলে’ উচিত কহিতে পাড়ে গালি । পুত্র, ঝি, বেীকে বলে বিরালী ॥’ ‘হেন গৃহে যার বাস। মুখ ছাডুক জীবনের আশ ॥’ ‘তাহার অধিক দুঃখ যার মুখরা নারী’ । গৃহিণীগণ স্বৰ্য্যোদয়ের পূৰ্ব্বে গাত্ৰোখান করিয়া গৃহকৰ্ম্মে রত হইবেন। উদ উঠিতে দেই ছড়া'--অলক্ষণ। আপন আপন কৰ্ম্মসম্পাদনে যথাসম্ভব পরের আশা ত্যাগ করিবেন।
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৯
অবয়ব