পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ গো-ব্ৰাহ্মণ হিতায় চ NෂGN —কুশিক্ষার ফল মা, সনাতন-ঠাকুর বলিয়া চলিল— আমার জিতুই কোন একটা জজ-মাজিষ্টর না হ’ত, খাস মাথা ছিল। শিবু পণ্ডিত বললে, এ বয়সেই ছেলেটাকে ইস্কুল ছাড়িয়ে দিলে ঠাকুর-মশাই ? বললুম, তোমার ইস্কুলে দূর থেকেই দণ্ডবং দি ভায়, দ্ব-পাত ইঞ্জিরি পড়ে না-মানবে জাত-জন্ম, না-মানবে ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম ---দিয়েছি যতীন কবরেজের কাছে, কোন মতে নিদানের দুটো অধ্যায়— বিনয় দুয়ারে আসিয়া দাড়াইল, পিছনে বনমালী। —এই যে এয়েছে বাবাজী, আরে হাজার হোক নিত্যানন্দের বেটা ত দেব দ্বিজে অমন ভক্তি এই পোড়া কলিতে আর কাটা লোকের---কিন্তু চট্‌ ক’রে অমনি ডুবটা দিয়ে এলে না কেন বাবা ? বিনয় রুখিয়া কহিল—তোমার এ ছাপ-ছোপে ছাগলভেড়ায় ভয় পাবে ঠাকুর-মশাই, মামুষে নয়---কিন্তু সাবধান করে দিচ্ছি এ মুখো আর হয়ে না--- কথা বলিতে বলিতে বিনয় সোজা তার ঘরে ঢুকিয়াই দরজা বন্ধ করিয়া দিল । কিছুক্ষণ কাহারও মুখে কথা বাহির হইল না। নিত্যানন্দ আসিয়া ডাকাডাকি স্বরু করিল এবং অবশেষে নিজের মৃত্যু কামনা করিয়া নারায়ণী দিল বিলাপ জুড়িয়া। কিন্তু ভিতর হইতে কোন সাড়াশব্দ আসিল না । --কি হবে বাবা ? —হবে আমার মুণ্ডু । সনাতন বাজিয়া উঠিল—আমরা ছাগলভেড়া বই ত নয় ? কিন্তু তাও বলি নেতার বেী, এ-অহঙ্কার চিরকাল থাকে না- বলরাম ঘোষের ছেলে প্রাণকৃষ্ণ-চেন নিশ্চয়, মনের দেমাকে তিনি কবচ নিলেন না! কিন্তু কার কি হ’ল শুনি—বছর নাবুরতেই ত সেই রেলের তলায় কাটা পড়লি ! - নারায়ণী শিহরিয়া উঠিল। কাদ-কঁাদ স্বরে কহিল—আমন কথা বলবেন না ঠাকুরমশাই, আমার বড় দুঃখের ছেলে বিহু— সনাতন কি বলিতে যাইতেছিল, এমন সময় বিনয় ঘর স্টতে বাহির হইল। পরনে পরিষ্কার পাঞ্জাবী ও ধুতি, বগলে খানচুই কাপড়ের ছোট পুটুলী। রাগে নিত্যানন্দ চীৎকার করিয়া উঠিল—কোথা যাচ্ছিস তুই ? —বাবুদের কাছারীতে, ছুটিও ज्र भूब्रिग्न स्थल-•-निদুই আগে যাওয়াই স্থির করলুম। তোমার কি ক’রে যাওয়া হবে শুনি ? রবেীবর্জং চতুঃপঞ্চং এই বারবেলায় ? যাত্রায়ং মরণং কালে—এ সনাতন-ঠাকুরের মনগড়া ব্যবস্থা নয় বাপু, তার চেয়ে অনেক বড় মুনিঋষিদের শাস্ত্রীয় বিধান। পাগলামি রাখ—তার চেয়ে— কবচ-বন্ধনের আশায় সনাতন তাহার কাছে আগাইয়া আসে । বিনয় তাহার পানে ক্ৰক্ষেপ মাত্র না করিয়া তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া পড়িল। কিন্তু দুই পা না চলিতেই পিছনে একটা বিকট চীৎকার গুনিয়া ফিরিতে হইল। চাহিয়া দেখে, নারায়ণী বিলাপ করিতে করিতে ছুয়ারের মধ্যখানে সৰ্ব্বাঙ্গ লুটাইয় অবিরত কপাল ঠুকিতেছে। নিত্যানন্দ মাথা গুজিয়া বসিয়া পড়িয়াছে, যেন এই মাত্র তাহার কি সৰ্ব্বনাশ হইয় গেল । ভাবগতিক না বুঝিয়া বনমালীও প্রবল কান্না জুড়িয়া দিয়াছে। * বিনয় একবার স্থিরদৃষ্টিতে সনাতনের পানে চাহিল। একবার মনে হইল প্রাণপণে সে তাহার টুটিটা চাপিয়া ধরে।-- ওদিকে নারায়ণীর কপাল রক্তাক্ত হইল বুঝি। বিনয় সেইখানেই বসিয়া পড়িল । তাহার সমস্ত ক্রোধ জল হইয়া দুই চক্ষু প্লাবিত করিয়া দিল। নিঃশব্দে সে তাহার কম্পিত দক্ষিণ হস্তটি সনাতন-ঠাকুরের দিকে বাড়াইল । সনাতন চেচাইয়া কহিল—ওঠ নেতার বেী, ওঠ হে নেতা, ছেলের স্বমতি হয়েছে। সনাতন শৰ্মার ঠেলায় কত ঘাগী ভূত সিধে হয়ে গেল, এ ত তোমার দুধের ছেলে।••• দেখ ত বাবা, সেষ্ট ত হ’ল, মিছেমিছি কি হাঙ্গামটাই তার পর বিস্ময়বিমূঢ় স্বামী-স্ত্রীর পানে বিজয়-পৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া উচ্চকণ্ঠে স্তব আবৃত্তি করিতে করিতে গ্রহাচাৰ্য্য সনাতন নীলস্থতায় বাধা কবচটি বিনয়ের হাতে বাধিয়া দিতে লাগিল ।