পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

지 দুইখানি বল্লালচরিতেই (একখানির মূলগ্রন্থে ও অপরখানির পরিশিষ্টে ) বল্লালসেনের অগ্নিকুণ্ডে প্রাণবিসর্জনের বিবরণ আছে, তবে বিবরণে কিছু কিছু পার্থক্য দেখিতে :ওয়া যায়। রামপালে বল্লালবাড়ির উপরে একটি গৰ্ত্তকে এখনও অগ্নিকুণ্ড বলা হয়। স্থানীয় প্রবাদ, বায়াতুম্ব বা বাবা আদম নামক এক মুসলমান নেতার সহিত যুদ্ধে জয়ের পর বল্লালসেনের অনবধানতাবশতঃ উহার কপোত তাহার নিকট ইষ্টতে উড়িয়া রাজবাড়িতে ফিরিয়া যায়। পুরমহিলারা কপোত নেপিয় রাজার মৃত্যু হইয়াছে মনে করিয়া অগ্নিকুণ্ডে প্রাণ বিসর্জন দেন এবং পরে বল্লালসেন যুদ্ধক্ষেত্র হইতে ফিরিয়া সমস্ত বিষয় অবগত হইয়া স্বয়ং অগ্নিকুণ্ডে নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন। আনন্দভট্ট-কৃত মূল বল্লালচরিতের মতে মুসলমানদিগের সহিত বল্লালের সংঘর্ষ ঘটিবার কারণ পুরোহিতদিগের মধ্যে কলহ। ঘটনাটি নাকি এইরূপ :—বল্লালের রাণী পদ্মাঙ্গী মহাস্থানে মহাদেবের পূজা দিতে গিয়াছিলেন। সেখানে প্রাপ্তির ভাগ লইয়। বল্লাল-পুরোহিত বলদেব ও স্থানীয় মোহাস্ত ধৰ্ম্মগিরির বিবাদ হয়, ফলে মোহান্ত পুরোহিতকে সেখান ইহঁতে তাড়াইয় দেন। বল্লাল পুরোহিতের অপমানে ক্রুদ্ধ ই ! ধৰ্ম্মগিরিকে নির্বাসিত করেন । ধৰ্ম্মগিরি নিরস্ত হইবার লোক নহেন, তিনি গিয়া মুসলমান-নায়ক বায়াছম্বকে সসৈন্তে বিক্রমপুরে লইয়া আসেন। বায়াদুম্বের সহিত যুদ্ধে বল্লাল জয়ী হইলেও তাহার পারাবত উড়িয়া আসিয়া পূৰ্ব্বোত্ত রূপে তাহার সৰ্ব্বনাশ সাধন করে । অন্য বল্লালচপিতের পরিশিষ্টাংশের মতেও মূল ঘটনাটি এইরূপ, তবে বায়ু দুগ্ধ (নামটি এই গ্রন্থে বায়াচুম্ রূপে আছে ) রামপালে আসেন নিগৃহীত যোগী পীতাম্বরের শাপের ফলে—ধৰ্ম্মগিরির চক্রস্তে নহে। এদেশে বেদব্যাসের আমল হইতে সাধারণতঃ যেভাবে ইতিহাস রচিত হইয়া আসিয়াছে বল্লালচরিত দুখানাতেও উা র বিশেষ ব্যতিক্রম ঘটে নাই। উপরন্তু আমরা এখানে কয়েকটি তারিখ পাইতেছি যাহার কোনটির সহিত কোনটির ষ্টি নাই। আনন্দভট্ট-কুত বল্লালচরিতের মতে বল্লালসেন ১•১৮ শকে প্রাণত্যাগ করেন, কিন্তু অন্ত বল্লালচরিতের মতে স্বয়ং বল্লালের আদেশে তাহার গৃহশিক্ষক গোপালভট্ট ৩• • শকে তাহার বিবরণ লিখিয়া গিয়াছেন এবং আনন্দভট্ট ዓለቆ-–ፀ ジ বিক্রমপুর WSRS ১৫০০ শকে তাহার পরিশিষ্ট যোগ করিয়া দিয়াছেন। আনন্দভট্টের নিজের বল্লালচরিত কিন্তু ১৪৩২ শকে লিখিত। ঐতিহাসিক গবেষণায় বল্লালসেনের রাজত্বের যে কাল নির্ণীত হইয়াছে তাহ ১১০৬ খ্ৰীষ্টাব্দের বহু পরে এবং ১৩৭৮ খ্ৰীষ্টাব্দের বহু পূৰ্ব্বে । প্রাচীন গঞ্জারী বৃক্ষ আবার বায়াদুস্থ ব বাবা আদমের সমাধি ও র্তাহাঁর স্মরণার্থ মসজিদ এখনও সশরীরে রামপাল হইতে কিছু দূরে বৰ্ত্তমান । এই মসজিদের উপর উৎকীর্ণ লিপিতে দেখা যায়, ইহা খ্ৰীষ্টীয় পঞ্চদশ শতকের শেষভাগে নিৰ্ম্মিত । নম্বমূলা জনশ্রুতি:—এইরূপ একটা কথা আছে। জনশ্রীতির একটি মূল থাকিতে পারে, কিন্তু সেই মূলকে বিকৃত আকারে বিপথে লইয়া যাওয়াও জনশ্রুতির একটি কাৰ্য্য । প্রবলপ্রতাপশালী মহারাজ বল্লালসেন যে এই ভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হন নাই তাহা হুনিশ্চিত। ১১০৬ খ্ৰীষ্টাবে র্তাহার মৃত্যু হয় নাই এবং তাহার সময়ে বঙ্গদেশে মুসলমানগণ এতটা বিক্রান্ত হয় নাই যে দিবালোকে হঠাৎ রামপাল রাজধানীতে আসিয়া বঙ্গেশ্বরের সহিত সম্মুখযুদ্ধে অগ্রসর হইতে পারে। যে-দেশে রাজার সমকালে ইতিহাস রচিত হয় না সেখানে পরবর্তী কালে নানা কাহিনী ও কিংবদন্তী শুপীকৃত হইয় ঘটনাগুলিকে বিকৃত আকারে উপস্থিত করে।

  • বিজয়সেনের পুত্র বল্লালসেন সম্বন্ধে এইরূপ ঘটনা অসম্ভব

বলিয়া এবং কিংবদন্তী খুব প্রবল বলিয়া কোন কোন লেখক পরবর্তী কালের দ্বিতীয় বল্লালসেন নামক এক রাজার উপর এই অগ্নিকাগুঘটিত ব্যাপার চাপাইয়া দিয়াছেন।