পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সংগীতের স্থান স্ত্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ংলা দেশে আধুনিক যুগের যখন সবে আরম্ভকাল তখন আমি জন্মেছি । পুরাতন যুগের আলো তখন স্নান হয়ে আসছে কিন্তু একেবারে বিলীন হয় নি। পিছন দিক থেকে কিছু ইঙ্গিতে, কিছু প্রত্যক্ষ, তার কতকটা পরিচয় পেয়েছি। তার মধ্যে জীর্ণ জীবনের বিকার অনেক ছিল, এখনকার আদর্শে বিচার করতে গেলে নানা দিকে তার শৈথিল্য তার দুর্বলতা মনকে লজ্জিত করতে পারে। কিন্তু তথনকার প্রদোষের ছায়ায় এমন কিছু দেখা গেছে যা অস্তম্বর্ঘ্যের আলোর মতে, সে দিনকার ইতিহাসের রোকড়ের থাতায় তাঁকে অন্ধকারের কোঠায় ফেলা চলবে না । তার মধ্যে একটি হচ্ছে সে কালের জীবনযাত্রায় সঙ্গীতের সমাদর। দেখেছি তখনকার বিশিষ্ট পরিবারে সঙ্গীতবিদ্যার অধিকার বৈদগ্ধ্যের প্রমাণ বলে গণ্য হোত। বৰ্ত্তমান সমাজে ইংরেজী রচনায় বানান বা ব্যাকরণের স্থালনকে যেমন আমরা অশিক্ষার লজ্জাকর পরিচয় বলে চম্কে উঠি, তেমনি হোত যদি দেখা যেত, সম্মানী পরিবারের কেউ গান শোনবার সময় শমে মাথা-নাড়ায় ভুল করেছে, কিম্বা ওস্তাদকে রাগ রাগিণী ফরমাসের বেলায় রীত রক্ষা করেনি। তাতে যেন বংশমর্য্যাদায় দাগ পড়ত। সৌভাগ্য-ক্রমে তথনো আমাদের সঙ্গীত রাজ্যে বক্স হাৰ্ম্মেনিয়মের মহামারী কলুষিত করেনি হাওয়াকে ৷ তমুরার তারে নিজের হাতে স্বর বেঁধে সেটাকে কাধে হেলিয়ে আলাপের ভূমিকা দিয়ে যখন বড়ে বড়ো গীত-রচয়িতার ধ্রুপদগানে গায়ক নিস্তব্ধ সভা মুখরিত করতেন । সেই ছবির স্বগম্ভীর রূপ আজো আমার মনে উজ্জল আছে। দূর প্রদেশ থেকে আমন্ত্রিত গুণীদের সমাদর করে উচ্চ অঙ্গের সঙ্গীতের আলর রচনা করা সেকালে সম্পন্ন অবস্থার লোকের আত্মসম্মান রক্ষার অঙ্গ ছিল । বস্তুত তখনকার সমাজ বিদ্যার যে-কোন বিষয়কেই শিক্ষণীয় রক্ষণীয় বলে জানত। ধনীরা তাকে বঁচিয়ে রাখবার দায়িত্বকে গৌরব বলে গ্রহণ করতেন । এই স্বতঃস্বীকৃত ট্যাক্সের জোরেই তখনকার শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা সমাজে উচ্চশিক্ষার পীঠস্থানের স্বষ্টি ও পুষ্টিবিধান করতে পেরেছেন। তখন ধনের অবমাননা ঘটত যদি সমাজের সমস্ত প্রদীপ জালিয়ে রাখবার মহাসমবায়ে কোন ধনীর কৃপণতা প্রকাশ পেত। সরস্বতী তখন লক্ষ্মীর দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি করতে এসে মাথা হেঁট করতেন ন', লক্ষ্মী স্বয়ং যেতেন ভারতীর দ্বারে অর্ঘ্য নিয়ে নম্র শিরে। এমনি সহজেই আত্মগৌরবের প্রবর্তনায় ধনীরা দেশে সঙ্গীতের গৌরব রক্ষা করেছেন ; সে ছিল তাদের সামাজিক কৰ্ত্তব্য । এর থেকে বোঝা যাবে সঙ্গীতকে তখনকার দিনে সম্মানজনক বিদ্যা ব'লেই গ্রহণ করেছে। যে বিদ্যার সঞ্চরণ অক্ষরের ক্ষেত্রে, উপর নীচে তার দুই ভাগ ছিল। এক ছিল শ্রতি স্মৃতি দর্শন ব্যাকরণের উচ্চ শিখর, আর ছিল জনশিক্ষার নিম্নভূমিবৰ্ত্তী উপত্যক । উভয়কেই চিরদিন পালন করে এসেছেন সমাজের গণ্য ব্যক্তিরা । নানা উপলক্ষ্যে র্তাদেরই নিবেদিত দানের নিরস্তুর সাহায্যে নিঃস্বপ্রায় অধ্যাপকের বিনাবেতনে দুর্গম শাস্ত্রভাণ্ডারের সকল প্রকার বিদ্যা বিতরণ করে এসেছেন । বিশেষ বিশেষ স্থানে এই সকল বিদ্যার বিশেষ কেন্দ্র ছিল, আবার ছোট আকারে নানা স্থানে নানা গ্রামে এক একটি ছায়াঘন ফলবান বনস্পতির মতে এর মাধ তুলেছে। অর্ণং দেশের উচ্চ শিক্ষাও দুটি-একটি দূরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে "ি ছিল না, তার দানসত্র ছিল দেশের প্রায় সৰ্ব্বত্রই। তেনি আবার প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঠশালা প্রত্যেক গ্রামর প্রধানদের বৃত্তিতে পালিত এবং তাদের দালানে প্রতি ত ছিল, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধনী দরিত্রের ভেদ ছিল : এর দায়িত্ব রাজার অধিকারে ছিল না, ছিল সম মর আপন হাতে। সঙ্গীত সম্বন্ধেও তেমনি ছিল ছুই ধারা। উচ্চ সঙ্গীতের ধ্যয়সাধ্য চর্চার ক্ষেত্র ছিল ধনশালীদের বৈঠকখানায়। *ে