পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੋਗ পশ্চিমবান্ত্ৰিকী ግጬ স্বর শুনে, পেছন ফিরে চাইতে দেখি, ছুটি যুবতী জামায় হাত তুলে বক দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলুম এমন বুড়োধাড়ী মেয়ে, এত অসভ্য কেন ? আমাদের দেশে ও-বয়সে যে ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘরসংসার করতে হয়। ১লা অক্টোবর। দুপুরে খাওয়ার পর আমরা মোটরে করে ভিস্বভিয়সের উদ্দেশে রওনা হলুম। কয়েক মাইল যাবার পর মোটর ভিস্বভিয়স আগ্নেয়গিরির তলদেশে এসে থামল । এখান থেকে ওপরে ওঠবার জন্য পাৰ্ব্বত্য রেলপথ আছে । আগে এই রেলপথটি টমাস ফুক কোম্পানীর ছিল, শুনলুম ইটালীয়ান গবর্ণমেণ্ট এখন কিনে নিয়েছেন। আমাদের টিকিট আগে থাকৃতেই কেনা ছিল । আমরা দু-জনে দুটি জানালার ধারে সিট দখল ক'রে বসলুম। ট্রেন ইলেকটি সিটির সাহায্যে ঘড়ঘড় ক'রে ওপরে উঠতে লাগল। ট্রেনে অনেক যাত্রী ছিল। তার মধ্যে ইটালীয়ানের সংখ্যাই বেশী । এখানেও সেই ছোট ও বুড়োদের আমাদের দিকে আঙুল বাড়িয়ে ইসারা করা ও ইণ্ডিয়ানো বলা মুরু হয়ে গেল। আমাদের দলের সঙ্গে এক জন ফুক কোম্পানীর গাইডও ছিল । ট্রেন থেকে দেখতে পেলুম পথের দু-পাশের চালু পাহাড়ের জমির রং কয়লার মত কালো ও তার উপর অজস্ৰ কমলালেবু, পিচ, লাল ও কালো আঙরের গাছ । আঙরের গাছগুলি কালো জমির উপর ফলের ভারে নত হয়ে পড়েছে। যেদিকেই চাই, সেদিকেই ভিন্ধভিয়সের ছাই, কয়লা ও লাভার উপর এ-রকম আঙুরের খোলোর বাহার। গাইডের মুখে শুনলুম ভিস্তুভিসের লাভা আঙুর ও কমলালেবুর গাছের চাষ করার পক্ষে খুব উপযোগী। ভিসুভিয়সের এক-এক বার অগ্নি ও লাভ উদগীরণের ফলে দেশের ক্ষতি ও লাভ ছুই-ই হয়। আমরা ক্রমশ: ওপরে উঠতে লাগলুম। ট্রেন এবার এক জায়গায় থামলো। এখানে ভিন্ধভিয়াসের অবজারভেটরী বা মানমন্দির আছে। নিয়ত এক জন লোক এখানে থাকে। ভূকম্পনজ্ঞাপক যন্ত্রে যখন যেমন অবস্থা টের পাওয়া যায়, নেপলস শহরে সদর আপিসে তৎক্ষণাৎ সংবাদ পাঠানো এর কাজ। আমরা এবার অন্ত একটি ট্রেনে চড়লুম। এবারে অনেক নীচে নেপলসের উপসাগরের নীল জল ও তার তীরে অনেক স্প্যাগেট ও ম্যাকারনীর কারখানা নজরে পড়ল। স্প্যাগেট ও ম্যাকারনী ইটালীর প্রসিদ্ধ খাদ্য। এ দুটি জিনিষ ময়দার দ্বারা প্রস্তত হয়। ট্রেন ওপরে উঠতে উঠতে শেষে এক জায়গায় থামল। এবার সকলকে ইটিতে হবে। নেমে চারি দিক দেখে মনে হ’ল এত বড় পাহাড়টিকে কয়লার গুড়ে ঢেলে তৈরি করা হয়েছে । আমরা পাহাড়ের গা বেয়ে চলতে লাগলুম। বঁ-দিকে ভিস্বভিয়স ক্রমশ: ওপরে সোজাভাবে উঠে গেছে, ডাইনে গভীর ঢালু খদ । অনেক দূরে নেপলসের উপসাগরের জলে স্বর্ঘ্যের আলো পড়ে বহুদূর পর্যন্ত হীরার মত জলছিল। সেদিকে চাইলে চোখ জালা করে । আমাদের পায়ে-চলা-পথ মাত্র তিন-চার হাত চওড়া । আমরা এই পথ দিয়ে চলে অবশেষে ভিস্বভিয়সের চুড়ার ওপর এলুম। পাহাড়ের ঠিক মধ্যস্থলের চূড়াটি ১৯২৮ সালে লাভা উদগীরণের ফলে ফেটে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে একটি বড় গর্ভে পরিণত হয়েছে। এই হ’ল ক্রেটার বা আগ্নেয়গিরির মুখগহবর। এই মুখ থেকে অনবরত গাঢ় ধোয়া নিৰ্গত হচ্ছে । দশ-বারটি কয়লার উনান এক সঙ্গে ধরালে ষে-পরিমাণ ধোয়ার স্বষ্টি হয়, এখন সে-রকম ধোয়া দেখতে পাওয়া গেল । এই ধোঁয়ার রং কখনও সাদ, কখনও হলদে, কখনও কালে, কখনও বা ধূসর বর্ণের মত দেখা যাচ্ছিল। নিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে গন্ধকের মত মৃদু গন্ধ অমুভব করতে লাগলুম। আগ্নেয়গিরির মুখের চারি দিকে একটি গোলাকার উপত্যকার স্বষ্টি হয়েছে। এর ভেতরে ও বাইরে চতুর্দিকে নানা রকম গলিত ধাতু পড়ে শক্ত পাথরের মত হয়ে রয়েছে। অধিকাংশই পাথরের রং বৃন্দাবনী হরিদ্র রঙের চন্দনের মত। কোন কোন জায়গার জমি এখনও নরম ও উত্তপ্ত । এ-সব জায়গায় মাহুষে পা দেয় না, দূর থেকেই দেখলুম। শুনলুম সময়-সময় এই গন্ধকের গন্ধ এত বেশী তীব্র হয় যে লোকে এত কাছ থেকে দেখতে পারে না। এখন ভিসুভিয়সের অত্যন্ত শান্ত মূৰ্ত্তি, আমরা যত ক্ষণ ছিলুম, কোন রকম আওয়াজ শুনি নি। অন্ত সময়ে নাকি এর ভেতর থেকে দুমদাম্ আওয়াজ শোনা যায়। আগ্নেয়গিরির মুখের কাছ পৰ্য্যস্ত ধাওয়া যায়। এর জন্ত স্থানীয় গাইড নেওয়া দরকার । তার জমির চেহারা দেখে ও গন্ধ অনুভব ক'রে বুঝতে পারে দেখতে যাওয়া নিরাপদ কিনা। আমাদের