পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক মতিলাল ግጬ ভুবন ভুলিল না, সে বাধা দিয়া বলিল—তোর ভাত আমি জোগাতে পারি । খাটুনীকে এত ভয় কিসের তোর ? -—ভয় আবার কি ? —তবে ? নিজের বিশাল দেহের দিকে চাহিয়া ভালুক কহিল— পটতে গেলে ‘গতর দেখে সব বলে । গতর দেখ আর খাটুছে দেখ! খুঁড়ে খুঁড়ে আমার গতর কমে গেল। উ-হু --উ-সব হবে না । দত্তকাকী বলেছে কলকাতার যাত্রার দলে টুকিয়ে দেবে আমাকে ! এ কথা ভুবনের বহুবার শোনা কথা । বহু কাণ্ড এই লষ্টয়া হইয় গেছে—ভুবন চুপ করিল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ হন তাহার কি মনে পড়িয়া গেল—সে উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাস কুরিল---সং সাজলি তার পয়সা কই---লৈবিদ্যি কষ্ট ? ভালুক বলিল—পয়সা এখনও ভাগ হয় নাই । ---লৈবিন্তি ? বলি লৈবিদ্যি কি হ’ল ? ভালুক ডাকিল—আয় আয় গোবর-আয়। গোবরা এক বিশালকায় কুকুর—এ পরিবারটির উপযুক্ত ঈন। শুধু গোবরা নয়—’গোবর গণেশ উহার নাম। পয়দায় ঘুমায়-চোর আস্থক, ডাকাত আস্থক কোন আপত্তি • ? তাহার—সে কাহাকেও কিছু বলে না। ভুবন সরোষে বলিল-বলি—লৈবিদ্যি কি হ’ল ? --খেয়ে দিয়েছি । যে পিদে—বাবা । ভুবন আবার গুইয়া পড়িয়া কাতরাষ্টতে লাগিল। ভালুক ভ:তের ইঁাড়িটা নামাইয়া ফেলিয়া বলিল—আজ আর খিদে দেশ নাই । লৈবিদ্যি খেয়ে থিদে পড়ে গেল। ভুবন বলিল-আমি টাকা দোব, তু গরু কেন এক জোড়,

  • গে চাষ— ।

ভালুক মধ্যপথেই ভুবনকে বাধা দিয়া বলিল--ধ্যেং ! মঞ্চ টাকা ক’রেই মরবি তু। ছেলে নাই পিলে নাই—দুটাে পেট শুধু—বেশ ত চলছে ! ஆ ভূবন বলিল—হা রে মুখপোড়া গাদা মোষ, বলি খেটে 'পটে যে আমার গতর পড়ে গেল । ভালুক হি হি করিয়া হাসিতে হাসিতে বলিল—তোর গহরের এক সবুষেও কমে নি, ভোবন। দাড়া একখানা বড় সারসী এনে দেব তোকে । একটা টাকা দিল দেকিনি। হাতের কাছেই পড়িয়াছিল একটা শুকনা গাছের ডাল— ভুবন স্বামীকে লক্ষ্য করিয়া সজোরে সেটাকে ছুড়িয়া মারিল। ভালুক কিন্তু ভুবনের মতলব পূর্বেই বুঝিয়াছিল—সে একটু পাশে সরিয়া দাড়াইল । ডালটা বেঁ শব্দে ডাক ছাড়িয়া উঠানের পেয়ারা গাছে প্রতিহত হইল। ভালুক হি হি করিয়া হাসিতে হাসিতেই বলিল—ওইটাে যদি লাগতো, ভোবন ! শেষে ত তোকেই “ত্যাল’ মালিশ করতে হত । ভূবন বলিল—ওই ছিরিতে আর দাত বার করে হাসিস্ নে বাপু ! আহ-হ ! ভালুক হা হা করিয়া হাসিয়া ঘরখানা ভরাইয়া দিল । ভুবনও না-হাসিয়া পারিল না, সেও সলজ্জ ভাবে ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলিল । কথাটা পুরাতন দিনের কথা । ভালুকের নাম মতিলাল, জাতিতে সে হাড়ি। এ গ্রামের বাসিন্দা তাহার নয় ; এখান হইতে ক্রোশ-পাচেক দূরে তাহার পৈতৃক বাস। এ গ্রামে তাহার মাতুলালয়-নিঃসন্তান মাতুলের ভিটায় সে ভূবনকে ইয়। বৎসরখানেক আসিয়া বাস করিতেছে । ভুবন কিন্তু এই গ্রামের মেয়ে। তাহাদের সামাজিক রীতি অনুযায়ী ভুবনের পাঁচ বৎসর বয়সের সময় প্রথম বিবাহ হয় । তখন তাহার ঠোঁটের পাশটা কাটা ছিল না । বৎসর-দশেক বয়সের সময় গাছে গাছে ঝাল্লু খেলিতে গিয়া ঠোট কাটিয়া দাত বাহির হইয়া গেল। তখন সে ছিল লম্বা—কিন্তু খিটখিটে পাতলা। এগার বৎসর বয়স হইতেই দেহে তার জোয়ার ধরিতে আরম্ভ হইল । তখন তাহার বয়স চৌদ্দ বৎসর। সেবার জামাইষষ্ঠীতে বাপ তাহার জামাই লইয়া আসিল । জামাইটি দেখিতে শুনিতে মন্দ নয়, সচরাচর নিম্ন শ্রেণীর জোয়ান যেমন হইয় থাকে তেমনি । শাশুড়ী জামাইকে পরমাদরে বসাইয়া পা ধুইতে এক ঘটি জল নামাইয়৷ দিল । ভুবনের বাপ গিয়াছিল মাছের সন্ধানে। মাও তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া গেল তেলের বোতল হাতে, ভুবনের চুলটা বাধিয়া দিতে হইবে । ছেলেটি পা না ধুইয়াই এদিকওদিকে চাহিতেছিল ভূবনের সন্ধানে। ঠিক এই সময়টিতেই