পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

११३ যুদ্ধ যে অবশুম্ভাবী এ কথা স্থৰ্য্যোধন গোপন করিলেন না। সহাস্তবদনে কহিলেন, যাদব, আপনার সহিত আমাদের উভয়েরই তুল্য সৌহার্দ ও সম্বন্ধ, তথাপি আমি আগে আগমন করিয়াছি, অতএব আমার পক্ষ আপনার অবলম্বন করা কর্তব্য । শ্ৰীকৃষ্ণ কহিলেন, আপনার কথায় আমার কিছু মাত্র সংশয় নাই কিন্তু কুন্তীকুমারকে আমি প্রথমে নয়নগোচর করিয়াছি। আমি আপনাদের উভয়কেই সাহায্য করিব, কিন্তু বালককে প্রথমে বরণ করা উচিত। ধনঞ্জয়কে কহিলেন, হে কৌন্তেয়, অগ্ৰে তোমার বরণ গ্রহণ করিব। আমার সমযোদ্ধা নারায়ণ নামে বিখ্যাত এক অর্বুদ সেনা এক পক্ষে থাকিবে, অপর পক্ষে আমি সমরপরামুখ ও নিরক্স হইয়া অবস্থান করিব। তুমি কাহাকে গ্রহণ করিবে ? অৰ্জুন ইহা ওনিয়াও জনাৰ্দ্দনকে বরণ করিলেন। দুৰ্য্যোধনের আনন্দের সীমা রহিল না । তিনি প্রবলপরাক্রান্ত সৈন্যবল প্রাপ্ত হইলেন। নিরস্ত্র, যুদ্ধবিমুখ বাস্থদেবকে লইয়া কি লাভ ? শ্ৰীকৃষ্ণের বাক্যালাপ অতি মধুর। তিনি চতুরশিরোমণি, রাজকার্ধ্যে, লোকব্যবহারে অদ্বিতীয় কুশলী। যুধিষ্ঠিরের ন্যায় তিনিও দুৰ্য্যোধনকে স্ববোধন বলিয়া সম্বোধন করিতেন। পরে অপরের অসাক্ষাতে শ্ৰীকৃষ্ণ অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করিলেন তিনি র্তাহাকে নিরস্ত্র জানিয়াও মনোনীত করিলেন কেন ? অর্জন কহিলেন তিনি একাকী ধৃতরাষ্ট্র-পুত্রগণকে পরাজয় করিতে মনন করিয়াছেন। শ্ৰীকৃষ্ণ র্তাহার সারথ্য স্বীকার করেন ইহাই তাহার অন্তরোধ। শ্ৰীকৃষ্ণ স্বীকৃত হইলেন। এই বীর যুগের জাৰ্য্যগণ শান্ত, ভীত হিন্দু ছিলেন না। এখন অনেক হিন্দু স্বাধীনতার ছায়া দেখিলে আতঙ্কে সঙ্কুচিত হন। জাৰ্য্যগণ যথার্থ পুরুষ, উন্নত, বলিষ্ঠ জাকৃতি, কঠিন মাংসপেশী। দপিত স্বভাব, অসঙ্কোচে মুক্তকণ্ঠে গৰ্ব্ব করিতেন। মহাভারত পাঠ করিলেই ইহা প্রমাণিত হইবে। রোমানেরাও উৎসের তুল্য গৰ্ব্বিত ছিল না। এরূপ চিন্তাশীল ও জ্ঞানবান জডিওআর ভূমণ্ডলে দেখা যায় নাই। যুদ্ধবিগ্রহ নিবারণ করিবার চেষ্ট হইতে লাগিল। শক্তি প্রবাসী

  • Oos.

রক্ষার জন্ত উভয় পক্ষে দূত যাতায়াত করিতে আরম্ভ হইল । অবশেষে শ্ৰীকৃষ্ণ স্বয়ং দৌত্য স্বীকার করিয়া ৰৌরবদিগের নিকট গমন করিলেন। এই পৰ্ব্বাধ্যায়ের নাম ভগবদ্যান। ধীর, সংঘত ভাবে, স্বযুক্তি প্রয়োগ করিয়া সমবেত রাজদিগের ও প্রবীণ কৌরবদিগের সমক্ষে দেবকীনন্দন পাগুবদিগের যথার্থ প্রাপ্য রাজ্যাংশ প্রার্থনা করিলেন। অনেকেই র্তাহার পক্ষ সমর্থন করিলেন, কিন্তু দুৰ্য্যোধনের দৃঢ় সঙ্কল্প কিছুমাত্র বিচলিত হইল না। তিনি স্নদীর্ঘ বকৃত করিয়া শেষে কহিলেন, - যাবন্ধি তীক্ষয় সুচ্য বিধ্যেদগ্রেণ কেশব । তাবদপাপরিত্যাজ্যং ভূমেণ পাওবান প্রতি । হে কেশব, স্বতীয় স্বচীর অগ্রভাগ দ্বারা যে পরিমাণ ভূমিভাগ বিদ্ধ করা যায়, পাণ্ডবগণকে তাহাও প্রদান করিব না। ভারতে এমন কেহ নাই যাহার নিকট এই উক্তি অবিদিত। পরস্বলুব্ধ প্রবঞ্চকের ইহাই চরম বাক্য। শ্ৰীকৃষ্ণের স্কায়সঙ্গত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়াই দুৰ্য্যোধন ক্ষান্ত হইলেন না। তিনি দামোদরকে বন্দী করিবার মন্ত্রণ করিলেন। দূতের অঙ্গে হস্তক্ষেপ নিষেধ ইহা তিনি বিবেচনা করিলেন না। অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া দুৰ্য্যোধনকে তিরস্কার করিয়া কহিলেন, তুমি কি কেশবের পরিচয় প্রাপ্ত হও নাই ? বৎস, হন্ত দ্বারা কখন বায়ু গ্রহণ করা যায় না, পাণিতল দ্বারা কথন পাবক স্পর্শ করা যায় না, মস্তক স্বারা কখন মেদিনী ধারণ করা যায় না এবং বল দ্বার। কপন কেশবকেও গ্রহণ করা যায় না । ভূপতিগণ ও অপর অনেকে সভামধ্যে উপস্থিত ছিলেন। জনাৰ্দ্দন উচ্চহাস্ত করিয়া কহিলেন, দুৰ্য্যোধন, তুমি আমাকে একাকী মনে করিয়াছ ? এই দেখ, পাওব, অন্ধক, বৃঞ্চি, আদিতা, রুস্ট্র, বস্থ ও ঋষিগণ এই স্থানেই রিল্যমান আছেন। ভগবান বিশ্বরূপ পরিগ্রহ করিলেন। কুরুক্ষেত্রে রণাঙ্গনে অর্জন যে মূৰ্ত্তি দেখিয়া বিস্ময়ে ভয়ে অভিভূত হইয়াছিলেন ইহা সেই সৰ্ব্বলোকভয়ঙ্কর করাল মূৰ্ত্তি নহে, তথাপি ভূপালগণ ভয়াফুলিত চিত্তে নেজৰয় নির্মীলিত করিলেন। অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের অঙ্গুনন্থে ভগবান তীহাকেও এইরূপ দেখিবার নিমিত্ত দিব্যচক্ষু প্রদান করিলেন। ঐক্লফ অর্জনের সারখা স্বীকার করিলেন সে বিষয়ে