পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○や8 আর শুনলাম কে বললে ‘বুড়ে মেয়েটাকে খেতে এসেছিল ।” বৃদ্ধের নিকট বিদায় হইয়া একবুক দুঃখ বেদন বহিয়৷ বাড়ীতে ফিরিয়া আসিতে আসিতে শুনিলাম বৃদ্ধ মুপ্তিমশ্ন গ্রামখানির নিস্তব্ধত ভাঙ্গিয়া গাহিতেছে—"তারা কোন অপরাধে এ দীর্ঘ মেয়াদে সংসার-গারদে থাকি বল ।" ঐবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। সেখ আন্দু ( A ) পরদিন প্রত্যুষে চৌধুরী-সাহেব নিজ কাৰ্য্য সমাধা করিয়া ভৃত্যবৰ্গসহ বাট ফিরিলেন। আন্দু গাড়ী যথাস্থানে রাথিয় ঘরে ঢুকিয় জামাজুত। ছাড়িয়া ঘর স্বারে ঝাট দিতেছে, এমন সময় লছমী ভকতের দ্বারবান আধখান নূতনকাপড় লইয়। ঘরে ঢুকিল। আন্দু তাহাকে বসিতে বলিয়া হাতমুখ ধুইয়৷ আসিল । দ্বারবান ধনুকধারী বলিল, “দর্জি সাহেবের কি এত বেলায় ঘুম डांत्रल ?” আন্দু তাহাকে কলিকাতা গমনের কথা বলিল। শুনিয়া ধনুকধারী অপ্রস্তুতভাবে তাড়াতাড়ি উঠতে উদ্যত হইল, বলিল “আমি বিকালে আসব এখন ।” আন্দু তাহাকে ধরিয়া ফের বসাইল । বলিল “তোমার দেদার সময় নেই সে আমি জানি । কি দরকারে এসেছিলে, কাজট সেরে যাও দাদ৷ ” ধনুকধারী ব্যস্ত হইয়া বলিল “ন না, সে এখন থাক, তুমি এই এক জায়গা থেকে আসছ, এখনো বসতে দাড়াতে সময় পাওনি, সে এখন থাক।” আন্দু বলিল “কিছু দরকার নেই, এতক্ষণ দিব্বি বসে এসেছি, এখনো নেহাৎ খানি টেনে কাৰু হচ্ছিনে, আরামে দাড়িয়ে আছি। কি কাজ বলে দেখি ?" ধন্থকারী বগলদাবা হইতে নতুন কাপড়টি বাহির করিয়া আন্দুর থাটের উপর রাখিল ; বলিল "আমায় গোটাচার জামা সেলাই করে দিতে হবে, কাপড়খানা এখন থাক, এর পর ধীরে মুস্থে মাপ দিয়ে যাব।" প্রবাসী—আষাঢ় ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড আন্দু হাসিয়া বলিল “এই জন্যে ! তা মাপট এখনই দিয়ে যাও, ধীরে সুস্থে বরং আমি সেলাই করে নেব যখন হোক । তোমার তো অন্য কাজ ঢের আছে।" ধনুকধারী আপত্তি করিল, আন্দু শুনিল না, গজ বাহির করিয়া মাপ জোক করিয়া তাহাকে বিদায় দিল । তাহার পর চারিটি জামার কাটছাট ঠিক করিয়া রাখিয়া বাহিরে আসিল । সেদিন রবিবার। সুতরাং আদালত বন্ধ। আলু মনে করিল জামাওল। যতটা পারি সেলাই করিয়া রাখি, কিন্তু রাত্রে অৰ্দ্ধজাগরণের জন্য এবং একাক্রমে বহুক্ষণ গাড়ী চালাইয়া আসিয়াছে বলিয়। শরীর কিছু অবসাদগ্ৰস্ত বো। হইল। বলিষ্ঠ কৰ্ম্মঠের শরীর, বলের কাজেই ফৰ্ত্তিলাভ করে,—আন্দু বাগানে আসিয়া দেখিল মালী ফুলগাছের জমী তৈয়ার করিতেছে। আন্দু বিনাবাক্যে আর-একথানি কোদাল লইয়া আসিয়া মালকোচা মারিয়া মালীর সহিত জমী কোপাইতে লাগিল! কিছুক্ষণ পরে জমীট। শেষ হইল। মালী তামাক দোক্ত থাইতে বসিল; আন্দু কোদাল ফেলিয়। গায়ের ঘাম মুছিতেছে ; এমনসময় বাগানের ধারে, মেহেদীর বেড়ার ওপাশে রাস্তায় একখানা টমটম্ আসিয়া দাড়াইল । আরোহী শ্রীরাম ভকতের পুত্র উনবিংশ বৰ্ষীয় বালক, অথবা যুবক, লছমী ভকত, আন্দুকে দেখিয়া গাড়ী থামাইল । আন্দু তসলীম দিয়৷ বেড়। ডিঙ্গাইয়া গাড়ীর কাছে আসিল। লছমীভকত দূর হইতে তাহাকে কোদাল চালাইতে দেখিয়াছিল, কাছে আসিতেই হাসিয়া বলিল “বাকী আর কিছু রাখলে না, কোদাল ধরেছ ?” আন্দু হাস্যমুখে জবাব দিল, “সবই ধরতে হয়, বাকী কিছু না রাখাই তো মঙ্গল । তারপর আপনি কেমন আছেন ?” আন্দুর ঘৰ্ম্মাক্ত শরীরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া লছমী ভকত বলিল "এঃ ! একি হয়েছে, নেমে উঠেছ যে ” আন্দু মালকোচা খুলিয়া কাপড়টা কোমরে জড়াইয়া ফাশ দিয়া টানিয়া বাধিল, গামছায় সৰ্ব্বাঙ্গ মুছিয়া বলিল "কোদাল চালান মূৰ্ত্তির কাজ বটে।" লছমীভকত অবজ্ঞার স্বরে বলিল “তোমার সবতাতেই স্ফৰ্ত্তি ! চুপ করে থাকতে পার না, তাই বল।" ■ - চুপ করে থাকতে না পারা কেই ত ক্ষ িবলে। আপনি কি বেড়াতে বেরিয়েছেন?" লছমীভকত বলিল “ই এই দিকে একটু। তোমায় কদিন দেখিনি তাই জানতে দাড়িয়েছিলুম কেমন আছ, জালি।” সে চাবুক উঠাইয় অশ্বকে তাড়না করিল। আন্দু তৎক্ষণাং গাড়িতে উঠিয়া পড়িল, পা-দানে পা দিয়া গাড়ীর পাশে বসিল। এই অভাবনীয় আচরণে লছমী ভকত সীমার অতিরিক্ত বিন্মিত উৎকণ্ঠায় বলিল “একি ! খালি গায়ে এবেশে যাবে কোথায় ?” আন্দু তাহার হাত হইতে চাবুক ও অশ্ববঙ্গ লইয়৷ ঘোড়া স্থাকাইতে হাকাইতে বলিল “চলুন বেড়িয়ে আসি, আপনি সঙ্গে সহিস নেন নি কেন ?" কুষ্ঠিতভাবে লছমীভকত বলিল “আমি একলাই शॉई।” আন্দু আয়ত-নেত্রের বিস্ফারিত দৃষ্টি তাহার মুখের পানে একবার স্থিরভাবে রাখিল। সে দৃষ্টির মৰ্ম্ম কি, তাহ। লছমীভকত বুঝিল, সে চক্ষু নামাইল। আন্দু ধীরভাবে বলিল “আপনার সঙ্গে আমার গোটাকতক কথা আছে, কথা কটা শুনতে হবে আপনাকে, মাঝখানে ধমক দিয়ে, কি তর্ক করে থামাতে পারবেন না, আগে শুমুন—”. মুহূৰ্ত্তে লছমীভকত বুঝিল আন্দু এবার তাহাকে কি বলিতে চাহে। তাহার মনটা অত্যন্ত দমিয় গেল, লঙ্কায় তাহার মুখ তুলিতে ইচ্ছা হইল না, কিন্তু পরক্ষণে জোর করিয়া সে আত্মসম্বরণ করিল, আক্রমণের আরম্ভেই পরাভব স্বীকারে উদ্যত মনটাকে তীব্র ধাক্কায় সোজা করিরা উগ্র স্বরে রলিল “এ আমি অন্য কোথাও যাইনি ত, আমি একটু সোজা রাস্তায় বেড়াতে যাচ্ছি!” আন্দু শান্তভাবে বলিল “সে ত জানি। আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। আপনার মা আছেন, ভাই আছেন, বাপ আছেন ; মনে করুন আপনার আব্দুও তাদের সামিল আজ একজন আপনার নিজের লোক –হয়ত যে কথাটা আমি আপনাকে বলতে চাই সেটা আপনি বুঝেছেন, আর এও নিশ্চয় যে, আমার মত অনেকে আপনাকে এই কথাটা এর জাগে অনেকবার বলেছে, কিন্তু সে কথা নয়। আমি অন্য

সেখ আন্দু ാൾ....عیسی متماعی-سیای میان صمیمی ৩৬৫ দিক দিয়ে কথাটা আরম্ভ করছি। দেখুন আমি বাক্যযুদ্ধ জিনিষটা মোটে পছন্দ করি না, তাই কারে সঙ্গে ইচ্ছ। করে তর্ক করি না, আপনার সঙ্গেও করব না, সে শুধু আপনাকে বেশী জালাতন করা হবে আমি জানছি। আপনি লেখাপড়া শিখেছেন, মন্দচরিত্র লোক কখনো দুচক্ষে দেখতে পারতেন না, সংকার্য্যের মাহাত্ম্যও আপনার মত খুব অল্প লোকেই জানে, তবু আপনি একি ভূল করে বসেছেন ?” লছমীভকত মস্তিষ্কট ঠিক করিয়া লইল। আলুর মন্দ মন্দ ভংর্সনায় সে কিসের জন্য কাৰু হইবে ? তাহার কার্ধ্যা কার্য্যের সমালোচনা—সমালোচনা ? ন ন আন্দু যে আগেই আত্মীয়তার পথ দেখাইয়া রাখিয়াছে, তাহার ঐ মৃদু গভীর আক্ষেপের উপর তো ক্রোধ অভিমান চলিবে না ; চলিত শুধু নিষ্ফল বাক্যাড়ম্বর ; তাহাও ত আব্দুর বাঞ্ছনীয় নহে। কিন্তু সে ত হাটবার পাত্র নহে, লছমীভকত প্রাণপণে হাসিয়৷ জবাব দিল, “তুমি আমার চরিত্র নিয়ে তর্ক করতে চাও? বেশ ! কর। আমরা মানুষ—” বাধা দিয়া আন্দু বলিল “ই, আমরা মানুষ, আমরা কেন মদ থেয়ে, মন্দ সংসর্গে পড়ে, বাপ মা বিষয় আশয় কার কারবার পাচরকম বাজেকাজে পাচরকম অমান্তর্ষিক ব্যাপারে সব বিসর্জন কৰ্বে পারব না? কেমন এই ত বলতে চান আপনি ?” এই কথাটাই বটে, এই রকমই সে বলিতে চাহিতেছিল। কিন্তু আন্দু যখন তাহার মুখ হইতে কথাটা লইয়া আপনিই তাহার জবানী তাহাকে শুনাইল তখন সেটা যেন লছমীভকতের কানে অত্যন্ত অস্বাভাবিক লাগিল। সে সঙ্কুচিত হইয়া বলিল “আহা! কেন? একটু আমোদ করা কি এতই দোষ ?” - আন্দু বলিল “আমোদ কই ? আমোদ কাকে বলে ? একি আমোদ ? এযে সৰ্ব্বনাশ !”—আন্দু ক্রমশ উত্তেজিত হইয়া উঠিল, সে যে-তর্ক যে-যুক্তি লছমীভকতের উপর বর্ষণ করিবে না বলিয়া সঙ্কল্প করিয়াছিল, সেইগুলা সবই আবেগের মুখে তাহার রসনা হইতে উৎসারিত হইতে লাগিল, লছমীভকত নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া রছিল। এত সবই সে জানে, সবই তাহার মনে আছে, নাই শুধু—আন্দু যে