পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb>& "আমি যখন ফল আনিতে গিয়াছিলাম, তখন তুমি কোথায় গিয়াছিলে কল্যাণি ?" "আমি ভয় পাইয়া বনে লুকাইতে যাইতেছিলাম, সেই বন হইতে একজন দক্ষ বাহির হইয়া আমাকে ধরিয়৷ ফেলিল। আমি তাহার নিকট হইতে মুক্ত হইবার চেষ্ট৷ করিয়া এই লাঞ্ছন ভোগ করিয়াছি।” কল্যাণীদেবী এই বলিয়া তাহার নবনীত কোমল দেহে অসংখ্য ক্ষত ও আঘাতের চিহ্ন দেখাইলেন, তাহার পরে কহিলেন, “তখন আপনার কথা মনে হইল, আমি কাদিতে লাগিলাম।" "আমার কথা কেন মনে হইল কল্যাণি ?” ধৰ্ম্মপালের বক্ষে মুখ লুকাইয়। কল্যাণী কহিলেন, “তাহা জানি না।" গৌড়েশ্বর ভাবী পত্নীকে আলিঙ্গনপাশে আবদ্ধ করিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে উভয়েরই ঘোরতর লক্ষ উপস্থিত হইল, তাহারা সরিয়া বসিলেন। তখন ধৰ্ম্মপাল জিজ্ঞাসা করিলেন, "তাহার পর কি হইল ?” কল্যাণী অবগুণ্ঠনের অন্তরাল হইতে অবনত মস্তকে কহিলেন, “আমি কাদিতেছি দেখিয়া দস্থ্যর আমার মুখ রাধিয়া ফেলি।” - “তাহার পর ?” "তাহার পর আপনি আসিলেন, দস্থ্যর দূর হইতে আপনাকে শরবিদ্ধ করিল, আপনি অচেতন হইয়া পড়িয় গেলেন। দুইজন দস্থ্য আপনাকে বহন করিয়া জীর্ণ অট্টালিকায় লইয়া গেল। তাহার পর আমি অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছিলাম, উঠিয়া দেথি রাত্রি হইয়াছে।" “তবে কি একদিন অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে ?" “হা ; আপনি অচেতন হইয় ছিলেন, সেইজন্য জানিতে পারেন নাই ।” "কল্যাণি, তুমি কিছু আহার করিয়াছ কি ?" উত্তর পাইলেন না দেখিয়৷ ধৰ্ম্মপাল বুঝিলেন দুইদিন যাবং কল্যাণীর আহার হয় নাই। উভয়ে ধীরে ধীরে নিবিড় বনের মধ্য দিয়া অগ্রসর হইলেন। কিয়ংক্ষণ পরে বনমধ্যে একটি পুরাতন পুষ্করিণী দেখিতে পাইয়৷ উভয়ে আকণ্ঠ জলপান করিলেন এবং পিপাসা শাস্ত হইলে তীরে বসিয়া বিশ্রাম করিতে লাগিলেন। অপরাহ প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড । ------------------------- ാ, হইয়া আসিল । কল্যাণী অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়াছিলেন দেথিয়৷ ধৰ্ম্মপাল সেদিন আর যাত্রার উদ্যোগ করিলেন না। তিনি দেখিতে পাইলেন যে পুষ্করিণীতে পদ্মবনে শত শত ফল ফলিয়াছে। ধৰ্ম্মপাল জলে নামিয়া পদ্মের ফল সংগ্ৰহ করিতে লাগিলেন। মহারাজাধিরাজ গৌড়েশ্বর ও গৌড়ীয় সাম্রাজ্যের ভাবী পট্টমহাদেবী পদ্মের বীজ ভক্ষণ করিয়া জঠরজাল নিবৃত্তি করিলেন। সন্ধ্যা হইয়া আসিতেছে দেখিয়া ধৰ্ম্মপাল শুষ্ক কাষ্ঠ ঘাস ও লতা সংগ্ৰহ করিয়া একটি বৃক্ষতলে কল্যাণীর জন্য আশ্রয় নিৰ্ম্মাণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। উভয়ে একমনে কুটার নিৰ্ম্মাণ করিতেছেন, এমন সময়ে পশ্চাতে পদশস্থ শুনিয়া ধৰ্ম্মপাল ফিরিয়া দাড়াইলেন। গৌড়েশ্বর বিস্মিত হইয়া দেপিলেন অদূরে একজন বৰ্ম্মাবৃত যোদ্ধ পুরুষ দাড়াইয়া আছে । তিনি ফিরিব মাত্র সে ব্যক্তি আসি নিদ্ৰাসন করিয়া সামরিক প্রথানুসারে অভিবাদন করিয়া কহিল, "গৌড়েশ্বরের জয় হউক।" ধৰ্ম্মপাল কোষ হইতে অলি নিদ্ধাসন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "কে তুমি?" “মহারাজ, অধীনের নাম গুরুদত্ত। গৌড়ীয় সেনাদলে অধীন মূক’ নামে পরিচিত।" ক্ষুধাৰ্ত্ত, ক্লান্ত, আহত তরুণ গৌড়েশ্বর ছুটিয়া গিয়৷ সৈনিকের কণ্ঠলিঙ্গন করিয়া কহিলেন, “গুরুদত্ত, ভাই! তুমি আজি আমাদের জীবন দান করিলে।" এই সময়ে নির্জন বনস্থলী কম্পিত করিয়া ভীষণ জয় ধ্বনি উত্থিত হইল। গৌড়েশ্বর বিক্ষিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “গুরুদত্ত, ব্যাপার কি ?" গুরুদত্ত উত্তর করিল, “মহারাজ, পঞ্চশত সেনা লইয়া আপনার সন্ধানে বাহির হইয়াছিলাম, তাহার বোধ হয় শক্রসেনা দেখিতে পাইয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করিয়াছে।" “তাহার কোথায় ?” “পুষ্করিণীর উত্তর তীরে।” “আমার সহিত মহাদেবী কল্যাণী আছেন।" “র্তাহার জন্য শিবিকা আনিয়াছি।” তিন জনে দ্রুতপদে শিবিরাভিমুখে যাত্র করিলেন। (ক্রমশ)" | শ্রীরাপালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।-- ৩য় সংখ্যা ] ...............SumitaBot (আলাপ) ০৮:২২, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) গোবর গণেশ ( প্রবাসীর অষ্টম পুরষ্কার প্রাপ্ত গল্প ) ( . ) আমার নাম ‘গণশ'। দৈবজ্ঞঠাকুর বলিয়া গিয়াছেন আমি খুব একটা বড়লোক হইব। আমার তিন স্কুলে কেহ নাই। মাতাপিত ছেলেবেলায় ছাড়িয়া গিয়াছেন। আমি কুলীনের ছেলে, কাজেই মামার বাড়ীই আমার বাড়ী ; কিন্তু সে কুলেও কেহ নাই। মাতামহ বড়লোক ছিলেন, তাহারই পোষ্যবৰ্গ আমাকে প্রতিপালন করেন। অল্প বস্ত্রের আমার অভাব নাই –খোলা-পরা মটর ডাউল সংযোগে খুব মোটা-সোটা চাউলের নিরামিষ অন্ন আমার উদরস্থ হইয়া থাকে ; আর শুনিয়াছি বংসরান্তে আমার জন্য সওয়া পাচ আন খরচ করিয়া একখানা ধুতি ক্রয় করা হইত, কিন্তু আমি তাহার ধার ধারিতাম না। এ হেন আমি দিন দিন বাড়িতে লাগিলাম এবং দৈবজ্ঞ ঠাকুরের কথাও সফল হইতে লাগিল। বড় হইব বটে কিন্তু সে যে কত বড়-পাচ হাত কি ছয় হাত—তাহা দৈবজ্ঞঠাকুর দয়া করিয়া বলিয়া দেন নাই ; তাহা হইলে দৈবজ্ঞঠাকুরের বিদ্যার দৌড়টা একবার পরিমাপ করিতে পরিতাম । আমার মাতামহের একজন কৰ্ম্মচারী ছিলেন। তাহার তীক্ষ বুদ্ধি বলিয়৷ নিজ বাড়তেই তাছাকে সপরিবারে স্থান দিয়াছিলেন। আমি তাহাকে কাক বলিয়া ডাকিতাম। তিনিই এখন আমার অভিভাবক। আমাকে তিনি গোবর গণেশ' বলিয়৷ ডাকিতেন, আর বলিতেন— "ছেলেটার কিছু হবে না, একটা হাব গণ্ডমুখ্য ছেলে, ওর মাথায় গোবর পোরা, ওকে ইস্কুলে পাঠিয়ে কি হবে।” আমিও মনে করিতাম হবেও বুঝি বা আমার মাথায় গোবর পোর, সেই জন্য আমায় গোবর গণেশ বলিয়৷ ডাকেন। আমাদের গ্রামের প্রতিবাসীগণ আমাদের শত্র একথা কাক আমাকে বেশ করিয়া বুঝাইয়া দিতেন। তাহারা আমাদের সম্পত্তি লইতে বহু চেষ্টা করিয়াছে স্বধু তাহার তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে তখনও টিকিয়া আছে। তাহার o -- গোবর গণেশ ഹു ○ゲや আরও একটা শক্রতা করিল—গ্রামের গুরুমহাশয়কে ডাকিয়া আমাকে স্কুলে লইয়া ধাইতে বলিয়া দিল। কি জানি কেন গুরু মহাশয় আমার জন্য মাহিয়ান চাহিলেন ন, কাজেই কাকাও জানিতে পারিলেন না যে আমি স্কুলে যাই ; স্কুলে গিয়া পরের কালি কলমে পরের তাল-পাতার উন্ট পৃষ্ঠে লিখিয়া, লিখিতে শিখিলাম। অন্যের পুস্তক লইয়া পড়িতে শিথিলাম। পণ্ডিত মহাশয় অন্য ছেলেকে পড়াইতেন তাহা শুনিয়া অনেক কথা শিথিয কেলিলাম। - সমবয়সীর মধ্যে আমার একচ্ছত্র সাম্রাজ্য। তাহাদের কোন কার্ষ্য আমার মনের মত না হইলে বলিতাম তাহাকে ভূতে পাইয়াছে এবং উত্তম মধ্যম দিয়া তাহার ভূত ছাড়াইবার ব্যবস্থা করিতাম। কানাইকে কানা বলিয়া ক্ষেপাইবার রোগ অনেকের ছিল ; আমি একদিন মুদ্রগর-আইন প্রচার করিলাম। সেই দিন হইতে কাহাতেও উক্ত রোগ দুষ্ট হয় নাই। প্রবোধ একদিন মিথ্যা কথা বলিয়া ভূলোকে গুরুমহাশয়ের নিকট মার খাওয়াইয়াছিল। আমার আদালতে আজী পেশ হইল। আমার রায় অমুসারে প্রবোধকে নিজ হাতে পাচটি কানমলা গণিয়া থাইতে হইল। কানাই আমার কাকার ছেলে। কাকার ভয়ে সহসা তাহাকে কিছু বলিতাম না। একদিন সে হবির বই ছিড়িয়া দিল। হবি একটি খোড়া মেয়ে, বেশ শাস্ত শিষ্ট, আমি তাহাকে স্নেহ করিতাম। সে বলিল আমি গণেশ দাদার কাছে বলে দেব। কানাই তাহাকে ক্ষেপাইল :– খোড়া বীর, গাছে উঠে মারলে তীর, তীর গেল বেকায়ে, খোড়া পলে কেকাদে । আমি শুনিয়া আর সহ করিতে পারিলাম না। গুরুমহাশয়ের সাক্ষাতেই কানাইকে প্রহার করিলাম। সেই কথা কানাই কাকার নিকট বলিয়া দিল। একে তাহার পুত্রের গায়ে হাত দিয়াছি, তার উপর তাহার সহিত শক্রতা করিয়া গ্রামের লোক আমাকে পাঠশালায় পাঠাইয়াছে, এ জাল তিনি সহ করিতে পারিলেন না। আমার পৃষ্ঠের সহিত তাহার হস্তের কিছু সদৰাবহার হইয়া গেল,