পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○brや3 মা কতবড় লোকের বউ ; তার জাত মারিতে আমরা কিছুতেই দিব না। কাকা মহাশয় চারিদিক অন্ধকার দেখিলেন, খুড়িমা কাদিয়া মাটি ভিজাইলেন। অবশেষে গ্রামের লোকের দৌরাত্ম্যে বিবাহ স্বীকার করিতে হইল । কাক খুড়িমাকে সাম্বন দিলেন,—সম্পত্তির একটা কণ্টক ছিল সে কণ্টক দূর হইল ; এখন কানাইএর একটা কেন পাচটা বিবাহ দিলে মারিবে কে ? চোখের জল ও ক্ৰন্দনের মধ্যে হবির সহিত কানাইএর বিবাহ শেষ হইয়া গেল । এদিকে আমি দুই দিন অভূক্ত অবস্থায় হাটিয়া কলিকাতায় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি। এখানে কোথাও কাহাকেও চিনি না, পথ ঘাট জানি না, কোথায় যাইব তাহার ঠিকানা নাই। যেদিকে দৃষ্টি যায় সেইদিকে যাইতে লাগিলাম। একটা বাড়ীর সম্মুখে আসিয়া দেখি উপরে বড় বড় অক্ষর লেখা আছে “স্ত্রী-শিক্ষা-সমিতি।” আমি বিশ্রামার্থ উক্ত বাড়ীর সিড়ির উপর বসিলাম , বসিয়া বসিয়া শুইলাম ; শুইয়াই ঘুমাইয় পড়িলাম। সন্ধ্যার সময় একটি দয়ার্দ্র স্বর আমাকে উঠাইল । একটা হলের ভিতর অনেকগুলি ভদ্রলোক বসিয়া আছেন । ধিনি আমাকে উঠাইলেন। তিনি আমার অবস্থা জানিয়া প্রথমে আমার ক্ষুংতৃষ্ণার অপনোদন করিয়া সমিতিগৃহে সঙ্গে লইয়া গেলেন। অদ্য সমিতির একটি অধিবেশন, অনেকে অনেক বক্তৃতা করিলেন । যিনি আমাকে সঙ্গে লইয়া গিয়াছিলেন তিনিও কিছু বলিলেন; তাহার শেষ কথ এইরূপ— - "সম্প্রতি আমি রায়গ৷ হইতে আসিতেছি, তথাকার জমিদার ব্রজবাবুর সহিত আলাপ করিয়া তথায় স্ত্রীশিক্ষার ব্যবস্থা করিয়া আসিয়াছি।” আমার উপকৰ্ত্ত অনাদিবাৰু। তিনি তাহার বাটতে আমাকে কিছুদিন রাখিয়া আমাকে স্কুলে দিলেন। এন্ট্রান্স পাশ করিবার পর অনাদিবাৰু আমাকে বলিলেন “যদি আমার আশ্রয়ে থাকিয়া কিছুমাত্র উপকার বোধ করিয়া থাক, তবে তোমার শিক্ষাসমাপ্তির পর স্ত্রীশিক্ষার জন্য কিছু স্বার্থ ত্যাগ করিতে হইবে।” আমি অবনত মস্তকে স্বীকৃত হইলাম। প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২২ SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSAAAAAAS AAAAA SAAAAA AAAA MAAA AAAAS AAMSM SMS SMSMSSSS [ ১৫শ ভাগ ১ম খণ্ড ( & ) বিবাহের পর হইতেই কানাই পড়া ছাড়িয়া দিয়াছে। কাক বোধ হয় সম্পত্তির সীমাবদ্ধ আয়ে সন্তুষ্ট হইতে না পারিয়া কানাইএর চাকরীর জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। চাকরীও জুটিল। ব্রজবাবুর একটি মুহুরী আবখক ছিল। অনেক সুপারিস করিয়া কানাইয়ের জন্য সেইটি সংগ্ৰহ করিলেন। মাহিয়ানা পঞ্চমুদ্রা। কাৰ্য্য—হিসাব রাখা এবং মফস্বল পরিদর্শনের সময়ে ব্রজবাবুর জন্য রন্ধন। দায়-ধার কার্য্য ভিন্ন তাহার নিজ ইচ্ছাকৃত আরও একটি কাৰ্য্য ছিল—সেটি অবসর সময়ে ব্রজবাবুর তোষামোদ। ব্রজবাবু একদিন বিরক্ত হইয়া তিরষ্কার করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহাতেও সে ঐ কাৰ্য্য হইতে বিরত হয় নাই। উপরি কায্যের জন্য উপরি আয়ও ছিল। বাবুর বাড়ীতে যে-সকল দ্রব্যাদি খুজিয়া পাওযা যাইত না তাহার অংশ কানাই পাইত, ব্রজবাবুর পরিবারস্থ সকলের নিকট হইতে পরবী পাইত এবং মফঃস্বলে গেলে প্রজাদের নিকট হইতে ব্ৰজবাবু কিছু পাওয়াইয়া দিতেন, এবং নিতান্ত বিরক্ত হইলে ব্ৰজবাবু নিজে কখনো কখনো উত্তম-মধ্যম দিতেন। ব্ৰজবাবুর কন্যা রূপে গুণে অসামান্য। শিক্ষারূপ "সোনার কাঠির” স্পর্শে সে রূপ ও গুণ যেন উজ্জল হইতে উজ্জলতর হইতে লাগিল। তাহার নাম লাবণ্যপ্রভ হইলেও সে নাম কেহ জানিত না ; সবাই আটপৌরে নাম "ছবি" বলিয়৷ ডাকিত। ছবির মত দেখিতে সুন্দর বলিয়া যেন নামটি আরও মধুর শুনাইত । ছবির বিবাহের সময় হইয়াছে। অনেক স্থান হইতে অনেক সম্বন্ধ আসিতেছে, কিন্তু ব্ৰজবাবুর কোনটিই মনোমত হইতেছে না। কাক মহাশয়ও এই অবসর ছাড়িলেন না। একদিন ব্ৰজবাবুর বৈঠকখানায় উপস্থিত হইয়া কানাইএর সহিত ব্ৰজবাবুর কন্যার বিবাহের কথা উত্থাপন করিয়া বলিলেন "এরূপ বংশ ও সম্পত্তিশালী বর আপনি খুজিয়া পাইবেন না। একবার বিবাহ হইয়াছে তাহাতে কি আসে যায় ; সে বউকে বাড়ী না আনিলেই হইবে।” বৈঠকখানায় একটা হাসির হরর ছুটিল। মস্তিষ্ক বিকৃত বলিয়া তাহাকে ঘরের বাহির করিয়া দেওয়া হইল । তিনিও বাটীতে গিয়া গুজব রটাইলেন যে | ৩য় সংখ্য। ] ব্ৰজবাবুর বংশের দোষ আছে, ছোট বংশ বলিয় তাহার ক্যাকে কেহ বিবাহ করিতে চাহিতেছে না। সে বংশে তিনি তাহার একমাত্র বংশের দুলাল কানাইএর বিবাহ কি দিতে পারেন ? ছবির বিবাহের দিন স্থির হইয়াছে। বরের বাড়ী কলিকাতায় । তিনি এবার বি.এ পরীক্ষায় সম্মানের সহিত উত্তীর্ণ হইয়াছেন। বাড়ীতে লোকে লোকারণ্য। সবার মুখেই হাসি, গলায় ফুলের মালা, পরিধানে উত্তম পোষাক। এই কোলাহলের মধ্যে কানাই নাই ; কানাইএর রন্ধনব্যাপারে খুব মুখ্যাতি ছিল বলিয়া হলুদ ও মশলার রঙে রঞ্জিত বস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়। সে অদ্য রন্ধনশালার বরাসন অধিকার করিয়া বসিয়া আছে। সন্ধ্যার সময় খুব জোরে একবার বাজনা বাজিয়া डिठेिल । সবাই বলিল এইবার বর আসিয়াছে। সবাই দেখিতে ছুটিল। কানাই তখন প্রেয়সী ইড়ির গলা ধরিয়া লঙ্কারক্ত নবো বধূর ন্যায় পোলাওএর জাফরানি রং পরখ করিতেছিল। কানাই হাড়ির কান ধরিয়া দুম করিয়া হাড়ি মাটিতে বসাইয়া বর দেখিতে ছুটিল। বরমণ্ডপের পাশ্বে স্নাড়াইয়া ভিড়ের পশ্চাং হইতে উচু হইয়া একজনের কাধের উপর দিয়া কানাই দেখিল গণেশচন্দ্র বরবেশে সভামধ্যে উপবিষ্ট কানাই সংজ্ঞাশুন্ত। সে কি দেখিতেছে? সে । তাহার চক্ষুকে বিশ্বাস করিতে পারিল না। নিকটে একজন পড়িতেছিল “শ্ৰীমান গণেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সহিত লাবণ্যপ্রভার শুভ পরিণয় উপলক্ষে প্রীতি-উপহার।" সত্য যেন কঠোর হইতেও কঠোরতর হইয়া তাহাকে গ্রাস করিতে আসিল। এই সময়ে কানাইএর সহিত আমার চোখোচোথি। কানাই ডিঙি মারিয়া দাড়াইয়া ছিল, সে ভিড়ের পিছনে ডুব মরিল। সেই রাত্রি হইতে কানাইকে আর কোথাও পাওয়া গেল ন । বিবাহের পর একদিন বাটতে গেলাম। খুড়িমাতা একরাশি কুম্ভীর-ক্ৰন্দন কাদিলেন। কাকা—আমার অনুপস্থিতিতে কত দুঃখ করিয়াছেন এবং আমার জন্য কত অঙ্গুসন্ধান করিয়াছেন তাহার পরিচয় দিলেন। আমি ডেপুটাগিরি চাকুরী পাইয়াছি শুনিয়া খুড়িমাতা তাড়াতাড়ি আমার জলখাবারের উদ্যোগ করিতে গেলেন। আমি ত্রবিক্রমপুর ও তাহার উপকণ্ঠ

  • "שס\

ফিরিয়া আসিয়াছি শুনিয়া গ্রামের অনেকে আমার সহিত সাক্ষাং করিতে আসিলেন। গ্রামের পাঠশালার গুরুমহাশয় আসিয়া বলি:লন "ন হবে কেন ? এটি আমারই ছাত্র । এটি আমারই ছাত্র !" কাক আদালতের সাহায্য ভিন্ন সম্পত্তি ফিরিয়া দিলেন না। সম্পত্তি উদ্ধার করিয়া তাহাকেই পুনরায় কৰ্ম্মচারী নিযুক্ত করিলাম। কলিকাতায় একটি অবৈতনিক স্ত্রী বিদ্যালয় স্থাপন করিলাম। কানাইএর অনুসন্ধান করিয়া মাচেণ্ট অফিসে তাহার চাকরী করিয়া দিলাম। শিক্ষা গোবরগণেশকে গণেশচন্দ্র করিয়া দিল । শ্রীপূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ঐবিক্রমপুর ও তাহার উপকণ্ঠ, বাজলাদেশের অনেক মনীষীর মতে এখন বাঙ্গলাসাহিত্যে ঐতিহাসিক আলোচনার যুগ চলিতেছে। - এই যে দেশব্যাপী ঐতিহ্যামুসন্ধানের স্পৃহা জাগিয়া উঠিয়াছে তবু আমরা সম্পূর্ণ সজাগ হইতে পারিয়াছি কি ? আমার ত তাহা বোধ হয় না। এথনো যেন মতসঙ্কলনেই, —ইংরেজী ফরাসী জাৰ্ম্মেম পুথি অনুবাদ ও সেগুলি হইতে না বলিয়া বেমালুম গ্রহণেই আমাদের অধিকাংশ শক্তি অপব্যয়িত হইতেছে —অধিকাংশ চেষ্টা বিফলে অবসান লাভ করিতেছে । -- এই মহাবিদ্বজন-সমাগমে, বাঙ্গলার ঐতিহালোচনার স্বৰ্য্যরথের সপ্তাশ্ব শাস্ত্রী বস্থ মৈত্রেয় চন্দ বিদ্যাভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বসাক মহাশয়দিগকে জিজ্ঞাসা করিতেছি— ঐবিক্রমপুর-সমাবাসিত জয়স্কন্ধাবার. হইতে তিন-তিনটা রাজবংশ–বৰ্ম্ম চন্দ্র সেন বংশ-তাম্রশাসনাবলী প্রচার করিয়া গিয়াছেন, এবং সময় সময় সমস্ত বাঙ্গাল বিহারের শাসনদণ্ড পরিচালিত করিয়াছেন, আপনারা বারেকও কি সেই অতীতগৌরবমণ্ডিত পুণ্যভূমিতে যাইয় পৰ্য্যবেক্ষণ করিবার অবসর পাইয়াছেন ? যদি না পাইয়া থাকেন তবে কি করিয়া বলি যে প্রকৃতই অতীত ইতিহাস উদ্ধারের কারণে এপর্যন্ত ইহা ছাপিতে দেই নাই। এখন ছাপিতে দেওয়া অবষ্ঠক বোধ করিলাম –লেখক।