পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

** ७९ পদ্মে কি অপরাধ করেছি মা ? হতভাগা আমরা, তোমার প্রসাদী ফুল-দুটো একটা পাবারও কি যোগ্য নই মা ? গণেশের এই অকস্মাৎ উচ্ছ,াসের কারণ ঠিক না বুঝিয়াও বন্ধুর দল অজস্র হাসিতে লাগিল। গণেশ লক্ষ্য করিল— কিশোরীর মুখমণ্ডলে সলজ্জ বিরক্তির রেখাগুলি ফুটিয়৷ উঠিয় ধীরে ধীরে মিলাইয়৷ যাইতেছে। গণেশের ইয়ার্কিপ্রোজ্জল মুখরুচি একমুহূৰ্ত্তে কালী হইয়া গেল । ( ?) কিছুদিনের মধ্যেই দুই পরিবারে আলাপ বেশ জমিয়। উঠিল। নবীনচক্ৰবৰ্ত্তীর সহিত ভবেশবাবুর মৌখিক স্বাগতসম্ভাষণ শীঘ্রই প্রাত্যহিক পানতামাক ও রসগল্পের কোটায় উঠিয়া পড়িল। গণেশদের দোতলার ছাদ হইতে একটা কাঠের সিড়ি উঠিয়া ভবেশবাবুদের তেতলার ছাদটাকে নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করিয়া ধরিল। ইহার মধ্যেই গণেশ বেশ একটু গম্ভীর হইয়া গিয়াছে। ইয়ার-মহলে পূৰ্ব্বের মত হৈ হৈ করিয়৷ বেড়ান বড় একটা দেখা যায় না। পিতামাতা মনে করিলেন বুঝি বা এত দিনে ছেলেটার একটু স্ববুদ্ধি হইল ; এইবার যদি স্থির হইয়া একটা কিছু কাজকর্মের চেষ্টা দেখে। ভবেশবাবুর ছোটছেলে স্বধীর প্রত্যহ সকালে গণেশের নিকট পড়িতে আসিত। তাহাদের বাড়ীতে আধুনিক এবং পুরাতন বাংলা বই অনেক ছিল। ভবেশবাবু শিক্ষিত৷ কন্যার হস্তে পুস্তকগুলির তত্ত্বাবধানের ভার দিয়া নিশ্চিন্ত ছিলেন। গণেশ কহিল—মুণীর, তোমাদের গুপ্তরত্নোদ্ধার বই থানা একবার নিয়ে এস ত । সুধীর রিক্তহস্তে ফিরিয়া আসিয়া কহিল—দিদি বল্পেন, সে বই আমাদের নেই। গণেশ —সে কি ! আমি যে তোমার বাবার হাতে সে বই দেখেছি! তখনই তাহার মনে পড়িল ভবেশবাবুর কোন বই অপর কাহাকেও পড়িতে দেন না। কয়েকখান বই পরকে পড়িতে দিয়া আর ফিরিয়া পান নাই। কিন্তু তাহাকেও অবিশ্বাস! একটা মস্ত অভিমান তাহার হৃদয়ের অভ্যন্তর হইতে উকি দিতে লাগিল। কিন্তু অভিমান কাহার উপর ? প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড S S AAAA S S S S S S S S S পরদিন স্বীর বইখন লই আদি কলি-কে । একজন এথান৷ পড়তে নিয়ে গিছল, কাল রাত্রে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। গণেশ সমস্তই বুঝিল, কহিল—ও বই আমি আর এক জায়গায় পেয়েছি, ও তুমি বাড়ীতে রেখে এসগে। মধ্যাহে গণেশ দোতলার একটা কোণের ঘরে বসিয়া একথান। ইংরেজী বইএর পাতা উলটাইতেছিল। সহসা দরজার কাছে পদশব্দ শুনিতে পাইল । চাহিয়া দেখিল— অরুণ,—তাহার বামহস্তে সেই বইখান। গণেশ শশব্যস্তভাবে উঠিয়া কহিল—একি ! আপনি এসেছেন ? বলিয়াই বইখানি লইবার জন্য হাত বাড়াইল । - অরুণার মুখে চাঞ্চল্যের আভাস পড়িল। সে তাড়াতাড়ি । বইখানা আঁচলে ঢাকিতে ঢাকিতে কহিল—ন, সে জন্যে নয়। আপনি আমাদের...... আপনাদের বাড়ীতে একটা গরু ঢুকেছে— এই বলিয়া সে দ্রুতপদে বাহির হইয়া গেল। গণেশের বিমূঢ় হৃদয়ে যেন একটা বিদ্যুৎ থেলিয়া গেল। অরুণার কণ্ঠস্বর তাহার কর্ণে বীণাধবনির মত বাজিতে লাগিল। কিছুক্ষণ হতভম্ব গোছ থাকিয়া গণেশ উচ্চস্বরে স্থাকিল—ওরে নিধে ! o ( 8 ) o গণেশদের বাড়ীর মাইল থানেক দূরে তাহার পিসিমার বাড়ী । পিসিমা বিধবা । তাহার একমাত্র পুত্র গজেন বাবু একজন এঞ্জিনিয়ার,—বেশ দু’পয়সা রোজগার করেন। সাতাশ আটাশ বৎসর বয়স হইল, এখনও বিবাহ করেন নাই । অল্প বয়সে বিবাহ করার উপর তিনি হাড়ে চট . ছিলেন ; এবং অতি শীঘ্র পৌভ্রমুখ সন্দর্শনের জন্য পিসিমাও উদ্‌গ্ৰীব ছিলেন না। ভবেশবাবু নবীনবাবুকে মধ্যে রাখিয়া পিসিমার কাছে কথাটা পাড়িয়া ফেলিলেন । পিসিমা অরুণাকে দেখিয়াছিলেন ; নবীনবাবুকে কহিলেন—ভবেশবাবুর সঙ্গে কাজ হবে, এতে আর আপত্তি কি ? বেশ ত হয়ে যাকুন। ভবেশ ।—কি রকম খরচ পত্তর কৰ্ত্তে হবে ? পিসিমা হাসিয়া কহিলেন—উনি যদি দিতে খুতে চান, . ১ম সংখ্য। ] তাহলে আমি এত বেশী চেয়ে বস্ব যে ওঁর তবিল ফতুর হয়ে যাবে। - ভবেশবাবু চিন্তিত ভাবে কহিলেন-কথাটা একটু বুঝিয়ে বল্লে—ওর নাম কি— - পিসিমা কহিলেন–কথাটা এমন কিছুই নয়,—ওঁর কাছে আমি একপয়সাও নিতে ইচ্ছে করি না। ভবেশবাবু অত্যন্ত আনন্দিত হইয়া কহিলেন—সে ত আমার পরম সৌভাগ্য। তাহলে ত শুভকার্য্যে আর কোন বাধাই থাকল না। তবে একটা দিন স্থির করে ফেল৷ যাক,-কি বলেন নবীনবাৰু! পিসিমা –কিন্তু আমার সামান্য একটু প্রার্থনা আছে। ওঁর দু'তিনটি ছেলে,—উনি শুধু একটা কথা দিন যে, বড় ছেলেটির বিয়েতে কনের বাপের কাছে এক পয়সাও } নেবেন না। বাস, এটুকুতে ওঁর কোন আপত্তি থাকতে পারে না ত ? ভবেশবাবু একটা হাতে আর একটা হাতের অঙ্গুলি পীড়ন করিয়া কহিলেন—উনি যা বলছেন, অবিশ্যি ন্যায্য কথাই বলছেন ; তবে বাড়ীতে এর কি বলেন একবার জিগ্যেস করে দেখি । ভবেশবাবু পিসিমার নিকট আর ফিরিলেন না। উক্ত এর সম্ভবত: এমন একটা ঝড় তুলিয়াছিলেন যাহাতে ফোট-ফোঁট ফুলটির নিকট হইতে প্রজাপতি মহাশয় উড়িয়া যাইতে বাধ্য হইলেন। নবীনবাবু দীর্ঘশ্বাস ছাড়িলেন—হায় ভবেশদ বাড়ীর কথাটাই বড় হ’ল ! - ( & ) - গজেনবাবুর বিবাহ হইয়া গিয়াছে—একজন খ্যাতনামা ধনীর কন্যার সঙ্গে। অরুণার বিবাহ হইয়া গিয়াছে— একজন পাঠজীর্ণ বি-এসসির সঙ্গে। আর গণেশ ?— তাহার পিতা এবং ভ্রাতারা দেখিয়া শুনিয়া অনুপমার সঙ্গে তাহার বিবাহ দিয়া দিলেন। বধূর নামের সহিত রূপের সামঞ্জস্য পর্য্যালোচনা করিতে গিয়া গণেশ মদ ধরিয়া ফেলিল । ছেলেবেলা হইতেই গণেশকে বাড়ীর কেহ দেখিতে পারিতেন না। সেইজন্য সে তাহার পিসিমার বড় অরুণ। অাদরের ছিল। তাহার যত কাছে। পিসিমার নিজের টাকাকড়ি যথেষ্ট ছিল, সেই জন্য গণেশকে কখনও অভাব অনুভব করিতে হয় নাই। বিশেষ প্রয়োজন না থাকিলে গণেশ বাড়ীর কাহারও সহিত কথাই কহিত না। সে বুঝিত, যেখানে মনোমালিন্য বেশী সেখানে কথাবাৰ্ত্তা যত কম হয় ততই মঙ্গল। পিসিমা কিন্তু প্রয়োজনের অধিক অর্থ দিতেন না। এবং যখন জানিতে পারিলেন যে গণেশ গোপনে মদ থাইতেছে, তখন জলখাবারের টাকা একেবারে বন্ধ করিয়৷ দিলেন। তাহার জলখাবার তিনি বাড়ীতে প্রস্তুত করিয়া রাথিতেন এবং জামা কাপড় সরকারকে দিয়া কিনাইয়৷ দিতেন। বিবাহের কিছুদিন পরেই গজেনবাৰু শ্বশুরবাড়ীর নিকট একটা বাড়ী কিনিয়া, তাহাতে নানা সৌধীন আসবাবপত্র মনের মত সাজাইয়া স্বখে স্বচ্ছন্দে ঘরকন্না করিতে মনস্থ করিলেন। পুত্রের এবং তাহার শ্বশুর শ্বাশুড়ীর মনোভাব বুঝিয়া পিসিমা বৃথা বাক্যব্যয় না করিয়া গণেশকে লইয়া তীর্থভ্রমণে বাহির হইয়া পড়িলেন। এক ঢিলে দুই পার্থী মারা পিসিমার প্রকৃতিগত বিশেষত্ব ছিল। অতঃপর প্রত্যেক যাত্রায় পিসিমা ভারতবর্ষের একএকটা দিকের সমস্ত তীর্থস্থান নিঃশেষে দর্শন করিয়া বাড়ী ফিরিতেন ; এবং দু'এক মাস বিশ্রাম করিয়া আরএকটা দিক আক্রমণ করিবার উদ্বেশ করিয়া বাহির হইতেন। গণেশ প্রতিবারই তাহার সঙ্গী হইত। (9) অনুপমার বিবাহ হইয়াছে প্রায় তিন বৎসর ; এ পর্য্যন্ত স্বামীর সহিত একদিনের জন্যও তাহার কথাবাৰ্ত্ত হয় নাই। স্বামীর এইরূপ ঔদাসীন্য তাহার বুকের উপর একটা বোঝার মত চাপিয়া ছিল। শ্বাশুড়ী, ননদ এবং জায়ের কেহই তাহার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাহার দোষ—সে কালো ; তাহার দোষ—সে স্বামীর মনোরঞ্জন করিতে পারে না; তাহার দোষ—তাহার স্বামী টাকা রোজগার করে মা। বাড়ীর মধ্যে কেবল শ্বশুর তাহাকে পরম স্নেহের চক্ষে দেখিতেন। কোন দিন হয়ত অনুপমা একবেলা ধরিয়৷ কড়া মাজিতেছে। শ্বশুর চীৎকার করিয়া বলিজেন— - SumitaBot (আলাপ) ০৭:৫০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)------ ،ایران را را আবদার উপদ্রব পিলিমার।