পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৫২ প্রবাণী—আশ্বিন, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড SMMMMSMMMMMSMMMMMM MMMMMS - হইল, তথাপি গৌড়ীয়ুসেনা পশ্চাৎপদ হইতে লাগিল। একজন রাষ্ট্রকূট নিহত হইলে দশজন তাহার স্থান অধিকার -- করে, কিন্তু একজন গৌড়ীয় বা মাগধ হত হইলে তাহার মৃতদেহ বহন করিবার লোকাভাব হয়। সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে গৌড়ীয়ুসেনা মণ্ডলার্গের পশ্চিমদিকের গিরিশীৰ্ষসমূহ হইতে তাড়িত হইল। তখন রাষ্ট্রকূট সেন সাহস পাইয়৷ গিরিসঙ্কট আক্রমণ করিল। ভীষ্মদেব দেখিলেন যে, গিরিসঙ্কট রক্ষা করিতে হইলে বহু বলক্ষয় অবশ্যম্ভাবী । তিনি গৌড়ীয় সেনাকে দুর্গমধ্যে ফিরিয়া আসিতে আদেশ করি লেন এবং হতাবশিষ্ট মাগধসেনা গৌড়ের পথ রক্ষার্থ নিযুক্ত করিলেন । সন্ধ্য হইল, যুদ্ধ থামিল না। সহস্ৰ সহস্র উল্ক। জলিয়৷ উঠিল। রাষ্ট্রকূটগণ গিরিসঙ্কটে প্রবেশাধিকার পাই৷ একই সময়ে দুর্গ ও গৌড়ের পথ আক্রমণ করিল। এইবার স্রোত ফিরিল। অন্ধকারে মুষ্টিমেয় গৌড়ীয়ুসেনা দুর্গের নিয়ে গিরিসঙ্কটে রাষ্ট্রকূটগণকে বার বার পরাজিত করিল। গোবিন্দ বুঝিলেন যে, অন্ধকারে মওলাদুর্গ অধিকার করা তাহার সাধ্যাতীত। তখন ভীষ্মদেবের অৰ্দ্ধাধিক সেনা হত ও আহত হইয়াছে, অকুমান দ্বিসহস্ৰ সেনা দুর্গমধ্যে এবং সাৰ্দ্ধদ্বিসহস্ৰ দুর্গের পশ্চাতে গিরিসঙ্কটে অবস্থান করিতেছিল। দ্বিপ্রহর রাত্রিতে দুর্গাধিকার অসম্ভব দেখিয়া রাষ্ট্ৰকুটরাজ যখন রাত্রির মত যুদ্ধ স্থগিত রাধিবার প্রস্তাব করিয়৷ পাঠাইতেছেন, তখন সহসা মওলাছুর্গের পশ্চাতে গঙ্গাতীরে পৰ্ব্বতশীর্ষে সহস্ৰ সহস্র উল্কা জলিয়া উঠিল। উল্লাসে রাষ্ট্ৰকুটসেনা গর্জন করিয়া উঠিল, জয়ধ্বনিতে পৰ্ব্বতশ্রেণী কম্পিত হইল। চারিসহস্ৰ গৌড়ীয় বীর প্রমাদ গণিল । গোবিন্দ অপরাহ্লে দশসহস্ৰ সেনার সহিত একজন নায়ককে বিন্ধ্যের পৃষ্ঠে অপরপথ সন্ধানের জন্য প্রেরণ করিয়াছিলেন। মণ্ডলার পশ্চাতে গিরিশীর্ষে উদ্ধার আলোক দেখিয় রাষ্ট্রকূটসেন ভাবিল যে, তাহাদিগের সঙ্গীগণ অন্যপথে পৰ্ব্বত অতিক্রম করিয়া মণ্ডল আক্রমণ করিতে আসিতেছে। গৌড়ীয় ও মাগধগণ জানিত যে, তাহাদিগকে সাহায্য করিবার কেহই নাই ; তাহারা ভাবিল যে অন্ধকারে দূরারোহ পৰ্ব্বতশীর্ষ অতিক্রম করিয়া আর-একলে রাষ্ট্রকূট সেন পশ্চাং হইতে দুর্গ আক্রমণ করিতে আসিতেছে। যুদ্ধব্যবসায়ে পঙ্ককেশ ভীষ্মদেব ভাবিলেন যে, সম্মুখে রাষ্ট্রকূট ও পশ্চাতে রাষ্ট্রকুট, স্বতরাং যুদ্ধ শেষ হইয়া আসিয়াছে। বৃদ্ধ মহানায়ক একবার গৌড়ের দিকে চাহি৷ অঞ্জ মোচন করিলেন ; তাহার পরে নায়কগণকে কহিলেন, "বন্ধুগণ, যাহা হইয়াছে তাহ তোমরা বুঝিতে পারিতেছ। বসিয়া থাকিলে হয়ত রাষ্ট্রকূটগণ সপ্তাহকাল আমাদিগের কিছুই করিতে পরিবে না, কিন্তু তাহা হইলে গোবিন্দ দুর্গ অবরোধের জন্য সামান্য সেন রাথিয় অবশিষ্ট সেন লইয়া আমাদের সম্মুখ দিয়া গৌড় আক্রমণ করিতে চলি৷ যাইবেন। এই সময়ে মণ্ডলার পশ্চাতে বহু সেনা জয়ধ্বনি করিয়৷ উঠিল। ভীষ্মদেব ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “আর সময় নাই, পশ্চাতের শক্রসেন। দুর্গের নিকটে আসিয়া পড়ি- , আছে। বন্ধুগণ, আমরা যে কয়জন আছি, সেই কয়জন আজি মণ্ডলা শক্ৰশূন্তা করিয়া মরিব।” মহানায়কের সম্মুখে একজন সেনানায়ক দাড়াইয় ছিলেন, তিনি জয়ধ্বনি করিয়া উঠিলেন, সঙ্গে সঙ্গে দ্বিসহস্র সেন৷ জয়ধ্বনি করিয়া উঠিল। ভীষ্মদেব সেনানায়ককে কহিলেন, “গুরুদত্ত, দুর্গে অগ্নি সংযোগ কর।” গুরুদত্তের আদেশে দুর্গের বাসগৃহসমূহের শত শত স্থানে শত শত উল্কা সংযুক্ত হইল, দেখিতে দেখিতে মণ্ডলাদুর্গ ভীষণ অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হইল। - সশব্দে দুর্গের একমাত্র তোরণ মুক্ত হইল। গিরিসঙ্গটের গৌড়ীয়ুসেনা ও রাষ্ট্রকূটসেনা বিস্থিত হইয়া চাহিয়া , দেখিল যে, অশীতিপর মহানায়ক গুরুভার চক্ৰধ্বজ দক্ষিণহস্তে ধারণ করিয়া বিংশতি বর্ষীয় যুবকের ন্যায় লঙ্কে লম্ফে সোপানশ্রেণী দিয়া অবতরণ করিতেছেন। তাহ দেখিয়৷ তাহারা সিংহনাদ করিয়া উঠিল, সম্মুখের রাষ্ট্রকূটসেন। ভয়ে অত:পর গিরিসঙ্কট রক্ষণ করা অসম্ভব। আমরা দুর্গে দুইপদ হটিয়া গেল। রাত্রি ঘোর অন্ধকার, মওলার দুর্গ শীর্ষের অগ্নিশিখ গগনম্পর্শ করিতেছিল, সেই আলোকে সমস্ত গৌড়ীয়ুসেন বিদ্যুংবেগে শক্রসেনার উপরে গিয়৷ পড়িল। রাষ্ট্রকূটসৈন্য পশ্চাৎপদ হইতে লাগিল! স্বয়ং । গোবিন্দ আসিয়া সম্মুখে দাড়াইলেন, তথাপি গৌড়ীয়সেনার. গতিরোধ হইল না। রাষ্ট্রকূটসেন সিংহবিক্রমে যুদ্ধ করিতে । l ৬ষ্ঠ সংখ্যা ) । ধৰ্ম্মপাল - ාථ ふへヘヘヘヘ、ヘヘヘヘ ヘヘヘシ、ヘン、 ペペペペペ、 লাগিল কিন্তু সেই মুষ্টিমেয় গৌড়ীয় সেনার সম্মুখে তিষ্ঠিতে পারিল না। তিন দিক হইতে সহস্ৰ সহস্র রাষ্ট্রকূট আসিয়৷ সেই চারি সহস্ৰ গৌড়ীয় ও মগধবীরকে আক্রমণ, করিল, তথাপি তাহাদিগের গতিরোধ হইল না। গোবিন্দ স্বয়ং ধীরে ধীরে পশ্চাৎপদ হইতে লাগিলেন । চারি সহশ্রের মধ্যে যখন চারিশতও অবশিষ্ট নাই, তখন গিরিসঙ্কট শত্ৰুশূন্ত হইল। রাত্রির তৃতীয়প্রহর শেষ হইয়াছে, দুর্গশীর্ষে অগ্নি ক্রমশ: নিস্তেজ হইয়া আসিয়াছে, এই সময়ে বৃদ্ধ মহানায়ক ভীষ্মদেব গিরিসঙ্কটের পশ্চিমমুখে সহসা ভূমিতে বসিয়া পড়িলেন। গুরুদত্ত তাহার পশ্চাতে ছিলেন, তিনি বৃদ্ধের মস্তক অঙ্কে গ্রহণ করিয়া উপবেশন করিলেন। বুদ্ধের দেহে ত্ৰয়োদশ স্থান হইতে অস্ত্রাঘাতজনিত রক্তস্রাব হইতেছিল, তথাপি তিনি কছিলেন, "গুরুদত্ত, চক্ৰধ্বজ তুলিয়া ধর, তাহা না দেখিতে পাইলে সেনাগণ হতাশ্বাস হইবে। উঠ, আমার স্থান গ্রহণ কর। সেনাগণকে বলিও যে, একজন সেন জীবিত থাকিতেও যেন যুদ্ধ শেষ না হয়।" বৃদ্ধ এই বলিয়া উঠিয়া বসিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু তৎক্ষণাং চলিয়া পড়লেন। অবশ৯ সেনা ও সেনানীগণ শাস্তম্বনন্দন-তুল্য সত্যত্রত বৃদ্ধ মাগধ মহানায়কের মৃতদেহের চারপাশ্বে আসিয়া দাড়াইল, সেই সময়ে রাষ্ট্রকূটসেনা পুনরায় ভীষণবেগে গিরিসঙ্কটের भू५ আক্রমণ করিল। সৈনিকগণ মৃতসেনানায়কের দেহ পশ্চাতে রাথিয়া গিরিসঙ্কট রক্ষার্থ ছুটিল, গুরুদত্ত গুরুভার চক্ৰধ্বজ স্বন্ধে তুলিয়া দাড়াইলেন। ভীষণ বেগে চারিণত দ্বীয় রাষ্ট্রকুট সেনা আক্রমণ করিল। রাষ্ট্রকূটগণ সেjআক্রমণের বেগ সস্থা করিতে ন পারিয়া পলায়ন করিল। চতুর্থ প্রহরের শেষে পূৰ্ব্বাকাশে যখন উষার আলোক দেখা গিয়াছে, তখন রক্তস্রাবে ক্ষীণ দীর্ঘযুদ্ধে পরিশ্রাস্ত দ্বাবিংশ জন গৌড়ীয় ও মাগধসেনা চক্ৰধ্বজের নিকটে আসিয়া দাড়াইল। দুর্গশীর্ষে অগ্নি নিৰ্ব্বাপিত হইয়াছে, ভশ্বাবশেষ হইতে রাশি রাশি ধূম নির্গত হইতেছে, উষার আলোকে বিস্কোর নীল শিখরগুলি শুভ্ৰ হইয়। উঠিয়াছে, আকাশের মেঘগুলি রক্তবর্ণ হইয়াছে। দশসহস্রের অবশিষ্ট দ্বাবিংশজন চক্ৰধ্বজ বেষ্টন করিয়া দাড়াইল । গুরুদত্তের দেহে তখন বহু অস্ত্রাঘাত হইয়াছে, চক্ৰধ্বজ টলিতেছে। গৌড়ীয়গণ একহস্তে চক্ৰধ্বজ ও অপরহস্তে অসি ধারণ করিয়া শেষ যুদ্ধের জন্য প্রস্থত হইল। এই সময়ে মওলাদুর্গের সোপানাবলীর নিম্নে একজন অশ্বরোহী আসিয়া দাড়াইল, তাহার পশ্চাতে বহুসেনা জয়ধ্বনি - করিয়া উঠিল। তখন চতুর্দশজন গৌড়ীয় অবশিষ্ট আছে, তাহারা চক্ৰধ্বজ রক্ষার জন্য প্রস্থত হইল। ক্ষীণশ্বরে গৌড়েশ্বরের জয়ধ্বনি উচ্চারিত হইল। অশ্বারোহী অগগর হইয়া কহিলেন, "উদ্ধব, এ যে চক্ৰধ্বজ ?” ধৰ্ম্মপাল ও উদ্ধবঘোষ অগ্রসর হইয়া আসিলেন, পশ্চাতে শত শত গৌড়ীয় সেন। গৌড়েশ্বরের নাম গ্রহণ করিয়া জয়ধ্বন করিয়া উঠিল। চতুৰ্দ্দশজন গৌড়ীয়ুসেনা গৌড়েশ্বরকে অভিবাদন করিল। গুরুদত্ত টলিতে টলিতে গৌড়েশ্বরের নিকটে আসিয়া তাহার হস্তে চক্ৰধ্বজ প্রদান করিলেন। গৌড়সাম্রাজ্যের তোরণ রক্ষিত হইল, কিন্তু দশসহস্ত্রের মধ্যে চতুর্দশজন সেনা অবশিষ্ট ছিল। নবম পরিচ্ছেদ । - - তোরণরক্ষা অশ্রুসন্ধনয়নে চক্ৰধ্বজ গ্রহণ করিয়া গৌড়েশ্বর অশ্ব হইতে অবতরণ করিলেন এবং ভীষ্মদেবের মৃতদেহ দেখিতে চাহিলেন। একজন আহত দৈনিক দুৱস্থিত মৃতদেহের স্তপ দেখাইয়। দিল। ধৰ্ম্মপাল চক্ৰধ্বজ লইয়। বুদ্ধ মহানায়কের শবের পাশ্বে উপবেশন করিলেন। পঞ্চসহস্ৰ গৌড়ীয় সেনা পৰ্ব্বত পার হইয়া গিরিসঙ্কটের মুখে আসিয়া দাড়াইল। উদ্ধবঘোষ সম্রাটের পাশ্বে দাড়াইয়া ছিলেন, তিনি কহিলেন, “মহারাজ, শক্রসেন এখনই হয়ত আক্রমণ করিবে, মহানায়কের দেহ সংকার করিতে আদেশ করুন।” সহসা গৌড়েশ্বরের মুখত্র পরিবর্তিত হইল, তিনি বলিয়। উঠিলেন, "উদ্ধব, ভীষ্মদেবের দেহের সংকার আমি করিব না, আমার পরে যিনি গৌড়েশ্বর হইবেন, ইহা তাহার কার্য্য। উদ্ধব, আমার জন্য দশসহস্ৰ গৌড়ীয় ধীর জীবন পণ করিয়া এই গিরিসঙ্কট রক্ষা করিতে আসিয়াছিল, তাহাদিগের মধ্যে চতুৰ্দ্দশজন মাত্র অবশিষ্ট আছে। তুমি কি ভাবিতেছ আমি গৌড়ে ফিরিব ? আজি এই মওলায় গৌড়রাষ্ট্রকূটম্বন্দ্ব শেষ করিয়া যাইবআজি যুদ্ধের শেষ দিন।" . -