পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৪ এমুনি অপর্ণ তারি জলে সদ্যোজাত রাজপুত্রকে নিয়ে কাঠের সিন্দুক ভেসে চলল। তা’র পর সে-সিন্দুক নদী বেয়ে কত নগর-নগরী, কত পল্লী-প্রান্তর, কত বন-পৰ্ব্বত, অতিক্রম করে সমূত্রে গিয়ে পড়ল। ভা’র পর সমুত্রের ঢেউয়ে-ঢেউয়ে এক দ্বীপে গিয়ে লাগল। সেই দ্বীপের এক জেলে পরদিন মাছ ধরতে এসে দেখে চড়ায় এক সিন্দুক পড়ে আছে। সিন্দুক খুলে যখন দেখলে এক রাজপুত্রের মতো শিশু তখন জেলের অস্তরে বিস্ময় ও আনন্দের একটা দারুণ তুফান উঠল। জেলে সেই শিশুকে বুকে ক'রে বাড়ী ফিরল। সেদিন আর মাছধরা হ’ল না । তার পর মহা আনন্দে জেলে-জেলেনী সেই শিশুপুত্র মানুষ কবৃতে লাগল। জেলে-জেলেনী নিসঃস্তান । রাজপুত্র জেলের ঘরে জেলে জেলেনীর স্নেহে ও আদরে দিন-নিন শশিকলার স্বায় বাড়তে লাগল। জেলে-জেলেনী ভাবে – কোন দেবতার আশীৰ্ব্বাদ তাদের ঘরে সন্তানরূপে উদয় হয়েছে। এ সন্তান জালও টানবে না, দাড়ও ধরবে না, কিন্তু অতুল আনন্দ বিতরণ করবে। \ථ দেখতে-দেখতে আঠারটি বছর কেটে গেল । এখন ধীবর-পল্লীতে স্বর বিছিয়ে সময় নেই অসময় নেই বঁাশীর স্বর বেজে ওঠে—কখনও কাছে, কখনও দূরে —কখনও স্বথের কখনও দুঃখের—কখনও বঁাশীর স্বরে আকাশে-বাতাসে হাসির ঢেউ তুলে যায়, আবার কখনও তা’র করুণ রাগিণী, জল, স্থল, কানন, বাস্তাৱ কি-একটা অশ্রভেজা কাহিনীর আভাস দিয়ে ভরে দেয় ! এ বঁাশীর স্বর জলে-ভাসিয়ে-দেওয়া রাজপুত্রের। এই ধীবরপল্লীর সঙ্গে যে রাজপুত্রের কোনোথানেই মিল নেই, তা"ই গাথা বঁাশীর সাতটা বুদ্ধ পথে সাতটা স্বরের সাথে বেজে ওঠে। সন্ধ্যেকালের অাব ছায়াতে যখন সাগরবুকের উচ্ছল কলরোল ধীরে-ধীরে মৃদ্ধ হয়ে আসে—যখন তা’র বুকের ধ্বংসের মন্ত্র ধীরে-ধীরে ঘুমপাড়ানী গানের স্বরের মতে সোহাগ-কোমল মোলায়েম হ’য়ে আসে, তখন নিবিড় বিজন সাগর-সৈকতে রাজপুত্রের বঁাশীর বুক চিরে কেবলই ফিরে-ফিরে প্রতিধ্বনিত হ’তে থাকে—কোথায় ? কোথায় – প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩২ [ २4* छांशं, २घ्र थ७ "বুকের মাঝে যে-একটি মত্ত শিশু নৃত্য করছে—লেনৃত্যের ছন্দ ত ধীবর-পল্লীর কোনোখানেই মিল খুঁজে পায় না—এ-নৃত্যের ছন্দের মিল মিলবে—লে কোথায় ? ¢कोंथांग्न ր..." “এই যে বুকের মাঝে একটা বেদনা দিন-দিন কেবল যেতেই চলেছে—এধীবর-পল্লীর কোনো স্থখছুঃখই ত তাকে আপনার ক’রে ধরতে পাছে না—এ-বেদনার বিরতি হবে—সে কোথায় ? কোথায় ?---” “এই যে প্রাণের তারে একটা স্বর বাজে কখনও কোমল, কখনও উদাম, কখনও বিশ্বে আপনাকে বিলিয়ে দিতে চায়, কখনও বিশ্বকে আপনার মুঠোর মধ্যে ছবিবারভাবে ধরতে চায়, এ ধীবর-পল্লীর সহজ-জীবন যাত্রার মধ্যে সে স্থর ত কোনোখানেই আপনার সহজ স্থান খু’জে পায় না—কবে এ স্বরের বিজয়-মাল্য মিলবে—যে কোথায় ? কোথায় ?... এমনি ক’রে বাণীর স্বরের পর্দ রাজপুত্রের চারিদিক ঘিরে রাজপুত্রকে ধীবর-জীবনের ক্ষুদ্র মুখ, ক্ষুদ্র ধৰ্ম্ম থেকে রক্ষা ক'রে-ক'রে চলেছে । সেদিন পূর্ণিমা রাত। চারিদিকে জ্যোৎস্না-ধারার বান ডেকেছে। সেই জ্যোৎস্নায় সঙ্করণ-শীল উৰ্শ্বিবালাদের লীলায়িত ওহ সধ চিক্-চিকু করছে, বেলাভূমে শুভ্র বালুরাশি শুভ্রতর হয়ে উঠেছে, বাউকুঞ্জে-কুঞ্জে নিবিড়ভা নিবিড়ভর হয়ে উঠেছে। সেদিন বিজন সাগর-সৈকতে বসে রাজপুত্র একমনে বঁাশী বাজাচ্ছিল। সে বঁাশীর গান একটা অতৃপ্ত আত্মার ব্যাকুল মৰ্ম্মবেদনা। এই মর্থবেদনা যেন বঁাশীর স্বরে সূক্ষ্ম থেকে স্বল্পতরু হ’য়ে, সূক্ষ্মতম হ’য়ে আকাশে-বাতাসে আপনার তৃপ্তি খু’জে বেড়াচ্ছিল। বঁাশীর স্বর যেন বলছিল—“হে আকাশ,তোমার ঐ অনন্ত পথের পথিক ক’রে আমাকে নিয়ে যাও—এই নিগড়ৰদ্ধ পৃথিবীর কঠোর পাশ থেকে তোমার ঐ অবিরাম স্বপ্নম্রোতের মাঝে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে—মানবজীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতা থেকে আমাকে মুক্তি দাও, মুক্তি দাও, মুক্তি দাও—হে বাতাস তোমার স্বয়ূরের বারত, তোমার অনির্দেণ্ডের মরীচিকা আমার কাছে সভ্য হোক, সত্য হোক, সত্য হোৰু।" বঁাশী ঘুরে ঘুরে ফিরে