পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S('@ লজ্জার বিষয় ; অত্যাচারী মুসলমান হইলেণ্ড গ্র বাঙালী সমাজের লজ্জার বিষয়—বিশেষতঃ "বাঙালী মুসলমানদের লঙ্গর বিষয়। বস্তুত অত্যাচারী মানুষগুলা কোন ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের লোক তাহা ভাবাই অন্তচিত ও অনাবশ্বক ; তাহারা সমুদয় ধৰ্ম্ম হইতে ভ্ৰষ্ট । ব্যবস্থাপক সভায় বড়লাটের বক্ততা গত ২১শে সেপ্টেম্বর লর্ড লিনলিথগো ভারতবর্ষীয় ব্যবস্থাপক সভায় প্রথম বক্তৃত করেন। তাঙ্গাতে তিনি বলেন, যে, ১৯৩৫ সালে যে ভারতশাসন আইন ব্রিটিশ পালেমেণ্টে প্রণীত হইয়াছে, তাহ ব্রিটেন ও ভারতবর্ষ উভয়ের সম্মিলিত বিজ্ঞতার ফল। এইরূপ কথা তিনি দিল্লীতে র্তাহার প্রথম রেডিও বক্তৃতাতেও বলিয়াছিলেন। তাহা যে সত্য নহে, ভারতীয় সংবাদপত্রসমূহে এবং কংগ্রেসের ও লিবার্যাল বা মডারেট দলের নেতাদের মন্তব্যে প্রদশিত হইয়াছিল—দেখান হইয়াছিল, যে, কংগ্রেসের কোন প্রস্তাব গ্রহণ করা বা লিবার্যাল দলের কোন প্রস্তাব গ্রহণ করা দূরে থাকুক, ঐ আইনের প্রণেতারা ব্রিটিশ গবন্মেন্টেরই বাছাইকরা অতিবড় নরমপন্থী অতিবড় রাজভক্তি-ব্যাপারা অতিবড় সাম্প্রদায়িক চাইদেরও কোন প্রস্তাব গ্রহণ করেন নাই। তাহা সত্ত্বেও, লর্ড লিনলিথগে আবার ঠিক সেই কথাই বলিয়াছেন ! ইহঁারা ভ্রমের অতীত, এবং ভারতবর্ষের কাহারও কোন কথার মূল্য ইহঁাদের কাছে মাষ্ট যদি তাহা তাহণদের কথার প্রতিধ্বনি বা সমর্থক না হয় । ভারতবর্ষ না-কি প্রতিনিধিতন্ত্র শাসনপ্রণালী পাইয়াছে ! আলোচ্য বক্তৃতাটিতে লাট সাহেব বলিয়াছেন পূৰ্ব্বোক্ত আইন দ্বারা ভারতবর্ষকে প্রতিনিধিতন্ত্র প্রণালী অনুযায়ী *footton (“representative self-government”) দেওয়া হইয়াছে। যাহা দেওয়া হইয়াছে, তাহা প্রতিনিধিজন্ত্র শাসনপ্রণালী কিনা, তাহ প্রথমে বিচাৰ্য্য । ব্ৰহ্মদেশকে ভারতবর্ষ হইতে পৃথক করা হইয়াছে। এখন ভারত-সাম্রাজ্যের লোকসংখ্যা মোটামুটি ৩৪ কোটি। তাহার মধ্যে ৮ কোটি লোক দেশী রাজ্যসমূহে বাস করে। এই আট কোটি লোককে নূতন আইন প্রতিনিধি নির্বাচন করিবার অধিকার দেয় নাই। সুতরাং তাহাদিগকে অর্থাৎ ব্রিটেনে ও ফ্রান্সে মোট যত লোক বাস করে প্রায় সমানসংখ্যক লোককে, এই আইন প্রতিনিধি নর্বাচনের অধিকার হইতে বঞ্চিত রাখিয়াছে। ইহার প্রতিনিধিতন্ত্র শাসনপ্রণালী ! ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষ ও দেশী রাজ্যসমূহ লইয়া সমগ্র ভারত। এই সমগ্র ভারতের জন্ত একটি সম্মিলিত ব্যবস্থ** *ss ( Federal Legislatire ) থাকিবে । উভয়ের মোট সদস্যসংখ্যা হইবে ৬৩৫ । ইহার মধ্যে দেশী রাজ্যসমূহ হইতে আসিবে ২২৯ জন সদস্য, বা এক-তৃতীয়াংশের অধিক। অর্থাৎ যে দেশী রাজ্যসমূহের লোকসংখ্য সমগ্র ভারতের মোট লোকসংখ্যার সিকিরও কম, সেই দেশী রাজ্যসমূহ হইতে আসিবে এক-তৃতীয়াংশেরও অধিক সদস্য! তাহার যদি তথাকার অধিবাসীদের দ্বারা নিৰ্ব্বাচিত হইত তাহ হইলেও কথা ছিল। কিন্তু তাহা । হইবে না। এই এক-তৃতীয়াংশের অধিক ২২৯ জন সদস্ত - দেশী রাজ্যগুলির রাজা মহারাজা নবাব প্রভৃতি জনকতক । লোক মনোনীত করিবেন, এবং তাহারা ব্রিটিশ গবন্মেণ্টের রেসিডেন্ট প্রভৃতির প্রভাবাধীন। এই রাজ মহারাজা প্রভৃতিকে এত ক্ষমতা দিবার কারণ, তাহীর স্বৈরশাসক ( autoc ats ) এবং ভারতে ব্রিটিশ গবন্মেণ্টের স্বৈরিতার ( autocracyর ) সমথন দ্বারা ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষের লোকদের স্বরাজ্যলাভ-প্রয়াসে বাধা দিতে পারিবেন। । অতএব, ভারতবর্ষকে কিরূপ প্রতিনিধিতন্ত্র শাসনপ্রণালী দেওয়া হইতেছে তাহ উপরে লিখিত কথাগুলি হইতে বুঝ। যাইবে। তাহার পর, শুধু ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষের কথা বিবেচনা করুন। ফেডার্যাল ব্যবস্থাপক সভার দুই কক্ষে ব্রিটিশ-ভারতের সদস্য থাকিবেন ৪০৬ জন। এই ৪০৬ জনের s ০৬টি আসনের মধ্যে ১৮০টিকে জেনার্যাল অর্থাৎ সাধারণ আসন বলা হইয়াছে। সেইগুলির অধিকারী হইবেন হিন্দুরা ও তাহাদের সঙ্গে সম্মিলিত বৌদ্ধ জৈন প্রভৃতি। ব্রিটিশভারতে শুধু হিন্দুরাই সমগ্র লোকসংখ্যার মোটামুটি শতকরা ৭০ জন ( হিন্দুদের সঙ্গে সংযুক্ত বৌদ্ধ প্রভৃতির কথা ছাড়িয়াই দিলাম ) । এই শতকরা ৭০ জনকে প্রকৃত কোন প্রতিনিধিতন্ত্র প্রণালীতে শতকরা ৭০টি আসন দেওয়া উচিত হইত। কিন্তু নূতন আইন তাহা দেয় নাই ! ইহাদিগকে শতকরা ৪৪-৩টি আসন দিয়াছে। যদি এমন হইত, যে, হিন্দুরা ভারতবর্ষে শিক্ষায় বুদ্ধিবিদ্যায় সাৰ্ব্বজনিক হিতকর কার্ধ্য সম্পাদনে ব্যবসাবাণিজ্যে ধনশালিতায় সৰ্ব্বাধম, তাহা হইলেও বা তাহাদিগকে এত কম আসন দানের পক্ষে কিছু বলিবার থাকিত । কিন্তু প্রকৃত কথা তাহা নহে। ভারতবর্ষে শিক্ষ, বুদ্ধিবিদ্যা, সাৰ্ব্বজনিক কার্যে উৎসাহ, ব্যবসা-বাণিজ্যে দক্ষতা ও ধন যাহাদের আছে, তাহাদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যাই সৰ্ব্বাধিক । স্বতরাং কি সংখ্য-বহুলতায়, কি উল্লিখিত কারণে, হিন্দুদের শতকরা ৭০টি আসন ন্যায্য পাওনা। অথচ তাহাদিগকে দেওয়া হইয়াছে শতকরা ৪৪'৩টি মাত্র । ইহারই নাম প্রতিনিধিতন্ত্র শাসনপ্রণালী !